বিবিসি প্রধানের পদত্যাগের ঘোষণা
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) মহাপরিচালক টিম ডেভি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
তার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমটির বার্তাবিভাগের প্রধান (হেড অব নিউজ) ডেবোরা টারনেসও পদত্যাগ করেছেন। আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
অভিযোগ ছিল—বিবিসির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্রভিত্তিক অনুষ্ঠান 'প্যানোরামা'র একটি পর্বে ট্রাম্পের ভাষণ এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এই অভিযোগের জেরেই তারা পদত্যাগ করেছেন বলে বিবিসি নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বিবিসির একটি অভ্যন্তরীণ মেমো ফাঁস করা হয়। বিবিসির কর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো সেই বার্তায় ছিল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দ্য টেলিগ্রাফ ওই প্রতিবেদনে জানায়— বিবিসি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বক্তৃতার অংশ বিকৃত করে এমনভাবে প্রচার করেছে, যাতে মনে হচ্ছিল তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলে হামলায় উসকানি দিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে প্রচারিত বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে এমনভাবে উদ্ধৃত করা হয়, যেন তিনি সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে 'প্রাণপণ লড়াইয়ে নামবেন।'
কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি সমর্থকদের সঙ্গে হেঁটে যাবেন, যেন শান্তিপূর্ণ ও দেশপ্রেমের চেতনায় নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন।
মূলত টেলিগ্রামের প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই টিম ডেভি ও ডেবোরা টারনেস চাপের মুখে পড়েন। ফাঁস হওয়া মেমোটি লিখেছিলেন মাইকেল প্রেসকট। তিনি বিবিসির সম্পাদকীয় মানদণ্ড বজায় রাখার কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন। জুনে তিনি ওই পদ ছেড়ে দেন।
'ট্রাম্প: অ্যা সেকেন্ড চান্স?' নামের তথ্যচিত্রের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রেসকট। গত বছর ওই তথ্যচিত্রটি বিবিসিতে প্রচারিত হয়। বিবিসির জন্য এটি নির্মাণ করেছিল অক্টোবর ফিল্মস লিমিটেড নামের একটি নিরপেক্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ রাজনৈতিক নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন, এসব পদত্যাগে পরিবর্তনের পথ খুলে যাবে। অন্যদিকে, ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিবিসির মহাপরিচালক এবং নিউজ বিভাগের প্রধান—দুজনেরই একই দিনে পদত্যাগ করা নজিরবিহীন ঘটনা।
রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিম ডেভি বলেন, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সবসময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। যদিও এটি আমার সিদ্ধান্তের একমাত্র কারণ নয়, তবে বিবিসি নিউজকে ঘিরে চলমান বিতর্ক নিঃসন্দেহে আমার সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে।
'মোটের ওপর বিবিসি ভালো কাজ করছে, তবে কিছু ভুলও হয়েছে, আর মহাপরিচালক হিসেবে এর পূর্ণ দায় আমাকে নিতে হবে।'
রোববার রাতে এক বিবৃতিতে ডেবোরা টারনেস বলেন, প্যানোরামা সংক্রান্ত বিতর্ক এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা এখন বিবিসির জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। তিনি আরও যোগ করেন, 'এর দায় শেষ পর্যন্ত আমারই।'
দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশিত অভ্যন্তরীণ মেমোতে আরও বলা হয়, বিবিসি আরবির ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের পক্ষপাতদুষ্ট কাভারেজের বিষয়েও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রোববার যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও গণমাধ্যমমন্ত্রী লিসা নন্দী বলেন,প্যানোরামা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি 'বেশ গুরুতর'।
তিনি আরও বলেন, বিবিসির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে 'অত্যন্ত গুরুতর বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে'। এর মধ্যে 'সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, ওই সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে পক্ষপাতের নজির দেখা যায়।'


Comments