ডেঙ্গু: নতুন করে পুরোনো ভ্যারিয়েন্ট, বাড়তে পারে রোগী ও মৃত্যুর ঝুঁকি

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এ বছর মারা গেছেন ৪৬ জন। তাদের মধ্যে চলতি মাসেই মারা গেছেন ২৫ জন। গতবছর পুরো সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২১।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৩১ জন। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৩৮ জন। যা চলতি বছরে মধ্যে সর্বোচ্চ। এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪৩৮ জন।

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু ভয়াবহ হবে এটি আমরা জুনের শুরুতেই সিটি করপোরেশনকে বলেছিলাম। ঢাকায় এডিস মশার বর্তমান ঘনত্ব অনেক বেশি এবং তা ডেঙ্গু ছড়ানোর উপযোগী মাত্রায় আছে। হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে ব্যর্থ হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ হবে। বর্তমানে আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি।

এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, 'বছরের শুরু থেকেই হাসপাতালগুলোতে মনিটরিং করে রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে পারলে ডেঙ্গুর প্রকোপ এতটা বাড়ত না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দ্রুততার সঙ্গে রোগীর বাড়ির চারপাশে ৫০০ গজের মধ্যে ফগিং ও লার্ভিসাইডিং করে সব ধরনের মশা ও লার্ভা মেরে ফেলতে হবে। অ্যাডাল্ট মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করছে। এতে জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।'

জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাধারণ নাগরিকদের অংশগ্রহণ করতে হবে। বাড়ির আঙিনা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনে অবশ্যই মশারির ভেতর ঘুমাতে হবে। শিশুদের ফুলহাতা শার্ট, ফুলপ্যান্ট ও মোজা পরাতে হবে।'

হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, 'ডেঙ্গুর পিক সময় হলো আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর। অক্টোবর মাসে কমতে থাকে। এ বছর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে হঠাৎ রোগী বেড়ে গেছে। তবে এটা স্বস্তির খবর যে, গত বছরের তুলনায় রোগী এ বছর অনেক কম।'

জোবায়দুর রহমান বলেন, 'এ বছর রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) জরিপে দেখা গেছে এতদিন ডেঙ্গু ডেন-৩ ভ্যারিয়েন্টে দিয়ে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন। তবে এ বছর ডেন-৪ ভ্যারিয়েন্টে কিছু রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০০৩ সালে ডেন-৪ দেখা দিয়েছিল। এর পরে ডেন-৪ ছিল না। এ বছর ১১ শতাংশ রোগী ডেন-৪ এ আক্রান্ত হচ্ছেন। দ্বিতীয়বার কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসলে তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বেড়ে যায়। মৃত্যু বাড়ার এটি একটি কারণে হতে পারে। আবার অনেক মানুষ আছেন যারা সাধারণ জ্বর মনে করে বাড়িতে বসে থাকেন। ক্রিটিক্যাল অবস্থা না হলে হাসপাতালে ভর্তি হয় না। এতেও মৃত্যুহার একটু বাড়ছে।'

উত্তর সিটি করপোরেশেনে ডেঙ্গু রোগী বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'প্রায় ৮০ শতাংশ ডেঙ্গু হাসপাতাল যেহেতু আমাদের অধীনে তাই রোগীও উত্তর সিটি করপোরেশেনে একটু বেশি। তাছাড়া ঢাকার বাইরের অনেক রোগীও আমাদের অধীনে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।'

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া সব পরামর্শ উত্তর সিটি করপোরেশেন মেনে চলছে বলে তিনি দাবি করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। এখানে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা থাকে ৩৫ থেকে ৪৪ এর মধ্যে। চলতি বছরে আমাদের এখানে একদিনে সর্বোচ্চ ৪৪ জন রোগী পাওয়া গেছে। গত বছর দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী পাওয়া গেছে। অথচ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গতকালের রোগীর সংখ্যা মাত্র ৩৫ জন।'

এ বছর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সফল দাবি করে ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, 'বিশেষজ্ঞরা আমাদের যে পরামর্শ দিয়েছে আমরা সেই অনুযায়ী এবং আমাদের নিজস্ব কীটতত্ত্ববিদের পরামর্শ অনুযায়ী উদ্যোগ নেওয়ায় এবং বাস্তবায়ন করায় রোগী কম। মুগদা হাসপাতালের রোগীরা কিন্তু সবাই ঢাকার না। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি এর অধিকাংশ রোগী ঢাকার বাইরের।'

'সেপ্টেম্বর মাসে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় আমরা কিছুটা বেকায়দায় পড়েছি। বৃষ্টি বন্ধ হলে আশাকরি আমাদের এখানে দৈনিক রোগীর সংখ্যা ১০ জনের নিচে নেমে আসবে,' তিনি যোগ করেন।

কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসলে সেটি অনেক ভয়াবহ হবে। মানুষ বেশি আক্রান্ত হবে এবং মৃত্যু হারও বাড়তে পারে। সাধারণত কোনো একটি ভ্যারিয়েন্টে কেউ আক্রান্ত হলে আবার সেই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ১৮ বছর আগে ডেন-৪ ভ্যারিয়েন্টে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা হয়তবা অনেকে মারা গেছেন, কেউ অন্য দেশে গেছেন। এতদিনে অনেক শিশুর জন্ম হয়েছে। নতুন করে যারা ডেন-৪ এ আক্রান্ত হবেন তাদের সমস্যা একটু বেশি হতে পারে এবং মৃত্যু ঝুঁকি থাকতে পারে।'

বছরের শুরুতেই সেরোটাইপ সার্ভেল্যান্স করে এবং কার্যকর উদ্যোগ নিলে ডেঙ্গু এবছর এতটা প্রকোপ আকার ধারণ করত না বলে মনে করেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

Comments

The Daily Star  | English

Ducsu 2025, a litmus test for the interim government

Ducsu 2025 is much more than a contest for student union posts. It is like a referendum on the future of student politics in Bangladesh

13m ago