ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

প্রায় ৭৭ বছরের নীরবতা ভেঙে অবশেষে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ইসরায়েল যখন সব আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে দমনপীড়ণ চালিয়ে যাচ্ছে তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিন-স্বীকৃতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
গত শুক্রবার এ নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শিরোনাম দেয়—যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির অর্থ কী।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ও দুই দেশের সহাবস্থানের ধারণাকে টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নিজ দেশের অংশ করে ফেলা বা গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করবে যাতে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিরা প্রতিবেশী মিশর ও জর্ডানে চলে যান। এর ফলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র-ভাবনা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
তাই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে সেসব এলাকা গ্রাস করা ইসরায়েলের জন্য সহজ হবে না।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্য যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলো শুধু ইসরায়েলের জন্য প্রযোজ্য। সেগুলো হলো—যুদ্ধবিরতি, সামরিক অভিযান বন্ধ ও দুই রাষ্ট্র সমাধানে সমঝোতা।
এগুলো পূরণ হলে লন্ডন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া স্থগিত রাখবে বলে জানিয়েছিল। তবে ইসরায়েল ওই পথে পা মাড়ায়নি—যার ফলে যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিও একযোগে ফিলিস্তিনকে আজ রোববার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য চায় এমন ফিলিস্তিন যেখানে হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে। ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ সরকারে ওই দলটির কোনো ভূমিকা থাকবে না। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নেতারা এক বছরের মধ্যে নির্বাচন দেবেন।
তাহলে যুক্তরাজ্যের এই স্বীকৃতির মানে কি?
সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই স্বীকৃতি প্রধানত প্রতীকী। যুক্তরাজ্য যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ইচ্ছার কথা ঘোষণা দিয়েছিল তখন দেশটির সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছিলেন, 'এতে বাস্তবিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।'
তবে বাস্তবতা হচ্ছে—এই স্বীকৃতির ফলে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে। ফিলিস্তিনের হেড অব মিশনকে পুরোপুরি রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করা যাবে। যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলি অধিকৃত অঞ্চল থেকে আসা পণ্য বর্জন করা যাবে। সর্বোপরি, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে ইসরায়েলি বাধা উপেক্ষা করা যাবে।
আগামীকাল সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রার আগেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এক্সে দেওয়া বার্তায় স্টারমার বলেন, 'ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের শান্তির আশার পুনর্জাগরণ করতে এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করতে আজ যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।'
অপরদিকে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া একযোগে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় অবিলম্বে পশ্চিম তীর দখলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের উগ্র-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভি।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির আহ্বান 'আমাদের (ইসরায়েলের) অস্তিত্বকে বিপন্ন করে এবং এটি সন্ত্রাসবাদের জন্য মানুষকে পুরস্কৃত করার সমতুল্য, যা অবিশ্বাস্য।'
Comments