অতিরিক্ত লোডশেডিং, নোয়াখালীতে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে স্থানীয়দের হামলা

নোয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির চাটখিল জোনাল অফিস। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা।

দিনে ১২-১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না অনেক এলাকায়। কোথাও আবার সারাদিন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকে।

অতিরিক্ত লোডশেডিংকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে গ্রাহকদের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। 

এর মধ্যেই তীব্র লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে গত মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালীর সেনবাগ পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালান স্থানীয়রা।

উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের আইচেরটেক এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের উপকেন্দ্রে এ হামলায় হতাহত না হলেও কার্যালয়ের জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় মোট চাহিদার অর্ধেকের কম সরবরাহ থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।  

নোয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে জেলা শহর ও জেলার নয় উপজেলায় ৯ লাখ ৪১ হাজার গ্রাহক আছেন। 

এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহক ১ লাখ ৬৮ হাজার এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক ৭ লাখ ৭৩ হাজার।

সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। তীব্র গরমে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই ক্ষুব্ধ হচ্ছে।'

চাটখিল পৌরসভার সুন্দরপুর মহল্লার বাসিন্দা স্বপ্না আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'সারাদিনে ৩-৪ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। একবার বিদ্যুৎ এলে ৩০ মিনিট পর আবার চলে যায়। আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে না, ফ্রিজে মাছ-মাংস, শাক-সবজি নষ্ট হচ্ছে।'

সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক মাস ধরে অতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। রোববার থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।' 

অসহনীয় লোডশেডিংয়ের শিকার গ্রাহকরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকেই বিদ্যুৎ বিভাগকে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার সেনবাগে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হামলা হয়।

যোগাযোগ করা হলে পল্লীবিদ্যুতের সেনবাগ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিনারুল ইসলাম সেনবাগ পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা বেড়েছে। সেনবাগ উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় প্রতিদিন ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ পাওয়া যায় ১২-১৪ মেগাওয়াট। যার কারণে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।'

জানতে চাইলে পল্লীবিদ্যুৎ নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে  বলেন, 'আট উপজেলায় আমাদের গ্রাহক ৭ লাখ ৭৩ হাজার। বিদ্যুতের চাহিদা ১৮০-১৮২ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ পাচ্ছি মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ। তাই বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।'
 
পিডিবি নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল বাহার ডেইলি স্টারকে জানান, নোয়াখালী পৌরসভা ও আশপাশের এলাকার ৮০ হাজার গ্রাহকের প্রতিদিনের চাহিদা ৩৪-৩৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৫০ শতাংশও সরবরাহ হচ্ছে না। এ কারণে তীব্র গরমের মধ্যেও লোডশেডিং দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, 'বেগমগঞ্জের মিরওয়ারিশপুরে বেসরকারি বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংস্থা হোসাব পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। সেখানে দৈনিক  ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করার কথা। কিন্তু ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করে। আবার প্রায়ই উৎপাদন বন্ধ রাখে। এতে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায় না।'

জানতে চাইলে পিডিবি চৌমুহনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশল মো. শাহাদাত ইসলাম বলেন, 'চৌমুহনীতে ৪৩ হাজার গ্রাহকের ২৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যায় ১২ মেগাওয়াট।'

Comments

The Daily Star  | English

Ducsu AGS candidates: Rights, safety, reforms their top agendas

A total of 25 candidates are contesting for the post of assistant general secretary (AGS) in this year's Dhaka University Central Students' Union (Ducsu) election, scheduled for September 9.

14h ago