আরব দেশগুলো আকাশ প্রতিরক্ষায় কতটা শক্তিশালী?

ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি। ফাইল ছবি: ন্যাটো
ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি। ছবি: ন্যাটো

কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছিল গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসি-এর যৌথ প্রতিরক্ষা কাউন্সিল।

দোহায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের পর জিসিসি মহাসচিব জাসেম মোহাম্মদ আলবুদাইভি বলেন, 'কাতারের ওপর এই হামলা জিসিসির সব সদস্য দেশের ওপর হামলার সামিল।' তিনি জানান, হামলা ঠেকাতে সদস্য রাষ্ট্রগুলো যৌথভাবে নিজদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করবে, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বাড়াবে, আকাশসীমায় সমন্বয় করবে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করবে।

এছাড়া যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ মহড়া আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটি আঞ্চলিক বিমানবাহিনীর মহড়াও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। উল্লেখ্য, এই বছর কাতার হলো সপ্তম দেশ যেখানে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।

জিসিসি কী

জিসিসি বা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল ১৯৮১ সালে গঠিত একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট। আরব উপদ্বীপের ছয়টি আরব রাষ্ট্র এর সদস্য। দেশগুলো হলো: বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিই ছিল এই জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্য।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস)-এর 'মিলিটারি ব্যালেন্স ২০২৪' প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে জিসিসিভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে তাদের সামরিক খাতে ১১৪.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় ছিল সবচেয়ে বেশি। দেশটি এই খাতে সে বছরে ব্যয় করে ৬৯ বিলিয়ন ডলার। সামরিক ব্যয়ে সৌদি আরব বিশ্বে সপ্তম। এর পরেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (২০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার), কাতার (৯ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার), কুয়েত (৭ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার), ওমান (৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার) এবং বাহরাইন (১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার)।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি

কয়েক দশক ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর তথ্যমতে, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১৯টি স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী সামরিক স্থাপনার একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে। এর মধ্যে আটটি স্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে জিসিসির ছয়টি দেশের পাঁচটিতেই—বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এছাড়া মিশর, ইরাক ও জর্ডানেও তাদের স্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে।

কাতারে ১৯৯৬ সালে আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটাই মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই ঘাঁটিতে প্রায় ১০০টি বিমান এবং ড্রোন থাকতে পারে। এখানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করে। এই ঘাঁটিটি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে এবং ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে অভিযানে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে।

দোহায় ইসরায়েলি হামলার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কাতার সফর করেন। ইসরায়েলে বৈঠক করে তিনি দোহায় পৌঁছান। তার সফরের সময় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দেশের কৌশলগত সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে এবং এই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।'

গত বুধবার সৌদি আরব পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে একটি 'কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি' স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনো একটি দেশের ওপর আগ্রাসন উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে।

উপসাগরীয় দেশগুলোর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

উপসাগরীয় ছয়টি রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া ও চীনের তৈরি বিভিন্ন ব্যবস্থা সমন্বয় করে একটি স্তরভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। তাদের অস্ত্রাগারে দূরপাল্লার ইন্টারসেপ্টর থেকে শুরু করে স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানবিধ্বংসী কামানও রয়েছে।

সৌদি আরব: উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বড়। এর মূল ভিত্তি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি 'থাড' এবং দূরপাল্লার 'প্যাট্রিয়ট প্যাক-৩' ব্যবস্থা। এছাড়া মাঝারি পাল্লার জন্য রয়েছে মার্কিন 'আই-হক' ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্বল্প পাল্লার জন্য ফরাসি 'ক্রোটেল', 'শাহিন' ও 'মিকা' সিস্টেম। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সংখ্যক 'স্টিংগার', 'অ্যাভেঞ্জার', ফ্রান্সের 'মিস্ট্রাল' এবং সুইস/জার্মান 'ওয়েরলিকন' ও সুইডিশ 'বোফোরস' বিমানবিধ্বংসী কামান রয়েছে। জিসিসিতে সৌদি আরবই একমাত্র দেশ যারা চীনের তৈরি 'সাইলেন্ট হান্টার' লেজার সিস্টেম ব্যবহার করে, যা নিচু দিয়ে উড়ে আসা ড্রোন শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই): দেশটি মার্কিন থাড ও প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের পাশাপাশি ইসরায়েলি বারাক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি সংস্করণ পরিচালনা করে। মাঝারি পাল্লার জন্য তারা দক্ষিণ কোরিয়ার চেওনগুং-২ ব্যবহার করে। স্বল্প পাল্লার প্রতিরক্ষায় রয়েছে ফরাসি ক্রোটেল ও মিস্ট্রাল, রুশ ইগলা ও পান্তসির-এস১, সুইডিশ আরবিএস-৭০ এবং ব্রিটিশ রেপিয়ার সিস্টেম। সৌদি আররের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতও থাড মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম পরিচালনা করে।

কাতার: দূর ও মাঝারি পাল্লার জন্য মার্কিন প্যাট্রিয়ট এবং নরওয়েজিয়ান-আমেরিকান নাসমাস-৩ সিস্টেমে বিনিয়োগ করেছে কাতার। স্বল্প পাল্লার প্রতিরক্ষায় রুশ ইগলা, মার্কিন স্টিংগার, চীনা এফএন-৬ এবং ফরাসি মিস্ট্রাল সিস্টেম রয়েছে। এছাড়াও আছে জার্মান গেপার্ড ও স্কাইনেক্স বিমানবিধ্বংসী কামান।

কুয়েত: দূরপাল্লার জন্য মার্কিন প্যাট্রিয়ট প্যাক-৩, স্বল্প পাল্লার জন্য ইতালীয় অ্যাস্পাইড এবং পয়েন্ট ডিফেন্সের জন্য স্টিংগার ও স্টারবার্স্ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। সঙ্গে রয়েছে জার্মান ওয়েরলিকন জিডিএফ বিমানবিধ্বংসী কামান।

বাহরাইন: সম্প্রতি প্যাট্রিয়ট প্যাক-৩ এমএসই সিস্টেম কিনেছে দেশটি। এর মাধ্যমে তারা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েতের পর পঞ্চম জিসিসি দেশ হিসেবে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অর্জন করেছে। মাঝারি থেকে স্বল্প পাল্লার জন্য তারা মার্কিন আই-হক ও ফরাসি ক্রোটেল সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল।

ওমান: অন্যান্য জিসিসি দেশের তুলনায় ওমানের উন্নত দূর ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নেই। তাদের স্বল্প পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে নরওয়েজিয়ান-মার্কিন, ফরাসি মিস্ট্রাল, মার্কিন জ্যাভলিন এবং রুশ স্ট্রেল‍া-২ ক্ষেপণাস্ত্র। সঙ্গে রয়েছে রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড ও সুইডেনের তৈরি বিভিন্ন কামান।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

1h ago