আবুধাবিতে ‘বিশ্বের প্রথম নেট-জিরো এনার্জি’ মসজিদ

কাদামাটি ও সৌর প্রযুক্তির মেলবন্ধনে নির্মিত ‘বিশ্বের প্রথম নেট-জিরো এনার্জি’ মসজিদ। ছবি: অ্যারাপ

কাদামাটি দিয়ে দেয়াল নির্মাণের প্রাচীন পদ্ধতি আর আধুনিক সৌর প্রযুক্তির মেলবন্ধনের ধারণার ওপর ভিত্তি করে আবুধাবিতে নির্মিত হলো 'বিশ্বের' প্রথম নেট-জিরো এনার্জি মসজিদ। আবুধাবির কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পরিকল্পিত শহর মাসদার সিটিতে এই মসজিদের অবস্থান। ব্রিটিশ কোম্পানি অ্যারাপ এর নকশা করেছে। 

এই মসজিদে প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস হবে সোলার প্যানেল। এতে বিশেষ শীতলীকরণ পদ্ধতি ও সাশ্রয়ী নকশা ব্যবহার বিদ্যুৎ খরচ এক-তৃতীয়াংশ এবং পানির ব্যবহার অর্ধেকের বেশি কমাবে।

মসজিদের নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল কিবলা ঠিক রাখা। কেননা কিবলা সবসময় কাবামুখী হয়ে থাকে। প্রকৌশলী দল এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিকল্প উপায় বের করে। এক্ষেত্রে বিশেষ ছাউনি, তির্যক কাঠামোর জানালা, দেয়ালে ইনসুলেশন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 
 
আর বাইরের দিক শীতল রাখার জন্য বিশেষ উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। সহজভাবে বলতে গেলে, সূর্যের তাপ থেকে ভবনকে রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।

মাসদার সিটির ডিজাইন ম্যানেজমেন্ট টিমের সিনিয়র বিশ্লেষক আল জাবি বলেন, পশ্চিম দিকটায় সবচেয়ে বেশি সূর্যের তাপ পড়ে। সে কারণে দুই স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। এমন নির্মাণ কৌশল সংযুক্ত আরব আমিরাতে এর আগে কখনো ব্যবহৃত হয়নি।

‘নেট-জিরো এনার্জি’ মসজিদ। ছবি: অ্যারাপ

 
মসজিদে একসঙ্গে এক হাজার ৩০০ মুসল্লি জড়ো হতে পারবেন। এতে রয়েছে স্মার্ট সেন্সর, যা মুসল্লিদের উপস্থিতি, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপ করবে এবং শুধু প্রয়োজন হলেই ফ্যান ও এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবস্থা চালু করবে।

আল জাবি আশা করেন, এই প্রকল্পটি ভবিষ্যতে নির্মিতব্য মসজিদগুলোর জন্য একটি 'নকশার খসড়া' হিসেবে কাজ করতে পারে— এবং সম্ভবত আবুধাবি ও এর বাইরে অন্যান্য ভবনের জন্যও। 
 
পরিবেশবান্ধব মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিস্তৃত চিন্তাভাবনা করতে হয়। আবুধাবির খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খালেদ আলাওয়াদি বলেন, যদি আমরা মসজিদের জন্য আরও প্যাসিভ ডিজাইন সমাধান ভাবতে পারি—যেমন শীতকালে বেশি প্রাকৃতিক আলো এবং ক্রস ভেন্টিলেশন, তাহলে তা অবশ্যই লক্ষ্যনীয় হবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে পবিত্র স্থাপনাগুলো নিয়ে নতুনভাবে ভাবা হচ্ছে। নেট-জিরো এনার্জি মসজিদ এই ভাবনারই অংশ। 

মাসদার সিটির প্রথম মসজিদ এস্তিদামা গত বছর উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্ভাবনী ও টেকসই স্থাপত্যের নিখুঁত সমন্বয়। এতে বসানো হয়েছে সৌর প্যানেল। পানি পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে। এসব ব্যবহার করে মূলত শক্তি খরচ কমানো হয়েছে। মসজিদটি লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে—টেকসই ভবনের ক্ষেত্রে যা সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান।
 
এই মসজিদের নকশা নিয়ে কাজ করা এক্স আর্কিটেক্টসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ ইসমাইল বলেন, আমরা এমন একটি মসজিদ তৈরি করতে চেয়েছিলাম, যা ইসলামি স্থাপত্য ও নীতি থেকে অনুপ্রাণিত এবং একই সময়ে এটি আজকের সমাজ ও সংস্কৃতি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং নির্মাণ পদ্ধতিকে প্রতিফলিত করে।

এস্তিদামা মসজিদ। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার) থেকে নেওয়া

তিনি বলেন, মাসদার সিটির পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সহজ করেছে। এটি একটি স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে কাজ করেছে, যা আরও ক্লায়েন্টকে সবুজ মান অনুসরণের দিকে উৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, 'সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে, কারণ মানুষ এখন এর সুবিধা দেখতে শুরু করেছে।'

নির্মাতারা বলেন, এস্তিদামা মসজিদ ইসলামিক জ্যামিতিক নকশা মেনে তৈরি, যা প্রাকৃতিক আলো এবং ছায়ার ব্যবহারের মাধ্যমে ভবনের শক্তি খরচ কমায়। 

২০২৩ সালে সাদিয়াত কালচারাল ডিস্ট্রিক্টে উদ্বোধন হওয়া অ্যাব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউসের ভবনগুলোতে মিনিমালিস্ট জ্যামিতিক নকশা ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিভিন্ন ধর্মের সাদৃশ্য ও স্বতন্ত্রতাকে তুলে ধরে।

আলাওয়াদি বলেন, গত দশ বছরে মসজিদ নকশার ধরন অনেক বদলে গেছে। মূলত মসজিদে মিনার, গম্বুজ আর মেহরাব থাকলেই এর মূল কাঠামো সম্পূর্ণ হয়। এসব ছাড়া নকশা যেভাবেই হোক, তা সহজেই বদলানো বা মানিয়ে নেওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

7h ago