ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী নীল মসজিদ
ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফের ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি আফগান ইতিহাসের এক বিখ্যাত স্থাপনা। এটি রঙিন টাইলসের জন্য বেশ পরিচিত। মসজিদটি দেশের কয়েকটি পর্যটন স্থানের মধ্যে একটি।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পটি রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে মাজার-ই-শরিফের কাছে ২৮ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে।
মাজার-ই-শরিফের কেন্দ্রে ফুলে ঢাকা এক পার্কের মধ্যে নীল মসজিদের অবস্থান। পার্কটি ব্লক-আকারের। পার্কের চারপাশে আধুনিক শহরের কোলাহল। কিন্তু পার্কের ভেতরে সেই কোলাহল পৌঁছায় না। ভেতরে থাকে শত শত কবুতর।
এসব কবুতর নীল মসজিদের চত্বরেই বেড়ে ওঠে। কথিত আছে, মসজিদটি এতই পবিত্র যে, কোনো কবুতরের পালকে যদি একটি ছোট দাগও থাকে, মসজিদের এলাকায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তা সাদা হয়ে যায়।
দ্বাদশ শতকে সেলজুক সাম্রাজ্যের সুলতান আহমাদ সানজার এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। 'হজরত আলির দরগা' নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)- এর সমাধিস্থল বলে অনেকে মনে করেন।
জনশ্রুতি আছে, প্রাচীন বালখ নগরের এক স্থানীয় ব্যক্তি স্বপ্নে হজরত আলীর গোপন কবরস্থানের অবস্থান জানতে পারেন, আর সেই স্বপ্নের সূত্র ধরেই সুলতান ওই স্থানে এই মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন।
যদিও ত্রয়োদশ শতকে চেঙ্গিস খান মসজিদটি ধ্বংস করে দেন, ১৪৮১ সালে সুলতান হুসাইন মির্জা আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে এটি পুনর্নির্মাণ করেন। তখন থেকেই এটি আফগানিস্তানের অন্যতম পবিত্র ও বিখ্যাত নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে। এটি এক আধ্যাত্মিক কেন্দ্র, যা শিয়া ও সুন্নি মুসলমান উভয়ের কাছেই সমানভাবে শ্রদ্ধার।
মাজার-ই-শরিফের নীল মসজিদের প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি খিলান যেন এক অপার্থিব সৌন্দর্যে ভরে আছে। টারকোয়াইজ, নীলা আর পান্না রঙের হাজারো হাতে আঁকা টাইলস জ্যামিতিক নকশায় সাজানো। সূর্যের আলো পড়লেই টাইলস ঝিকিমিকি করে ওঠে।
মসজিদের ভেতরে ছড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়ান পাথর-বিছানো উঠোনে, কেউ আবার থাকেন নীরবে প্রার্থনায় মগ্ন।
একদল কারিগর আজও ধরে রেখেছেন সেই প্রাচীন শিল্পের ধারা, যা মসজিদের সৌন্দর্য ধরে রাখে। টাইলস শিল্পীরা সহকারীদের নিয়ে মাটি মেশান, নকশা আঁকেন, আর পুরোনো চুল্লিতে টাইলস পোড়ান। ভাঙা টাইলস একে একে বদলে ফেলেন নতুনগুলো দিয়ে।


Comments