সরকারি হাসপাতালে ৫ বছরে ৪৫৯ কোটি টাকার অনিয়ম

ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের কারণে সরকারের ৪৫৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৪টি আলাদা কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রস্তুত করা বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) বাজেট ব্যয়ে অনিয়মের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। সিএজির প্রতিবেদনটি রোববার সংসদে উপস্থাপন করা হয়।

এই সময়ে মোট বরাদ্দ ৩ হাজার ৯৫২ কোটি টাকার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, অর্থাৎ ৪৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে।

সিএমএসডির বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে সরকারি তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সিএজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'সিএমএসডিতে নিরীক্ষাকালীন প্রতি অর্থবছরেই এই ধরনের আর্থিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে সিএজি।'

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যথাযথ প্রটোকল অনুসরণ না করে সিএমএসডি ৪টি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করায় সরকারের ১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

প্রতিবেদনের ভাষ্য, প্রকৃতপক্ষে, এই সরঞ্জামগুলো অব্যবহৃত রয়ে গেছে কিংবা অকেজো হয়ে পড়েছে। যার ফলে উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

নিরীক্ষা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সিএমএসডি ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়েছে। যে মেডিকেল সরঞ্জামগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলো শিগগিরই স্থাপন করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বলছে, সিএমএসডি তাদের সম্মতি ছাড়াই এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।

'সিএমএসডিই এই সরঞ্জামগুলো হাসপাতালে পাঠিয়েছে' উল্লেখ করে প্রতিবেদনে এই ধরনের অপচয়ের জন্য দায়ীদের শনাক্ত করতে আরও তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওই বছর ৮টি মেডিকেল কলেজ, একটি সিভিল সার্জন কার্যালয়, একটি জেলা হাসপাতাল এবং ২টি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একই ধরনের পণ্যের জন্য জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানির দেওয়া দামের চেয়ে ১৮ গুণ বেশি দামে চিকিৎসা ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছিল।

এর ফলে সরকারের লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

সিএমএসডির কাছে সিএজি অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানিয়েছে, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি তাদের পণ্যের স্পেসিফিকেশন পূরণ করতে না পারায় তারা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করেছে।

তবে, এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেননি নিরীক্ষকরা।

২০১১ সালের ২ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করা হয়।

মেশিনটির ওয়ারেন্টি পিরিয়ড ছিল ৫ বছর। তবে ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

ওয়ারেন্টি প্রয়োগের পরিবর্তে ঢামেক কর্তৃপক্ষ মেশিনটি মেরামতের জন্য অন্য একটি কোম্পানিকে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, যার ব্যয় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অন্য কোনো কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে 'গুরুতর আর্থিক অনিয়ম' হিসেবে আখ্যায়িত করে বলা হয়, এর মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে এই অসদাচরণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ ৪৪টি জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের কারণে সরকারের প্রায় ২৬৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

অনিয়মের মধ্যে রয়েছে সরকারি তহবিলের অপচয়, অব্যবহৃত ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহে ব্যাঘাত এবং প্রচলিত বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে চিকিৎসা ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম ক্রয়।

ওই বছর সিএমএসডি ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ৩টি জেনারেল হাসপাতালে অতিরিক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করায় সরকারের প্রায় ২৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের প্রয়োজন, সেখান থেকে চাহিদাপত্র, প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ কিংবা সেখানে অবকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও সরঞ্জামগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল।

আবার অনেক সরঞ্জাম হাসপাতালে ইতোমধ্যে ছিল।

নিরীক্ষকরা এ বিষয়ে ঢামেকসহ হাসপাতালগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

ঢামেক কর্তৃপক্ষ জানায়, কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা সরবরাহ করা ১৭টি ভেন্টিলেটরের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সেগুলোর ব্যবহার বন্ধ করে দেন।

এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও সিএমএসডির বিরুদ্ধে এই হাসপাতালগুলোতে সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Secretariat employees protest against 'stricter' govt service law

Secretariat employees protest against 'stricter' govt service law

From 9:30am, officers and staff started gathering in front of building no. 6 at the Secretariat's Badamtola.

59m ago