এবার দেশি আদার কেজি ৫০০ টাকা, সবজি-পেঁয়াজেও স্বস্তি নেই

এক সপ্তাহ আগেও গত রোববার কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকায়। ছবি: সুমন আলী/স্টার

নিত্যপণ্যের বাজারে টানা কয়েক মাস ধরে চলা অস্থিরতার রেশ এখনো কাটেনি।

এই আঁচ কখনও লাগছে তেলে, কখনও আটা-ময়দায়, কখনও চাল-ডাল-চিনির মত প্রতিদিনের ভোগ্যপণ্যে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যকার বচসাও যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন বাজারে কাঁচা মরিচ থেকে শুরু করে পেঁয়াজ, আদার দামও ঊর্ধ্বমুখী। সবজির বাজারেও কোনো সুখবর নেই।

সাধারণ ক্রেতাদের ভাষ্য, যেভাবে প্রতিযোগিতা করে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ছে তাতে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের পকেটের ওপর চাপ পড়ছে সবচেয়ে বেশি। অনেকে বাধ্য হয়ে দৈনিক খাবারের তালিকা থেকে পছন্দের পণ্য বাদ দিয়েছেন কিংবা পরিমাণ কমিয়েছেন। কারণ বাজারে পণ্যের দাম এতই বেশি যে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনেক পণ্য তারা কিনতে পারছেন না।

আমদানির অনুমোদন দেওয়ার পরেও পেঁয়াজের ঝাঁঝ কমছে না। ছবি: সুমন আলী/স্টার

আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়। বার্মিজ আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকার মধ্যে। থাই আদা ও ভারত থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা ও ২৫০ টাকায়।

এক সপ্তাহ আগেও গত রোববার কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে দেশে আদার উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। আমদানি করা হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৫ মেট্রিক টন। এ বছর দেশে আদার উৎপাদন কমে ১ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।

গত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের আদা ব্যবসায়ী মো. জসিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে পরিমাণে আমদানি হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। তাই দেশি আদার ওপর চাপ বেড়েছে। এ কারণে দেশি আদার দাম আবারো বেড়েছে।'

দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যকার বচসাও যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: সুমন আলী/স্টার

এদিকে আজ কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় এবং ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিতে ১০০ টাকায় পৌঁছানোর পর গত ৫ জুন থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার।

সরকারি হিসেবে, আমদানির জন্য অনুমোদন দেওয়া ৯ লাখ ১৮ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজের মধ্যে আজ পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

আজ কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা ও প্রতি পিস লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪০ টাকায়। কাঁচা কলা প্রতি হালি ২৫-৩০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ মানভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সকালে বাজার এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমার ৪০ বছরের জীবনে কখনো শুনিনি যে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা। জানি না সামনে আরও কত কী শুনতে হবে। কোনো জিনিসের দামই নাগালের মধ্যে নেই। দাম শুধু বাড়ে আর বাড়ে। আগের চেয়ে বাজার করার পরিমাণ কমিয়েছি। কাউকে কিছু বলতেও পারি না। এভাবেই চলছে।'

বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রইসুল ইসলামের ভাষ্য, 'জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় ব্যবসার অবস্থাও ভালো না। আমাকেও তো অনেক কিছু কিনে খেতে হয়। আগে ছেলে-মেয়েদের নিয়মিত পোশাক দিতে পারতাম, ঘুরতে নিয়ে যেতে পারতাম, ভালোমন্দ খাওয়াতে পারতাম। এখন পারি না। কোনোমতে তিনবেলার খাওয়া জোগাড় করতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।'

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কষ্টে আছি, দুঃখে আছি। এ ব্যাপারে কেবল সরকারই কিছু করতে পারে। মূল সমস্যা হলো আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। উপযুক্ত নীতি গ্রহণ না করলে কান্নাকাটি করে কোনো লাভ নেই।'

গোলাম রহমান আরও বলেন, 'সরকারের সব নীতি ব্যবসাবান্ধব, ভোক্তাবান্ধব নয়। এ জন্য ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং সরকারের কিছু করার থাকে না।'

Comments

The Daily Star  | English

SC Secretariat Ordinance: Judges may hold executive posts

Lower court judges will be able to hold executive positions in the law ministry as well as state entities even after the establishment of a Supreme Court secretariat aimed at keeping the judiciary free from the executive’s influence, says a draft ordinance.

3h ago