যেভাবে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

ইসরায়েলের বিমান হামলার জবাবে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। গত সাত দিনে ইরানের বহু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।

যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইরানে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৪০ জন, যাদের মধ্যে ৭০ জন নারী ও শিশু। অন্যদিকে ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাইরেনে ইসরায়েলজুড়ে বহু মানুষকে নিয়মিত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে।

ইরানের হামলায় ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের বেশ কিছু আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানী তেলআবিবে অবস্থিত দেশটির সামরিক সদরদপ্তর 'কিরিয়া'তেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

মঙ্গলবার ইরান দাবি করে, তারা ইসরায়েলের একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং মোসাদের একটি পরিকল্পনা ঘাঁটি ধ্বংস করেছে।

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে 'আয়রন ডোম'। এটি শত্রুপক্ষের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে তার গতিপথ নির্ধারণ করে এবং মাঝপথেই ধ্বংস করে দেয়। ২০১১ সাল থেকে ব্যবহার হওয়া এই ব্যবস্থা সাধারণত স্বল্পপাল্লার রকেট ঠেকাতে কাজে লাগে।

তবে আয়রন ডোম ছাড়াও ইসরায়েলের আছে একাধিক স্তরের প্রতিরক্ষা। বারাক-৮ মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকায়। ডেভিড'স স্লিং মাঝারি থেকে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করে। থাড, অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩ দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ইসরায়েল যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারও ব্যবহার করে।

আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল উপাদান তিনটি। প্রথমত, রাডার শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে। কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার সিদ্ধান্ত নেয় ধেয়ে আসা কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হবে। এরপর লঞ্চার প্রতিরোধ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। শত্রুপক্ষের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সাধারণত প্রতিরোধকারী দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শনিবারের হামলায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৮০-৯০ শতাংশ কার্যকর ছিল। অর্থাৎ বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে ইরানের কয়েকটি সম্ভাব্য কৌশল রয়েছে। ইরান একযোগে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যস্ত করে ফেলে, যাতে প্রকৃত হামলাগুলো প্রতিরোধ করা না যায়।

ইরান দাবি করে, তাদের ফাত্তাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্র হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল যুক্ত—যা শব্দের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ দ্রুতগতিতে চলতে পারে এবং অনির্ধারিত গতিপথ অনুসরণ করে, ফলে একে থামানো কঠিন।

ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র অপেক্ষাকৃত ধীরগতির হলেও এগুলো মাটি থেকে খুব অল্প উচ্চতা দিয়ে উড়ে এবং দিক পরিবর্তন করতে পারে, ফলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহজে ভেদ করতে পারে। ইরানের হোভেইজেহ এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করতে ড্রোন বা ভুয়া (ডিকয়) ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়, যাতে রাডারে সেগুলো সত্যিকারের হুমকি মনে হয় এবং মূল হামলা বাধাহীনভাবে পৌঁছে যেতে পারে।

কিছু ক্ষেপণাস্ত্র রাডার প্রতিরোধকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে, যাতে সেগুলো রাডারে ধরা না পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধ প্রতিপক্ষের অস্ত্রের মজুত নিঃশেষ হওয়া পর্যন্ত চলতে পারে। অর্থাৎ, দীর্ঘমেয়াদে কে কত ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা বজায় রাখতে পারে—তা নির্ধারণ করবে যুদ্ধের গতিপথ।

ইরান কত দিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যেতে পারবে, আর ইসরায়েল কত দিন অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে তা এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Largest Islamic bank in the making

Largest Islamic bank in the making

The five banks slated for consolidation are First Security Islami Bank, Union Bank, Global Islami Bank, Social Islami Bank and Exim Bank.

12h ago