গাজার দিকে ছুটছে ৫০ জাহাজ, তিউনিসিয়ায় ড্রোন হামলার অভিযোগ

গত মাসে স্পেনের বার্সেলোনা ত্রাণবাহী নৌযানের 'ফ্লোটিলা' নিয়ে গাজার পথে রওনা হয়েছেন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। উদ্দেশ্য, গাজায় ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধের অবসান ঘটানো।
ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০ থেকে ৭০টির মতো জাহাজ নিয়ে গাজায় পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন থুনবার্গ ও অভিযানের সমন্বয়কারী সংগঠন দ্য গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএইচএফ)।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে তিউনিসিয়ার বন্দরে নোঙ্গর করে থুনবার্গের ফ্লোটিলা। এ সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ জাহাজে ড্রোন হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
তিউনিসিয়ার সিদি বউ সাঈদ বন্দরে নোঙ্গর করা অবস্থায় ফ্লোটিলার মূল জাহাজগুলোর অন্যতম একটি নৌযান ড্রোন হামলার শিকার হয় বলে জানিয়েছে জিএইচএফ। নৌযানের ছয় যাত্রী ও ক্রু নিরাপদ আছেন।
তবে ড্রোন হামলার দাবি অস্বীকার করেছে তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দাবি, বন্দরে থাকা কোনো নৌকায় ড্রোন হামলা হয়নি। 'এ ধরনের দাবির কোন সত্যতা নেই', জানায় কর্তৃপক্ষ।
ড্রোন হামলার পর নৌযানে আগুন ছড়িয়ে পরে। পর্তুগালের পতাকাবাহী এই নৌযানে ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা ছিলেন। নৌযানের মূল ডেক ও নিচের ডেকের সংরক্ষণাগারে আগুন ধরেছে বলে জানায় সংগঠনটি।
জিএসএফ জানিয়েছে, আজকের ড্রোন হামলা নিয়ে তদন্ত চলছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এক বিবৃতিতে জিএসএফ জানায়, 'ভয়ভীতি দেখিয়ে ও আগ্রাসী আচরণে আমাদের অভিযানকে লক্ষ্যচ্যুত করা যাবে না। আমরা গাজার অবরোধ ভাঙার শান্তিপূর্ণ অভিযানে আছি। আমরা গাজার মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছি এবং আমরা সেখানে চলমান সংকট নিরসন করতে বদ্ধপরিকর।'
হামলার সময় বন্দরে উপস্থিত ছিলেন অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেসকা আলবানিজ। তিনি রয়টার্সকে বলেন, 'এই হামলার পেছনে কারা ছিলেন তা আমাদের জানা নেই। তবে এর পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকলে বিন্দুমাত্রও অবাক হব না। এটা বিষয়টি নিশ্চিত হয়, তাহলে তা তিউনিসিয়ার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।'
Breaking news;
Here is the security camera footage from the Family vessel of the Sumud Flotilla, stationing just outside Tunis port. So:
1. Sound of something that the crew identified as a drone.
2. Crews sounds the alarm and calls for help.
3. Explosion.
Draw your conclusions. pic.twitter.com/HmkFG7yaEt— Francesca Albanese, UN Special Rapporteur oPt (@FranceskAlbs) September 8, 2025
এই উদ্যোগে থুনবার্গের সঙ্গে আছেন পর্তুগালের বামপন্থি রাজনীতিবিদ মারিয়ানা মর্তাগা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জিএসএফের পোস্ট করা ভিডিওতে হামলার বিস্তারিত দেখা গেছে।
একটি আলোকিত বস্তু উড়ে এসে নৌযানে আঘাত হানে। এরপর সেখান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।
রয়টার্সকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার পর ১০-২০ জন মানুষ বন্দরের বাইরে জমায়েত হন। তারা ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে 'ফিলিস্তিন মুক্ত করুন' স্লোগান দিতে থাকেন।
বার্সেলোনা থেকে ২০টি জাহাজ নিয়ে রওনা হলেও পরবর্তীতে অন্যান্য বন্দর থেকে ফ্লোটিলায় যোগ দেবে বাকি জাহাজগুলো।
গত ২৩ মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন, গণহত্যামূলক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই দীর্ঘ সময়ে গাজায় স্থল ও জলপথে ত্রাণ পৌঁছানোর উদ্যোগে বাধা দিয়েছে ইসরায়েল। ফ্লোটিলা অভিযানের উদ্দেশ্য, ত্রাণ প্রবেশের অবরোধ বানচাল করা।
২০০৭ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে গাজার ক্ষমতা গ্রহণ করে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তখন থেকেই গাজার সমুদ্রসীমা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, হামাসের কাছে যাতে কেউ অস্ত্র পাঠাতে না পারে, সেটা ঠেকাতেই এই উদ্যোগ।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস হামলা চালায়। ওই হামলার এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। জিম্মি হন ২৫০ ব্যক্তি। সেদিনই পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় ২৩ মাসের নিরবচ্ছিন্ন আগ্রাসনে ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
চলমান সংঘাতের পুরো সময়জুড়ে গাজার অবরোধ চালু থেকেছে।
এ বছরের মার্চে স্থলপথও অবরুদ্ধ করে ইসরায়েল। সে সময় টানা তিন মাস গাজায় কোনো ত্রাণ সামগ্রী ঢুকতে পারেনি। এতে গাজা উপত্যকায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়।
জুনে আরও একটি ফ্লোটিলার মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করেন থুনবার্গ। সে সময় ব্রিটেনের পতাকাবাহী ইয়টটিতে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর সদস্যরা অনুপ্রবেশ করেন। ইসরায়েল সে সময় ওই উদ্যোগকে 'হামাসের সমর্থনে অপপ্রচার' বলে আখ্যা দেয়।
এখনো ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।
Comments