বড়দিনে দেখতে পারেন যে ১০ সিনেমা

বড়দিনে দেখতে পারেন যে ১০ সিনেমা
ছবি: কোলাজ

বছরের শেষটা আসে এক অদ্ভুত নরম আলো নিয়ে। ডিসেম্বরের ঠান্ডা হাওয়া, জানালার পাশে জমে থাকা নীরবতা, চায়ের কাপে ধোঁয়া—এই সময়টায় মানুষ একটু থামে। ঠিক এই থেমে যাওয়ার মুহূর্তেই বড়দিনের সিনেমাগুলো আমাদের পাশে এসে বসে। এগুলো শুধু উৎসবের গল্প নয়, অনেক সময় জীবনের ভারী অনুভূতিগুলোও হালকা করে দেয়।

এই বড়দিনে যদি ঘরে বসে কিছু ভালো সিনেমা দেখতে চান, তাহলে এই দশটি সিনেমা আপনার সময়টাকে আরও উষ্ণ করে তুলতে পারে।

১. ইটস অ্যা ওয়ান্ডারফুল লাইফ (১৯৪৬)

জর্জ বেইলি একজন খুব সাধারণ মানুষ। সে পৃথিবী বদলানোর কোনো নায়ক নয়, কিন্তু নিজের আশপাশের মানুষদের জন্য সে সবসময় নিজেরটা ছেড়ে দেয়। ছোট শহরে ব্যাংকের চাকরি, সংসারের দায়িত্ব, অপূর্ণ স্বপ্ন—সব মিলিয়ে এক সময় তার মনে হয়, নিজের জীবনটাই বোঝা।

বড়দিনের আগের রাতে, চরম হতাশার মুহূর্তে আসে দেবদূত ক্ল্যারেন্স। সে জর্জকে এমন এক পৃথিবী দেখায়, যেখানে জর্জের কোনো অস্তিত্বই নেই। সেই বিকল্প বাস্তবতায় গিয়ে জর্জ বুঝতে পারে, সে কত মানুষের জীবনে অজান্তেই আলো জ্বালিয়েছে।

এই সিনেমা দেখায়—জীবনের মূল্য সবসময় বড় অর্জনে নয়, ছোট ছোট প্রভাবেও লুকিয়ে থাকে।

২. মিরাকল অন থার্টি ফোর্থ স্ট্রিট (১৯৪৭/১৯৯৪)

নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে একজন বৃদ্ধ মানুষ নিজেকে সান্তা ক্লজ দাবি করেন। সমস্যা হলো—তিনি সত্যিই সান্তা, নাকি কেবল একজন বিভ্রমগ্রস্ত মানুষ?

একটি ছোট মেয়ে, তার বাস্তববাদী মা আর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো বিশ্বাস—এই নিয়েই এগোয় গল্প। এই সিনেমা যতটা শিশুদের, তারচেয়ে বেশি বড়দের জন্য। কারণ এখানে প্রশ্নটা শিশুদের নয়, আমাদের জন্য—আমরা কি এখনো অলৌকিকতায় বিশ্বাস করতে পারি?

এই সিনেমার ১৯৪৭ সালের সাদাকালো সংস্করণটি যেমন হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তেমনি ১৯৯৪ সালের রিমেকটিও আধুনিক দর্শকের কাছে সমান প্রাসঙ্গিক।

৩. দ্য হোল্ডওভারস (২০২৩)

সব ছাত্র বড়দিনের ছুটিতে বাড়ি যায়, কিন্তু কয়েকজন থেকে যায় স্কুলেই। কারণ কেউ নিতে আসে না, কারো আবার যাওয়ার জায়গা নেই। তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব পড়ে এক কড়া, একাকী শিক্ষকের ওপর।

শুরুতে সবাই আলাদা আলাদা থাকে। কেউ কথা বলতে চায় না। কিন্তু বড়দিনের এই দীর্ঘ সময়টায় ধীরে ধীরে মানুষগুলো নিজেদের গল্প খুলে বলে। হারানো মানুষ, না বলা কষ্ট, চাপা ক্ষোভ—সবকিছুই উঠে আসে একে একে।

এই সিনেমা খুব শান্ত। এখানে বড়দিনের আগমন কোনো ঝলমলে সাজে নয়, বরং আসে মানুষের পাশে মানুষ বসে থাকার মধ্য দিয়ে।

৪. দ্য নাইটমেয়ার বিফোর ক্রিসমাস (১৯৯৩)

জ্যাক স্কেলিংটন হ্যালোউইন টাউনের রাজা। সে ভয় দেখাতে পারদর্শী, কিন্তু একসময় তার জীবন একঘেয়ে লাগে। হঠাৎ করেই সে আবিষ্কার করে ক্রিসমাস টাউন—আলো, উপহার, আনন্দে ভরা এক জগৎ।

কিন্তু সমস্যা হলো, জ্যাক বড়দিনকে নিজের মতো করে বানাতে চায়। আর তাতেই গণ্ডগোল।

এই সিনেমা আলাদা কারণ এটি দেখায়—সবকিছু নিজের মতো করতে গেলেই ভালো হয় না। কখনো কখনো আনন্দকে তার মতোই থাকতে দিতে হয়।

৫. অ্যা ক্রিসমাস স্টোরি (১৯৮৩)

শিশু রালফির পুরো দুনিয়া ঘুরতে থাকে একটা খেলনার চারপাশে, একটা বিবিগান চায় সে। সে বিশ্বাস করে, এই বড়দিনেই তার স্বপ্ন পূরণ হবে। কিন্তু বড়রা কেউই তাকে গুরুত্ব দেয় না।  বলে, 'তুমি চোখ নষ্ট করে ফেলবে'।

এই সিনেমা বড়দিনের নস্টালজিয়া নিয়ে। পুরোনো আমেরিকান ঘরবাড়ি, শীতের দুপুর, পারিবারিক ঝগড়া, হাসি—সব মিলিয়ে যেন নিজের শৈশবে ফিরে যাওয়া।

এই সিনেমা কোনো বড় গল্প বলে না। বরং খুব সাধারণ জীবনের ভেতরেই বড়দিনের আবহ খুঁজে নেয়।

৬. ক্লজ (২০১৯)

জেসপার একজন অলস, স্বার্থপর ছেলে। শাস্তি হিসেবে তাকে পাঠানো হয় এক দূরবর্তী, রুক্ষ শহরে। সেখানে মানুষের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই, আছে শুধু ঝগড়া।

সেখানে তার দেখা হয় ক্লজ নামের এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধের সঙ্গে। ধীরে ধীরে উপহার দেওয়া, চিঠি লেখা—এই ছোট কাজগুলো বদলে দেয় পুরো শহরটাকে।

ক্লজ দেখায়—ভালোবাসা কোনো জাদু নয়, বরং ভালো কাজের ধারাবাহিক ফল।

৭. হোম অ্যালোন (১৯৯০)

বড়দিনের ছুটিতে পরিবার ছুটি কাটাতে যায়, আর ভুল করে বাসায় একা ফেলে যায় আট বছরের কেভিনকে। কেভিন প্রথমে খুব খুশি। বাড়িতে কেউ নেই, কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু রাত নামলে বোঝা যায়, একা থাকা এত সহজ নয়।

তারপর ঘটনাচক্রে বাড়িতে আসে চোরের দল। চোরদের সঙ্গে লড়াইয়ের হাস্যকর দৃশ্যের আড়ালে আছে ভয়, সাহস আর বেড়ে ওঠার গল্প। কেভিন শেখে নিজেকে সামলাতে, আবার পরিবারকে নতুন করে মূল্য দিতে।

এটা এমন এক বড়দিনের সিনেমা, যেটা সবাই ছোটবেলায় দেখে, বড় হয়ে আবার দেখে, তবুও কখনো পুরনো হয় না।

৮. লাভ অ্যাকচুয়ালি (২০০৩)

এখানে কোনো একক নায়ক নেই। আছে অনেক মানুষ, অনেক গল্প। কেউ সদ্য প্রেমে পড়েছে, কেউ বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি, কেউ চুপচাপ ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছে।

সব গল্প একরকম নয়, সব শেষও সুখের নয়। কিন্তু প্রতিটা গল্প সত্যি মনে হয়। লাভ অ্যাকচুয়ালি বড়দিনকে ব্যাকড্রপ বানিয়ে মানুষের সম্পর্কগুলো দেখায়। সব গল্প সুখের নয়, সব সম্পর্ক নিখুঁতও নয়—কিন্তু সবই মানবিক।

লাভ অ্যাকচুয়ালি বলে—ভালোবাসা বিশৃঙ্খল, অসম্পূর্ণ, কিন্তু তবুও জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী জিনিস। এই সিনেমা মনে করিয়ে দেয়, ভালোবাসা সবখানেই থাকে—শুধু চোখ খোলা রাখতে হয়।

৯. ব্ল্যাক ক্রিসমাস (১৯৭৪)

সব বড়দিন যে নিরাপদ, উষ্ণ আর আলোয় ভরা হবে—এমন কোনো কথা নেই।

একটি কলেজ হাউসে ছুটির সময় ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ঘটনাগুলো নিয়ে সিনেমা ব্ল্যাক ক্রিসমাস। এটি প্রথম দিকের স্ল্যাশার হররগুলোর একটি।

একটি কলেজ ডরমিটরি। ছুটির সময় সবাই চলে গেলেও কয়েকজন থেকে যায়। ফোনে আসতে থাকে অদ্ভুত কল। আর তারপর শুরু হয় ভয়। এই সিনেমা বড়দিনের উল্টো ছবি দেখায়—যেখানে আলো আছে, কিন্তু নিরাপত্তা নেই।
যারা বড়দিনে শুধু মিষ্টি গল্প নয়, একটু অস্বস্তিও দেখতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আলাদা অভিজ্ঞতা।

১০. এলফ (২০০৩)

বাডি বড় হয়ে জানতে পারে—সে আসলে এলফ নয়, মানুষ। সে চলে আসে নিউইয়র্কে, বাস্তব দুনিয়ায়। বাডি বিশ্বাস করে সবাই ভালো। সে সিরাপ দিয়ে স্প্যাগেটি খায়, অপরিচিত মানুষকে জড়িয়ে ধরে, আর বড়দিনকে খুব সিরিয়াসভাবে নেয়। তার এই শিশুসুলভ আচরণ প্রথমে হাসির কারণ হয়। পরে বদলে দেয় আশপাশের মানুষদের মনোভাব।

এলফ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বড় হয়ে যাওয়ার মানে এই নয় যে জীবনের আনন্দকে ভুলে যেতে হবে। এটা এমন এক গল্প, যা বড়দের আবার একটু শিশু হতে শেখায়।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

7h ago