‘ইন্টারনেট বন্ধের পর জীবন যেন অন্ধকার হয়ে গেছে’

আফগানিস্তানে ২০২১ সালের আগস্টে তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে।
এরপর থেকে ১২ বছরের ওপরের নারীদের স্কুলে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি নারীদের জন্য চাকরির সুযোগও আশঙ্কাজনকভাবে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সম্প্রতি নারীদের লেখা বই এবং মানবাধিকার ও যৌন হেনস্থা বিষয়ক পড়াশোনাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানের এই কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আফগান নারীদের জন্য ইন্টারনেট ছিল 'শেষ আশা'।
ফাহিমা নূরী (ছদ্মনাম), যিনি আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিকে কাজ করতেন, অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন।
সম্প্রতি তিনি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছিলেন, যেখানে পড়াশোনা করে অনলাইনে চাকরির আশা করছিলেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার তালেবান সরকার সারাদেশে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়, যা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থায়ী হতে পারে।
ইন্টারনেট বন্ধের ফলে আফগান নারীরা তাদের 'শেষ আশাও' হারিয়ে ফেলেছেন। ফাহিমার মতো অনেকেই এখন 'বেকার' বসে আছেন, অনলাইনে পড়াশোনা ও নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ফাহিমা বলেন, 'আমরা পড়াশোনা শেষ করে বাবাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু এখন আমরা ঘরে বসে আছি, কিছুই করতে পারছি না।'
তালেবান সরকার বিভিন্ন প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দিয়ে বলছে, 'অনৈতিকতা রোধের' জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর ফলে মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে, যা দেশটির জরুরি পরিষেবা, সংবাদ যোগাযোগ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাজকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত করেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের কাবুল অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। মোবাইল ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভি পরিষেবাও ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
তাখার প্রদেশের শাকিবা নামে এক নারী বলেন, 'ইন্টারনেট বন্ধের পর জীবন যেন অন্ধকার হয়ে গেছে। আমরা পড়তে চাই, শিক্ষিত হতে চাই, ভবিষ্যতে মানুষকে সাহায্য করতে চাই।'
অনলাইনে ইংরেজি শিক্ষকের কাজ করা জাবি জানান, আইইএলটিএস পরীক্ষার মাঝখানে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার অনেক শিক্ষার্থীর কয়েক মাসের প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে গেছে।
আফগানিস্তানে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার কোনো কেন্দ্র না থাকায় অনলাইন পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীল শিক্ষার্থীরা এখন আর কোনো সুযোগ পাচ্ছে না।
ইন্টারনেট বন্ধের ফলে ব্যবসাও বিপর্যস্ত হয়েছে। তাখার প্রদেশের মুদ্রা ব্যবসায়ী আনাস বলেন, 'আমাদের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। ইমেইল পাঠানো থেকে শুরু করে সবকিছুই অচল।'
তার তিন মেয়ে অনলাইনে পড়াশোনা করত, তারা এখন পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন বলেও জানান তিনি।
তালেবান এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধের সঠিক কারণ জানায়নি। আগে তারা বলেছিল, বিকল্প ইন্টারনেট ব্যবস্থা করা হবে, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি।
এই পরিস্থিতিতে আফগান নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে গেছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট বন্ধের ফলে তারা নিজেদের নিঃসঙ্গ ও দুর্বল মনে করছেন।
Comments