মিয়ানমারে বৌদ্ধদের উৎসবে হামলায় নিহত ৪০, অ্যামনেস্টি বলছে ‘যুদ্ধাপরাধ’

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে চাউং উ শহরে বৌদ্ধদের এক ধর্মীয় উৎসবে দেশটির সামরিক জান্তা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।
আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি ও এএফপি।
থাদিংগিউত পূর্ণিমা উৎসবে যোগ দিতে মিয়ানমারের চাউং উ শহরে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার থেকে বোমা হামলার বিষয়টি আয়োজক কমিটির এক সদস্য এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত সরকারি জান্তার বিমান হামলাকে 'যুদ্ধাপরাধের' সঙ্গে তুলনা করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ধর্মীয় উৎসবে বোমা হামলা
নাম না প্রকাশের শর্তে আয়োজক কমিটির ওই সদস্য বলেন, 'অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সন্ধ্যা ৭টায় জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেয় উপস্থিত জনতা। সেসময় বোমা হামলায় ৪০ জন নিহত ও আরও ৮০ জন আহত হন।

তিনি এএফপিকে বলেন, 'হামলার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হলে উপস্থিত জনতার কেউ কেউ পালিয়ে যান।'
'উপস্থিত জনতার মাথার ওপর দিয়ে মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার উড়ে যায়। সেখান থেকে নিক্ষেপ করা দুইটি বোমা একেবারে জনতার মাঝখানে এসে পড়ে,' যোগ করেন তিনি।
ঘটনার সময় ওই ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে তিনি নিহতদের শেষকৃত্যে অংশ নেন।
তিনি আরও জানান, 'শিশুদের শরীর একেবারে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।'
কিছুক্ষণ পর আরেকটি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার উড়ে যাওয়ার পর আহতদের সাহায্যে সবাই এগিয়ে আসেন।
তিনি আরও বলেন, 'এখনো ঘটনাস্থল থেকে মানুষের বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মরদেহের অংশবিশেষ, বিস্ফোরণের দমকে খুলে আসা মাংসপিণ্ড উদ্ধার করা হচ্ছে।'
সোমবারের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এমন এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম না প্রকাশের শর্তে এএফপিকে বলেন, 'মাথার ওপর দিয়ে প্যারাগ্লাইডার উড়ে আসতে দেখে অনেকেই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন।'
চাউং উ শহরের ওই বাসিন্দা আরও জানান, 'আমি চিৎকার করে মানুষজনকে বললাম, তোমরা দৌড় দিও না। ঠিক সে সময় প্যারামোটর থেকে দুইটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়।'
'আমার চোখের সামনে দুই বন্ধুকে হারালাম। আমার সামনে আরও অনেকেই মারা গেছেন,' উল্লেখ করে তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার তার নয় বন্ধুর শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন।
সামরিক জান্তার মুখপাত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেনি এএফপি।
রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সর্বশেষ বলি
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল অং মিন হ্লাইং-এর সেনাবাহিনী। বন্দি হন নোবেলজয়ী নেতা অং সান সুচি। একাধিক মামলায় দীর্ঘ কারাবাসের শাস্তি পান তিনি।
সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে দেশটির বেশ কয়েকটি সংগঠন সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। সে সময় থেকে গৃহযুদ্ধের বলি হয়ে প্রাণ হারিয়েছে হাজারো মানুষ।
আরাকান আর্মিসহ অন্যান্য সংগঠনের কাছে দেশের অর্ধেকেরও বেশি ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাগলপ্রায় সেনাবাহিনী। মিত্রদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রের ব্যবহারে একের পর এক বিমান হামলা ও ভারী বোমাবর্ষণের কৌশল অবলম্বন করেছে জান্তা।

ওই কৌশলে সাফল্যও এসেছে। ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলা ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিচ্ছে জান্তা।
এমনই এক হামলার বলি হলেন চাউং উ শহরের বাসিন্দারা।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
তারা বলেছে, রাতের বেলার হামলা এটাই প্রমাণ করছে যে মিয়ানমারের বেসামরিক মানুষদের জরুরি ভিত্তিতে সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।
অ্যামনেস্টির মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক জো ফ্রিম্যান বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সম্ভবত মিয়ানমারের সংঘাতের কথা ভুলে গেছে, আর সেটার সুযোগ নিয়ে সামরিক জান্তা কোনও ধরনের জবাবদিহি ছাড়াই যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।'
Comments