নিউইয়র্কে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হারালেন নেতানিয়াহু?

ইসরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থক তিনি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠজন। তিনি গাজায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ। তিনি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও সুপরিচিত ডেমোক্র্যেট নেতা অ্যান্ড্রু কুয়োমো।
ডেমোক্র্যেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কুয়োমো। কিন্তু প্রতিন্দ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেরে না ওঠায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ইসরায়েলের একজন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে কথায় ও কাজে বিভিন্ন সময় প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তার পক্ষের আইনজীবীদের দলে যোগ দেন অ্যান্ড্রু কুয়োমো।
২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে এই বিতর্কিত নেতা ও যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি এক ইহুদি সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতায় বলেছিলেন, 'আজকের এই মুহূর্তটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। এটি সত্যিকারের বন্ধুদের পাশে থাকার সময়—ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াইয়ের সময়।'
আরও বলেছিলেন, 'আইসিসিতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা খারিজ করতে যে আইনি দল করা হয়েছে তাতে থাকতে পেয়ে আমি গর্বিত। ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে থাকতে পেরে আমি গর্বিত।'
এরপর তিনি ক্রমাগত ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলেছেন। তুলে ধরেন গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার পক্ষে নানা যুক্তি। তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানি ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলায় অ্যান্ড্রু কুয়োমো ক্রমাগত ক্ষোভ দেখান। জোহরানের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ আনেন ইহুদিবিদ্বেষের।
কিন্তু, গত সোমবার গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবি তুলে অ্যান্ড্রু কুয়োমো বিশ্ব গণমাধ্যমের নজর কাড়েন। সেদিন দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই দাবি জানান তিনি। সাক্ষাৎকারের শিরোনাম করা হয়, 'ইসরাইলের কট্টর সমর্থক কুয়োমো বলেছেন, "ভয়াবহ" গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে'।
শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখছেন তিনি। অথচ এক বছরের কম সময় আগে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের পরোয়ানা থেকে নেতানিয়াহুকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
'সন্দেহ নেই নিউইয়র্কের মানুষ ও পুরো জাতি দেখছে যে গণহত্যা চলছে তো চলছেই। তারা খুব খুব বিরক্ত। তারা চায় এটি বন্ধ হোক। তাদের বিশ্বাস, দীর্ঘদিন ধরেই এটি চলছে।'
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অ্যান্ড্রু কুয়োমো দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে ইসরায়েলের 'চরম আগ্রাসী' সমর্থক হিসেবে তুলে ধরছিলেন। তিনি শুধু গাজা যুদ্ধের পক্ষে কথা বলেই থামতেন না, ডেমোক্র্যোটিক পার্টির কেউ যুদ্ধের পক্ষে কথা না বললে তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করতেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কুয়োমোর নির্বাচনী প্রচারণা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন দেখা গেল তিনি কথা বলছেন নতুন সুরে। বদলে গেছে তার অবস্থান। তিনি শুধু যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন তা নয়, বলছেন, 'কখনই নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়াইনি।'
তিনি চান, গাজা যুদ্ধ আজই বন্ধ হোক। জিম্মিরা ফিরে আসুক। সংঘাতের অবসান হোক। তিনি মনে করেন, 'এই যুদ্ধ কয়েক মাস আগেই শেষ হওয়া উচিত ছিল। এটি ভয়াবহ।'
তবে, কীভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে তা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।
তার এমন বক্তব্য অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। যদিও, গত মাসে তিনি গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইসরায়েলের সমালোচনা করেছিলেন। পরে এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন যে তিনি অন্যদের ভাবনাকেই তুলে ধরেছিলেন। তিনি গাজায় খাবারের চরম সংকটের জন্য এককভাবে ইসরায়েলকে দায়ী করতে চান না।
তিনি নিজেকে মধ্যপন্থি রাজনৈতিক হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেও ইসরায়েল সরকারের যেকোনো সমালোচনাকে 'ইহুদিবিদ্বেষ' বলে গণ্য করতেন।
গত সোমবার সাক্ষাৎকারেও অ্যান্ডু কুয়োমো সচেতনভাবে ইসরায়েলি বাহিনী ও নেতানিয়াহুর সমালোচনা করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন। এসবের বিপরীতে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানির সমালোচনাই বেশি করেছেন।
গত বছর নভেম্বরে অ্যান্ড্রু কুয়োমো আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থেকে নেতানিয়াহুকে মুক্ত করতে আইনজীবীদের দলে যোগ দিয়েছিলেন। এখন বলছেন, সেদিন তিনি আইসিসি'র রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। নেতানিয়াহুর গণহত্যার বিরুদ্ধে নয়। এখন নিজেকে নেতানিয়াহুর 'বন্ধু' বলতে চান না। বলছেন, তাদের মধ্যে কখনই রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল না।
অ্যান্ড্রু কুয়োমোর এমন অবস্থানকে হয়ত রাজনৈতিক চাল হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তিনি হয়ত আগামী নভেম্বরে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য আপাতদৃষ্টিতে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তিনি এখন ইসরায়েল ইস্যু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। তাই প্রশ্ন, নিউইয়র্কে এমন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে কি হারালেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু?
Comments