‘অচিন মাঝি’ ও ‘কী কী জিনিস এনেছো দুলাল’ গানের গল্প

শান্তনু মৈত্র, জাহিদ আকবর ও ঊর্মি চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে নির্মিত 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' সিনেমাটি ১৩ অক্টোবর মুক্তি পেতে যাচ্ছে।

শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত সিনেমাটির সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ওপার বাংলার সংগীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র।

'অচিন মাঝি' এবং 'কী কী জিনিস এনেছো দুলাল' শিরোনামে দুটি গান রয়েছে এই সিনেমায়।

এর মধ্যে মৌলিক গান 'অচিন মাঝি'র গীতিকার জাহিদ আকবর এবং এতে কণ্ঠ দিয়েছেন রথীজিৎ ভট্টাচার্য। আর ঊর্মি চৌধুরীর কণ্ঠে শোনা যাবে 'কী কী জিনিস এনেছো দুলাল' শিরোনামের লোকগীতিটি। এই গানে প্রধান শিল্পী ঊর্মি চৌধুরীর সঙ্গে কোরাস হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন অদিতি বসু ও অহ্নিতি নমস্কার।

'অচিন মাঝি' গানের গীতিকার জাহিদ আকবরের ভাষ্য, 'এমন একটি কাজের সঙ্গে থাকা যে কারো জন্য আনন্দের। আমার গান লেখা জীবনের অনন্য প্রাপ্তি হয়ে থাকবে "অচিন মাঝি"।'

তিনি বলেন, 'সুরকার শান্তনু মৈত্রর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই আমার লেখা গানটিতে চমৎকার সুর দেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে বেশ উৎসাহ দিয়েছেন গানটি লেখার জন্য।'

'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' সিনেমার ট্রেলার মুক্তি পায় গত ৫ অক্টোবর। 'অচিন মাঝি… কোনসে পাড়ের বন্ধু' গানটি দিয়ে শুরু হয়েছে ট্রেলারটি।

জাহিদ বলেন, 'সত্যি বলতে ট্রেলার দেখতে বসে চমকে গেছি। ভাবতেই পারিনি এত বড় আয়োজনের সিনেমার ট্রেলার শুরু হবে আমার লেখা গান দিয়ে।'

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে ওপার বাংলার ময়নাগুড়িতে বেড়ে ওঠা লোকসংগীত শিল্পী ঊর্মি চৌধুরী বলেন, 'ভাবতেই পারিনি যে আমার গানটা শেষ পর্যন্ত থাকবে! এত বড় মানুষের জীবনী নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি নির্মাণ, এত সব বড় বড় মানুষের সঙ্গে কাজ—সিনেমার ট্রেলার রিলিজ না হওয়া পর্যন্ত আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।'

ঊর্মি বলেন, 'একে তো বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক। তার ওপরে আমার পূর্বপুরুষরা সবাই ছিলেন বাংলাদেশের মানুষ। সব মিলিয়ে এই গান গেয়ে শিকড়ের সঙ্গে একটা প্রবল টান অনুভব করেছি।'

'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া, নুসরাত ইমরোজ তিশা, চঞ্চল চৌধুরী, দিলারা জামান, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ, মিশা সওদাগর, জায়েদ খানসহ শতাধিক শিল্পী।

'কী কী জিনিস এনেছো দুলাল' গানের দৃশ্যে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গানটি বাঁজছে। গানটিতে ফুটে উঠেছে আবহমান কাল ধরে প্রচলিত বাংলাদেশের বিয়ের 'গীত', সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর তারুণ্যের 'লাজুক' একটি প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজন তাকে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছেন।

ছবি: সংগৃহীত

২০২১ সালে দুই বাংলার প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী প্রয়াত কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যের বাড়িতে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল। কালিকা প্রসাদের ভাগনে সৌম্য চক্রবর্তীর হাত ধরে এই গানের সঙ্গে যুক্ত হন ঊর্মি চৌধুরী। ২০১৬ সালে রিয়ালিটি শো 'সারেগামাপা'-এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে কালিকা প্রসাদের সঙ্গে পরিচয় হয় ঊর্মি চৌধুরীর।

ঊর্মি গানটির বিষয়ে বলেন, 'গানটি মুক্তি পাওয়ার পর দুই বাংলার মানুষের কাছ থেকেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। বাংলাদেশ, দুবাই, আমেরিকা ও কানাডা থেকেও অনেকে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে।'

তার ভাষ্য, 'প্রথমে যখন গানটি আমাকে গাইতে বলা হয়েছিল, তখন বেশ দ্বিধায় ছিলাম। কারণ, এত বড় মানুষের বিয়ের গান, তার ওপরে গাইতে হবে বাংলাদেশের ডাইলেক্টে।'

'আধুনিক গান গাওয়া সহজ, কিন্তু ট্রেডিশনাল গান গাওয়া একটু কঠিন। কারণ, এটাতে একটা সময়ের প্রতিচ্ছবি থাকে, একটা বিশেষ মেসেজ থাকে। সেই কারণে যেনতেনভাবে লোকসংগীত গাওয়া যায় না। পরে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি গানটি তুলতে। কারণ, বাংলাদেশের প্রতি আমার আবেগটা অনেক বেশি', বলেন ঊর্মী।

এর আগে সিনেমাতে গান গাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে ঊর্মি বলেন, 'টিভি সিরিয়ালে নিয়মিতই গান গাওয়া হয়, কিন্তু এত বড় পরিসরে এটাই আমার প্রথম গান। আমি এমন একটি লোকসংগীত গাইতে চেয়েছি সব সময়, যার মধ্যে মানুষ আমাকে মনে রাখবে। এখন পর্যন্ত সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।'

ঊর্মি জানান, তার দাদার বাড়ি ছিল ঢাকার বিক্রমপুরে এবং তার ঠাকুর দাদার বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুমিল্লায়। দেশভাগের সময় তারা ভারতে চলে যান। সেখানে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে তিনি বেড়ে উঠেন। কাজের প্রয়োজনে এখন থাকেন কলকাতায়। বাংলাদেশে আসতে পারলে তার অনেক ভালো লাগবে।

সম্প্রতি 'কী কী জিনিস এনেছো দুলাল' গানটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে শান্তনু মৈত্র লিখেছেন, 'মুজিবের সাউন্ডট্র্যাকটি আমার কাছে খুব স্পেশাল, কারণ এটি বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের অংশ। এটি এমন একটি বিষয়, যার ব্যাপারে শ্যাম বেনেগাল খুব আগ্রহী ছিলেন। কী কী জিনিস এনেছো দুলাল গানটি গেয়েছেন ঊর্মি চৌধুরী এবং প্রযোজনা করেছেন দোহারের (কালিকা প্রসাদের ব্যান্ড দল) সুদীপ্ত চক্রবর্তী।'

এর আগে 'অচিন মাঝি' গানটি শেয়ার করে তিনি লিখেছিলেন, '"মুজিব: দ্য মেকিং অব আ নেশন" সিনেমার মন্ত্রমুগ্ধকর গান "অচিন মাঝি"।'

আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, 'এটি এমন একটি গান, যা নিয়ে আমি গর্বিত। বাবাই আমার বাবা সবসময় বাংলাদেশে যেতে চাইতেন। দেশভাগের সময় তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যান। এই গানটি সেই সুন্দর ভূমির জন্য যা আমার বাবাই কল্পনা করেছিলেন। গানটি সুন্দরভাবে গেয়েছেন এবং প্রযোজনা করেছেন রথীজিৎ ভট্টাচার্য এবং লিখেছেন জাহিদ আকবর।'

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

2h ago