ভূমিধস ও বন্যায় নেপাল-ভারতে প্রাণ গেল ৬৪ জনের

নেপাল ও প্রতিবেশী ভারতে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট ভূমিধস ও বন্যায় গতকাল রোববার পর্যন্ত ৬০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও উদ্ধারকাজে ব্যস্ত রয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। এএফপির খবরে এমনটি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার থেকে নেপালে টানা প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে, এতে নদীগুলোর পানি বেড়ে উপচে পড়ছে এবং হিমালয়ঘেঁষা দেশটির বহু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নেপালের জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র শান্তি মহাত বলেন, 'প্রবল বর্ষণ থেকে সৃষ্ট দুর্যোগে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৪ জনের প্রাণ গেছে। পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন।'
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বাঞ্চলীয় ইলম জেলায় অন্তত ৩৭ জন ভূমিধসে নিহত হয়েছেন। স্থানীয় জেলা কর্মকর্তা সুনীতা নেপাল জানান, 'রাতভর টানা ভারি বৃষ্টির কারণে ভূমিধস হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'উদ্ধারকর্মীরা এরইমধ্যে দুর্গত এলাকায় পৌঁছেছেন। তবে অনেক সড়ক বন্ধ থাকায় সেখানে পৌঁছানো দুঃসাধ্য ছিল।'
রাজধানী কাঠমান্ডুর নদীগুলোর পানিও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে, ফলে নদীতীরবর্তী বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। হেলিকপ্টার ও মোটরবোট ব্যবহার করে উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
৩৮ বছর বয়সী সবজি বিক্রেতা রাজন খাড়গা বলেন, 'কিছু ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, তবে কর্তৃপক্ষ আগেভাগে বন্যা সতর্কতা জারি করেছিল বলে আমরা কিছু জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পেরেছি।'
ভূমিধসের কারণে কয়েকটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে এবং উড়োজাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এতে শত শত যাত্রী পথে আটকে পড়েছেন। তাদের অনেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দশাইন উৎসব উদযাপন শেষে ফিরছিলেন।
ফেডারেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত পাঁচজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি জানিয়েছেন, সরকারি সংস্থাগুলো 'উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।'
জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, 'আপনাদের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। প্রয়োজনীয় সহায়তা নিতে দ্বিধা করবেন না।'
তিনি আরও জানান, সরকার রোববার ও সোমবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। একান্ত প্রয়োজন না হলে মানুষকে ভ্রমণ না করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চা-উৎপাদনকারী পার্বত্য জেলা দার্জিলিংয়ে টানা রাতভর বৃষ্টির ফলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ২০ জনের প্রাণ গেছে। এতে বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন বলেন, 'দার্জিলিং পাহাড়ে ভারী ঘূর্ণিঝড়ের পর ২০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।'
ভারতীয় টেলিভিশনের প্রচারিত সংবাদে দেখা যায়, তীব্র স্রোতে সেতু ভেঙে পড়া ও রাস্তা ধসে পড়ার মধ্যে উদ্ধারকর্মীরা দড়ি ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রাণহানির ঘটনায় শোক জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, 'দার্জিলিং ও আশপাশের এলাকায় টানা বৃষ্টি ও ভূমিধসের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।'
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর দার্জিলিংসহ হিমালয় উপকণ্ঠের এলাকাগুলোর জন্য সোমবার পর্যন্ত 'অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের' সতর্কতা জারি করেছে।
টানা বর্ষণে প্রতিবেশী ভূটানের নদীগুলোর পানিও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
সীমান্তবর্তী শহর ফুয়েনছোলিংয়ে আটকে পড়া কয়েকজন সাধারণ নাগরিককে সরিয়ে নিতে সামরিক হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমি বৃষ্টিতে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণঘাতী বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব দুর্যোগ এখন আরও অপ্রত্যাশিত সময়ে, ঘন ঘন এবং বেশি তীব্রভাবে ঘটছে।
কাঠমান্ডু-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট' জুন মাসে সতর্ক করে বলেছিল, এই মৌসুমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলো আরও বেশি দুর্যোগ ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
Comments