উত্তর কোরিয়ার ড্রোনে এআই প্রযুক্তি যুক্ত করার নির্দেশ দিলেন কিম জং উন

উত্তর কোরিয়ার অত্যাধুনিক কুমসং ড্রোন পরীক্ষায় অংশ নেন কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার অত্যাধুনিক কুমসং ড্রোন পরীক্ষায় অংশ নেন কিম জং উন। ছবি: এএফপি

উত্তর কোরিয়া একটি নতুন সশস্ত্র ড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে। ওই পরীক্ষার সরাসরি অংশ নেন দেশটির নেতা কিম জং উন। তিনি ড্রোনে আরও উন্নত এআই প্রযুক্তি সংযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ শুক্রবার পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি। 

ড্রোন পরীক্ষার কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ। এতে মনুষ্যবিহীন উড়ন্ত যানটিকে মাটি থেকে উড়ে যেয়ে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে দেখা যায়। 

উত্তর কোরিয়ার ড্রোন পরীক্ষা। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার ড্রোন পরীক্ষা। ছবি: এএফপি

দেশটির গণমাধ্যম বলছে এই পরীক্ষায় 'কুমসং সিরিজের ট্যাকটিকাল অ্যাটাক ড্রোনের দক্ষতা ও উপযোগিতার' প্রদর্শনী হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ড্রোন পরীক্ষার সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কিম।

কিম এ সময় মন্তব্য করেন, ড্রোন ডিপিআরকে'র (উত্তর কোরিয়ার নামের আনুষ্ঠানিক সংক্ষিপ্ত রূপ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক উপকরণগুলোর মধ্যে একটি। সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নের উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাধান্যের একটি বিষয় ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়ন।'

তিনি অবিলম্বে 'নতুন ও অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) প্রযুক্তি' চালুর উদ্যোগ নেওয়ার এবং ড্রোন উৎপাদন সক্ষমতার 'সম্প্রসারণ ও একে আরও শক্তিশালী করে তোলার' নির্দেশ দেন। 

সিউলের কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের বিশ্লেষক হং মিন জানান, 'পরাশক্তি' হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে ড্রোন প্রযুক্তিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কিম। 

তিনি বলেন, 'ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে উত্তর কোরিয়ার দ্রুত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা উদ্বেগজনক, কারণ এই প্রযুক্তির উন্নয়নে খুব বেশি খরচ নেই। এগুলো সঠিক লক্ষ্যে নির্ভুল আঘাত হানার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী। এই ড্রোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম, এগুলো আরও নিখুঁত ও ধ্বংসাত্মক এবং খুব দ্রুত ও সহজে অসংখ্য ড্রোন উৎপাদন করা যায়। হামলায় ব্যবহারের পাশাপাশি এগুলোর নানা কৌশলগত ব্যবহারও আছে। সব মিলিয়ে, এটি একটি বড় হুমকি।' 

রাশিয়া থেকে পাওয়া শিক্ষা

গত বছর পিয়ংইয়ং প্রথমবারের মতো স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত সশস্ত্র ড্রোন প্রদর্শন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে 'খাতিরের' কারণেই এই খাতে এত দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছে উত্তর কোরিয়া।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, যেসব উত্তর কোরীয় সেনা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়তে রাশিয়া গেছেন, তারা আধুনিক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অমূল্য অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন। ওই যুদ্ধে ড্রোনের বহুল ব্যবহার দেখা গেছে।

ড্রোনের সামনে কিম জং। ছবি: এএফপি
ড্রোনের সামনে কিম জং। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিম ইউল-চুল বলেন, এআই প্রযুক্তি উত্তর কোরিয়ার ড্রোনকে বিশেষ সক্ষমতা দেবে।

'জিপিএস বা অন্য ধরনের যোগাযোগ সিগনাল জ্যামিং করা হলেও এগুলো কাজ করবে। আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া অ্যালগরিদম মেনে এগুলো অভিযান শেষ করতে পারবে', যোগ করেন্ তিনি।

ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে জিপিএস জ্যামিং হামলা পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। প্রতিবেদন মতে, এসব অভিযানে বেশ কয়েকটি জাহাজ ও ১০-২০টি বেসামরিক উড়োজাহাজ প্রভাবিত হয়েছে।

লিম বলেন, '২০২৪ সাল থেকেই তারা ড্রোন নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে। তারা রাশিয়ার কাছ থেকে প্রযুক্তি এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে মূল্যবান অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে।'

দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, উত্তর কোরিয়া ২০২৪ সালে রাশিয়ায় ১০ হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়েছে। তারা মূলক কুরস্ককে ইউক্রেনের দখল থেকে মুক্ত করার অভিযানে অংশ নেন। সেনার পাশাপাশি রাশিয়াকে কামানের গোলা, ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম দেওয়ারও অভিযোগ আছে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে।

সিউলের দাবি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে প্রায় ৬০০ উত্তর কোরীয় সেনা নিহত ও হাজারো সেনা আহত হয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

8h ago