শাকিব খানের মেগাস্টার হয়ে ওঠার গল্প

শাকিব খান অভিনীত প্রথম সিনেমা 'অনন্ত ভালোবাসা' মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৯ সালের ২৮ মে। সেই হিসেবে তার অভিনয় জীবনের ২৬ বছর পূর্ণ হয়েছে।
এই খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে দেশীয় সিনেমার শীর্ষ নায়কের আসনে রয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে 'ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না', 'খোদার পরে মা', 'আরও ভালোবাসবো তোমায়' ও 'সত্তা' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলা চলচ্চিত্রে ২৫ বছরের অসামান্য অবদানের জন্য ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই শীর্ষ নায়ক।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে স্টার, সুপার স্টার থেকে এখন মেগাস্টার তকমা অর্জন করেছেন শাকিব। গত ২৭ সেপ্টেম্বরে শনিবার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টারে এসেছিলেন ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে বড় এই তারকা। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কাছ থেকে গ্রহণ করলেন এই বিশেষ সম্মাননা।
৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যাওয়ার্ডসে উপস্থিত থেকে সম্মাননা নিতে চেয়েছিলেন শাকিব খান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ছেলের অসুস্থতার কারণে টিকেট কাটার পরও আয়োজনে আসতে পারেননি। তাই দেশে ফিরে ডেইলি স্টার অফিসে এসে সম্পাদক মাহফুজ আনামের কাছ থেকে সরাসরি গ্রহণ করেন বিশেষ সম্মাননা।

সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের চিফ বিজনেস অফিসার তাজদীন হাসান, বিনোদন টিমসহ অনেকেই।
শাকিব খান ডেইলি স্টার অফিসে এসে ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে নিজের পারিবারিক ও সিনেমা বিষয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলেন। তারপর বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে স্টার থেকে মেগাস্টার হয়ে ওঠার গল্প বলেন।
শাকিব খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই যে মানুষ আমাকে সুপার স্টার, মেগাস্টার বলেন, এটা ভালোবাসার ডাক। এই ডাক হলো দেশের অসংখ্য মানুষের, আমার ভক্তদের, প্রাণের সকল শাকিবিয়ানদের। তারা আমাকে ভালোবেসে স্টার, সুপার স্টার, মেগাস্টার বলে। তাদের ভালোবাসার কাছে আমার অনেক কৃতজ্ঞতা। দেশে-বিদেশে যতটুকু পরিচিতি হয়েছে, তাদের কারণেই হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন যখন আমেরিকা, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, ভারতে দামী মাল্টিপ্লেক্সে আমাদের দেশের সিনেমার পোস্টার দেখি, দেশের প্রবাসী মানুষের পাশাপাশি বিদেশের মানুষ আমার, আমাদের সিনেমা দেখে, সিনেমা নিয়ে কথা বলে, আমার গর্ব হয়। একদিন হয়তো আমি থাকবো না, আমার সন্তানেরা এইসব নিয়ে কথা বলবে। তাদের জন্য কিছু একটা তো করে যাচ্ছি।'
শাকিব খান অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ২৫৩টি।
সর্বশেষ গত ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে 'তাণ্ডব' সিনেমাটি। তপু খান পরিচালিত 'লীডার: আমিই বাংলাদেশ' ও হিমেল আশরাফ পরিচালিত 'প্রিয়তমা' নামের সিনেমা দুটি মুক্তির পর সিনেমা প্রতি নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে ১ কোটি নির্ধারণ করেন। তারপর ধীরে-ধীরে তা বাড়তে থাকে।
বর্তমানে ৩ কোটি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন বলে শোনা যায়। ছবিগুলোর প্রযোজনা সংস্থার তথ্যমতে, 'প্রিয়তমা' সিনেমা সারাবিশ্বে ৪১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। 'বরবাদ' সিনেমার টিকেট বিক্রি ১০০ কোটির কাছাকাছি, রায়হান রাফী নির্মিত 'তুফান' সিনেমাও রেকর্ড ব্যবসা করেছে।
শাকিব খান বাংলা সিনেমার সবচেয়ে বেশি লিড রোলে অভিনয় করেছেন। তার ৯৪টি সিনেমা ঈদে মুক্তি পেয়েছে।
চলচ্চিত্রের শীর্ষ এই নায়ক দেশ-বিদেশের ৭৩ জন নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন।
তবে সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাসের বিপরীতে। অপু-শাকিব জুটি মোট ৭২টি সিনেমায় অভিনয় করেছে। এই জুটির উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে 'টাকার কাবিন', 'চাচ্চু', 'দাদীমা', 'পিতার আসন', 'তোমার জন্য মরতে পারি', 'সন্তান আমার অহংকার', 'মনে প্রাণে আছ তুমি', 'ঢাকার কিং', 'মাই নেম ইজ খান', 'হিরো - দ্য সুপারস্টার', 'লাভ ম্যারেজ', 'রাজনীতি' ও 'সম্রাট'।
শাকিব খান ও শবনম বুবলি জুটি সর্বমোট ১১টি সিনেমায় অভিনয় করেছে। এই জুটির উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে 'বসগিরি', 'বীর', 'পাসওয়ার্ড' এবং 'লীডার: আমিই বাংলাদেশ'।

চলচ্চিত্র জীবনের ২৫ বছরে বিভিন্ন সিনেমার চরিত্রের প্রয়োজনে নানান লুকে তাকে দেখা গেছে। তবে দর্শকরা শাকিব খানকে রাফ অ্যান্ড টাফ লুকে বেশি পছন্দ করেছে। তার এই লুকের বিষটি প্রথম নজরে আসে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজিত 'শিকারি' সিনেমার লুক প্রকাশিত হওয়ার পর। অবশ্য দেশীয় 'সম্রাট' সিনেমায় অন্য লুকে তাকে দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে 'নবাব', 'ভাইজান এলো রে' সিনেমাগুলোতে নতুন নতুন লুকে দেখা যায় শাকিবকে। এসব কিছু ছাপিয়ে ২০২৩ সালে 'প্রিয়তমা' সিনেমার বৃদ্ধ লুক ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত একটি লুক। এরপরে 'তুফান' সিনেমার লুক পছন্দ করেছেন দর্শকরা।
শাকিব খানের সিনেমার জীবন বদলে যায় ২০০৬ সালে 'কোটি টাকার কাবিন' সিনেমাটি মুক্তির পর। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন এফ আই মানিক। এই সিনেমার পর সিনেমায় নিজের মজবুত আসন গড়ে তোলেন তিনি। আরেক দর্শকপ্রিয় নায়িকা শাবনূরের বিপরীতে 'গোলাম' সিনেমায় অভিনয় করেও আলোচনায় আসেন ঢাকাই সিনেমার এই শীর্ষ নায়ক। তবে ২০১৬ সালে 'শিকারি' সিনেমা মুক্তির পর নতুনভাবে দর্শকরা তাকে আবিষ্কার করেন। শাকিব খান অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো: 'সুভা', 'আমার প্রাণের স্বামী', 'প্রিয়া আমার প্রিয়া', 'আমার স্বপ্ন তুমি', 'তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা', 'এক বুক জ্বালা', 'সন্তান আমার অহংকার', 'বলবো কথা বাসর ঘরে', 'ডন নাম্বার ওয়ান', 'সম্রাট', 'রাজনীতি', 'শিকারী', 'নবাব', 'হিরো দ্য সুপারস্টার', 'চালবাজ', 'লাভ ম্যারেজ', 'খুনী শিকদার', 'সিটি টেরর', 'আরো ভালোবাসবো তোমায়', 'ভাইজান এলো রে', 'সত্তা', 'বীর', 'পাসওয়ার্ড', 'নবাব এলএলবি', 'নাকাব', 'লীডার: আমিই বাংলাদেশ', 'প্রিয়তমা', 'রাজকুমার', 'তুফান', 'বরবাদ', 'দরদ' ও 'তাণ্ডব'।
Comments