উইন্ডোজ ১০ ইউজারদের যে অশুভ বার্তা দিলো মাইক্রোসফট

উইন্ডোজ ১০ এর সাপোর্ট বন্ধ করে দিচ্ছে মাইক্রোসফট। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
উইন্ডোজ ১০ এর সাপোর্ট বন্ধ করে দিচ্ছে মাইক্রোসফট। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

বেশিরভাগ পিসি-ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর কাছে অপারেটিং সিস্টেম মানেই 'উইন্ডোজ'। অ্যাপলের ম্যাক ওএস, লিনাক্স বা নেটওয়ার্কিং এর জন্য ইউনিক্স ব্যবহার হলেও এগুলোর জনপ্রিয়তা উইন্ডোজের ধারে কাছেও না।

আর বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ ইউজারই 'উইন্ডোজ ১০' সংস্করণটি ব্যবহার করে থাকেন।

সম্প্রতি উইন্ডোজ ১০ ইউজারদের জন্য বড় একটি অশুভ বার্তা নিয়ে এসেছে সফটওয়্যারটির নির্মাতা মাইক্রোসফট।

এই বার্তায় প্রকাশ পেয়েছে উইন্ডোজ ইউজারদের জীবনে বড় পরিবর্তন।

এখন থেকে আর 'উইন্ডোজ ১০' অপারেটিং সিস্টেমের জন্য মাইক্রোসফট কোনো ধরনের 'সাপোর্ট' দেবে না। আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে এ বিষয়টি কার্যকর হতে চলেছে। অর্থাৎ, ১৪ অক্টোবরের পর উইন্ডোজ ১০ ইউজারদের কম্পিউটারগুলো নানা হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে। 

ওই সময়সীমার পর নতুন করে উইন্ডোজ ১০ এর কোনো নিরাপত্তা আপডেট আসবে না। যার ফলে, হ্যাকারদের সহজ শিকারে পরিণত হতে পারেন উইন্ডোজ ১০ ইউজাররা।

মাইক্রোসফট ইউজারদেরকে উইন্ডোজ ১১ এ আপগ্রেড করে নিতে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে অনেকের কাছে সেজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ থাকলেও তাদের কম্পিউটারে নতুন ওএসটি কাজ করবে না। 

মার্কিন ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে পিআইআরজি নামের সংগঠনটি।

পিআইআরজির জ্যেষ্ঠ পরিচালক নাথান প্রক্টর বলেন, 'উইন্ডোজ ১০ এর সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ভোক্তা ও পরিবেশ, উভয়ের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে চলেছে।

যারা প্রভাবিত হবেন

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ১৪০ কোটি কম্পিউটারে উইন্ডোজ ইনস্টল করা আছে।

২০২৫ সালের জুলাই'র তথ্য মতে, এর মধ্যে ৪৩ শতাংশ কম্পিউটারেই উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার হচ্ছে।

মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যে এখনো দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন।

সেপ্টেম্বরের এক জরিপে জানা গেছে, সাপোর্ট বন্ধ হলেও তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার চালিয়ে যাবেন।

প্রতি সাত জনে মাত্র একজন জানিয়েছেন উইন্ডোজ ১১ চালানোর জন্য তারা নতুন কম্পিউটার কিনবেন।

অন্যান্য ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো মাইক্রোসফটের এই উদ্যোগে নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, এতে অহেতুক খরচ বাড়বে এবং পুরনো কম্পিউটারগুলো বাতিল হয়ে পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে।

প্রক্টর বলেন, 'মানুষ স্বল্প-মেয়াদি ডিভাইসের জগতে বাস করতে করতে বিরক্ত। এই ডিভাইসগুলো নষ্ট হলে মেরামত করা যায় না বা সব কিছু ঠিক থাকলেও সফটওয়্যার সাপোর্ট হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায়। অথবা অন্য কোনো কারণে এগুলোকে বাতিল করে দেওয়া হয়।'

তিনি বলেন, 'টেকসই প্রযুক্তি পাওয়ার অধিকার আছে আমাদের।'

ইউজারদের করণীয়

মাইক্রোসফট ব্যক্তিগত ইউজারদের দুইটি অপশন দিচ্ছে।

হয় উইন্ডোজ ১১ কিনতে হবে অথবা ১২ মাসের জন্য নিরাপত্তা আপডেটের মেয়াদ বাড়ানো

যাদের উইন্ডোজ ১১ চালাতে সক্ষম কম্পিউটার আছে, তারা বিনামূল্যে আপগ্রেড করতে পারবেন।

মাইক্রোসফটের লোগো। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মাইক্রোসফটের লোগো। ফাইল ছবি: রয়টার্স

তবে প্রক্টর বলছেন, অনেকের বর্তমান কম্পিউটার দিয়েই সব ধরনের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে। কিন্তু তাদেরকেও অপারেটিং সিস্টেম সুরক্ষিত রাখতে নতুন হার্ডওয়্যার কিনতে হবে।

আপগ্রেডের বিকল্প হলো বর্ধিত নিরাপত্তা আপডেট (ইএসইউ)-এ নিবন্ধন করা। আপনি যদি এখুনি আপগ্রেড করতে না চান বা আপনার ডিভাইসটি উইন্ডোজ ১১ চালাতে সক্ষম না হয়, তাহলে এই বিকল্পে যেতে পারেন।

এর আওতায় ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা আপডেটগুলো পাওয়া যাবে। 

তবে ইএসইউর আওতায় কোনো কারিগরি সহায়তা বা অন্যান্য সফটওয়্যার আপডেট পাওয়া যাবে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউজাররা রেজিস্টার করলেই বিনামূল্যে ইএসইউ ব্যবহার করতে পারবেন।

অন্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের এককালীন ৩০ ডলার  (২২ পাউন্ড) ফি পরিশোধ করতে হবে।

তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই ফিস ডিভাইস প্রতি ৬১ ডলার হবে।

অঞ্চলভেদে এই চার্জে তারতম্য থাকতে পারে।

যা বদলাচ্ছে

২০১৫ সালে বাজারে আসে উইন্ডোজ ১০। ১০ বছর ধরে এই শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেমটি জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে এটি ইউজারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চলেছে।

তবে ১৪ অক্টোবরের পর দৃশ্যপট বদলাচ্ছে।

উইন্ডোজ ১০ এর সাপোর্ট শেষ হওয়ার নোটিশ। স্ক্রিণশট: মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইট
উইন্ডোজ ১০ এর সাপোর্ট শেষ হওয়ার নোটিশ। স্ক্রিণশট: মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইট

সেদিনের পর থেকে উইন্ডোজ ১০ ইউজাররা আর কোনো নিরাপত্তা আপডেট পাবেন না।

এতে ভাইরাস ও ক্ষতিকারক সফটওয়্যারের বিরুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়বে উইন্ডোজ ১০। ইউজারদের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন হুমকি তৈরি হবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বাধ্য হবে 'অননুমোদিত সফটওয়্যার' ব্যবহার বন্ধ করতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতাও থাকবে। 

এমনটাই বলেছেন মাইক্রোসফটের ভোক্তা দপ্তরের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ইউসুফ মেহেদি।

এমন কি, উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার চালিয়ে গেলে আপনার প্রিয় কিছু সফটওয়্যার, গেম বা অ্যাপও অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কারণ ওইসব সফটওয়্যারের নতুন সংস্করণগুলো শুধু উইন্ডোজ ১১ ইউজারদের মাথায় রেখেই তৈরি করা হবে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, যাদের উইন্ডোজ ১১ চালানোর উপযোগী কম্পিউটার নেই, তারা আগামীতে বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Airport fire exposes costly state negligence

The blaze that gutted the uninsured cargo complex of Dhaka airport on Saturday has laid bare a deep and dangerous negligence in risk management across government installations.

5h ago