ইন্টারনেট বন্ধ করে তালেবান বুঝল ‘অতীতে ফেরা কঠিন’

৪৮ ঘণ্টা পর ইন্টারনেট ফেরায় খুশি মনে ভিডিও কলে কথা বলছেন কাবুলের এক তরুণ। ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার সম্প্রতি ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। এতে দেশটির প্রায় ৪৩ মিলিয়ন মানুষ বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের সব মাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সিএনএন বলছে, গত সোমবার বিকেলে হঠাৎ ইন্টারনেট ও ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও পরিবার-পরিজনদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কাউকে ফোন দেওয়া যায়নি, মেসেজ পাঠানো সম্ভব হয়নি। 

এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অনেক সংস্থা, সংবাদমাধ্যম, সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ব্যাংকিং সেবা থেমে যায়, বাজার স্তব্ধ হয়ে পড়ে, বিমান চলাচল বাতিল হয় এবং অর্থনীতিতে বিশাল ক্ষতি হয়।

'অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধে' ইন্টারনেট বন্ধ করার কথা আগেই জানিয়েছিলেন তালেবানের উত্তরাঞ্চলের কিছু শাসক। তবে পুরো দেশব্যাপী এই ব্ল্যাকআউটের কোনো স্পষ্ট কারণ বা পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয়নি। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিশেষ করে নারীরা, যারা তালেবানের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্কুলে যেতে পারেন না, তাদের একমাত্র শিক্ষা মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোও বন্ধ হয়ে পড়ে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে লেনদেন, সরবরাহ ও যোগাযোগের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানী কাবুলের ৩৭ বছর বয়সী মুদ্রা-বিনিময়কারী আব্দুল হামিদ জানান, তিনি চার ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে বাজারে গিয়ে মুদ্রাবিনিময়ের তথ্য সংগ্রহ করতে বাধ্য হন। পরে দোকান বন্ধ করে বসে থাকেন, কারণ লেনদেন করা সম্ভব ছিল না।

আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ পাকিস্তানের টোরখাম সীমান্ত দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু থাকার সুযোগে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হন। সীমান্তের ব্যবসায়ীরা জানান, তারা আর্থিক লেনদেন ও পণ্য সরবরাহ নিয়ে সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না।

উদ্ভূত এসব সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারনেট বন্ধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত সেবা পুনরায় চালু করার আহ্বান জানায়। 

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি রিচার্ড বেনেটের মতে, এই পদক্ষেপ আফগানিস্তানের অর্থনীতি ও মানুষের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

শহরগুলোতে, বিশেষ করে তরুণ যারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় হয়েছে, তারা এই ব্ল্যাকআউটের সময়ে মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইমুনা দুরানি বলেন, 'ফোন ব্যবহার না করতে পারা খুব অস্বস্তিকর। কেউ কারও খবর নিতে পারছিল না, এ যেন একদম আলাদা এক অভিজ্ঞতা।'

বৃহস্পতিবার সকালে ইন্টারনেট ও ফোন নেটওয়ার্ক চালু হতেই কাবুলের মানুষেরা আনন্দে ফেটে পড়েন। অনেকেই দ্রুত বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। 

গৃহিণী ফাওজিয়া রাহিমি জানান, তিন দিনের বিচ্ছিন্নতার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মেয়েদের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে কথা বলে তিনি অম্লান সুখ অনুভব করছেন।

তবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্ল্যাকআউটের ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশাও তৈরি হয়েছে। তারা ভাবছেন, কীভাবে এমন একটি মৌলিক অধিকার হঠাৎ করে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

এক আফগান সাংবাদিক বলেন, 'এই ব্ল্যাকআউট আমাদের বুঝিয়ে দিলো যে, তালেবান শাসন কতোটা ক্ষমতাশালী। কেননা তারা আধুনিক যোগাযোগ বন্ধ করে মানুষকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে।'

বিক্ষুব্ধ কিছু আফগান ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের চেষ্টা করলেও এটি সেদেশে অফিসিয়ালি চালু নয় এবং এটি ব্যবহার করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবান শাসকরা ইন্টারনেট বন্ধ করে জনজীবন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও, আধুনিক প্রযুক্তি আর তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তাল মেলানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই ব্ল্যাকআউট পূর্ববর্তী দশকগুলোর মতো দেশটিকে পিছিয়ে নিতে পারে, যা তালেবানের জন্যও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।

 

Comments

The Daily Star  | English

Onion imports to resume Sunday

50 permits, allowing up to 30 tonnes each, to be issued daily

5h ago