ইন্দোনেশিয়ার হাতেও ‘গণহত্যার’ দাগ, এখনো ন্যায়বিচার খুঁজছে পূর্ব তিমুর

১৯৭৫ সালের ৭ ডিসেম্বর পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার আক্রমণ। ছবি: তিমুর আর্কাইভস

পূর্ব তিমুরের লসপালোসে শান্ত এক দুপুর। মুরগি ডাকছে, রেডিওতে বাজছে পর্তুগিজ রেগেটন সংগীত। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী তিমুর সাগরে অবস্থিত ১৪ লাখ মানুষের দেশের ছোট্ট শহর এই লসপালোস। 

এই শহরেরই বাসিন্দা বার্তা দোস সান্তোস। নিজের ঘরে বসে তিনি বিভীষিকাময় এক দিনের কথা বলছিলেন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরের সেই দিনে ইন্দোনেশীয় সেনারা নির্মমভাবে লসপালোসের ওপর হামলে পড়ে।

রাজধানী দিলি থেকে প্রায় ২১০ কিমি (১৩০ মাইল) দূরে অবস্থিত এই গ্রামীণ শহরে আক্রমণের কথা স্মরণ করে দোস সান্তোস আল জাজিরাকে বলেন, 'তারা প্যারাশুটে নামল এবং গুলি চালাতে শুরু করল।'

দোস সান্তোস তখন নয় বছরের শিশু। কাছের একটি পাহাড়ে লুকানোর চেষ্টায় তিনি অন্যদের সঙ্গেই দৌড়াচ্ছিলেন। আগ্রাসী ইন্দোনেশিয়ান বাহিনী তাদের খুঁজে বের করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল—বিশেষ করে নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের।

চলতি বছরের ২০ মে পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা হাতে এক শিশু। ছবি: এএফপি

'সেনারা জঙ্গলে আমাদের খুঁজে বের করল এবং ধরে ফেলল।' তিনি জানান, ইন্দোনেশীয় সেনারা পরে তাকে ধর্ষণ করে। সেসময় তার বয়স ছিল নয়। তার মা হেলেনাকেও টেনে-হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যৌন দাসত্বে বাধ্য করা হয়েছিল।

লসপালোসে দোস সান্তোস, তার মা-সহ আরও অনেকেই ইন্দোনেশীয় সেনাদের চালানো নির্মম অপরাধের শিকার। পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার ২৪ বছরের দখলদারত্বের শুরুটা ছিল এমন। 

এরপর শুরু হয় একটি রক্তক্ষয়ী সামরিক শাসন, যে সময় সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হতো, জোরপূর্বক ক্ষুধার্ত রাখা হতো, যৌন সহিংসতা চালানো হতো এবং যারা ইন্দোনেশিয়ার অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন, তাদের নির্যাতন, কারাবাস ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো।

বার্তা দোস সান্তোস ও তার মা হেলেনা। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিরোধ–জিমেনেসের গল্প

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পূর্ব তিমুর প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। 

১৯৭৪ সালে লিসবনে বামপন্থী শক্তির সমর্থনে ঘটে যাওয়া এক অভ্যুত্থানে পর্তুগাল তাদের উপনিবেশগুলো থেকে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। 

ফলস্বরূপ ১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর পূর্ব তিমুর স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তবে সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য স্বাধীনতার এই উদযাপন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
 
কমিউনিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতার ঘোষণার প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশটিতে আক্রমণ করে। ৭ ডিসেম্বর জাকার্তার বাহিনী দ্রুত পূর্ব তিমুরের রাজধানী দিলি দখল করে নেয়।

পূর্ব তিমুরের কিছু উদীয়মান তরুণ নেতা আক্রমণের সময় বিদেশে পালাতে সক্ষম হন এবং বছরের পর বছর ধরে দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করতে থাকেন। তারা দেশটির বাসিন্দাদের দুর্দশার ওপর আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধরে রাখেন। 

পালানো এই নেতাদের মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তাও ছিলেন। অনেকে পাহাড়ি জঙ্গলে লুকিয়ে কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র প্রতিরোধের পথও বেছে নেন।
 
এর মধ্যে একজন ছিলেন মেজর-জেনারেল আমেরিকো জিমেনেস, যিনি সাবিকা বেসি কুলিত নামেও পরিচিত, যার অর্থ 'ধাতব বর্ম'।

জিমেনেস এখন দিলির প্রান্তিক অঞ্চলে সাবেক সেনা সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত বাড়িতে থাকেন। পূর্ব তিমুরে জাতীয় নায়ক হিসেবে বিবেচিত এই ব্যক্তিকে জনসমক্ষে খুব কম দেখা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক কর্মকাণ্ডের পর এখন তিনি পরিবারকে সময় দিচ্ছেন।

মেজর-জেনারেল আমেরিকো জিমেনেস। ছবি: সংগৃহীত

৭২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি স্বাধীনতার আগে পূর্ব তিমুরে পর্তুগিজদের পরিচালিত সেনাবাহিনীর অংশ ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার আক্রমণের পর তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন এবং প্রায় ২৫ বছর জঙ্গলে থেকে জাতীয় মুক্তি বাহিনীর নেতা হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান।

পাহাড়ি ও জঙ্গলভিত্তিক অঞ্চলে বাইরের কোনো সহায়তা ছিল না। অপরদিকে ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কেবল প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়াটাই একটি বড় সংগ্রাম ছিল বলে জানান আমেরিকো জিমেনেস।
 
যুদ্ধের সময় নিহত ইন্দোনেশিয়ান সেনাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হতো জাতীয় মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের। জিমেনেস বলেন, 'লড়াই চালিয়ে যেতে আমাদের নিজেদেরই অস্ত্র জোগাড় করতে হতো, এমনকি খাবারও।'

'আপনার যদি ১০ বা ২০টি অস্ত্র থাকে, তাহলে আপনাকে ভাবতে হবে কীভাবে ওই অস্ত্র ব্যবহার করে আরও অস্ত্র সংগ্রহ করা যায়,' বলেন তিনি। 

কীভাবে তার প্লাটুনের যোদ্ধারা শুধু অস্ত্র নয়, নিহত ইন্দোনেশীয় সেনাদের কাছ থেকে 'বুট, খাবার, গোলাবারুদ ও পোশাকও' সংগ্রহ করতেন, সেসব ঘটনারও বর্ণনা দেন তিনি।

'যখন কোনো যোদ্ধা গুলি চালাতেন, তখন তিনি শত্রুকে হত্যা করতেন। গুলি চালানো যোদ্ধার পেছনেই দাঁড়িয়ে থাকতেন আরেকজন। গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দৌড়ে গিয়ে শত্রুর সরঞ্জাম সংগ্রহ করে নিতেন।' 

জিমেনেসের 'ধাতব বর্ম' নামটি দেওয়া হয়েছিল ইন্দোনেশীয় বাহিনীর সঙ্গে বহু লড়াইয়েও বেঁচে থাকতে পারার কারণে।

তিনি আল জাজিরাকে জানান, আশির দশক তাদের জন্য বিশেষভাবে কঠিন ছিল। তখন বৈশ্বিক গণমাধ্যমের কোনো মনোযোগ ছিল না এবং পূর্ব তিমুর বাইরের বিশ্বের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি।

তিনি এবং তার যোদ্ধারা বছরে মাত্র একটি চিঠি পেতেন স্বাধীন পূর্ব তিমুরের বিপ্লবী ফ্রন্টের নেতাদের কাছ থেকে। এই ফ্রন্টেরই সশস্ত্র যোদ্ধা ছিলেন জাতীয় মুক্তি বাহিনী সদস্যরা।

আশির দশকে পূর্ব তিমুরের সাধারণ জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে জোরপূর্বক স্থানান্তরিত এবং ক্ষুধার্ত রাখা হয়। আনুমানিক দুই লাখ মানুষ মারা যায়, যা দেশটির তখনকার জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এটি ব্যাপকভাবে গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত।

পাহাড়ে থেকেও জিমেনেস জানতেন, কীভাবে সাধারণ মানুষের ওপর ইন্দোনেশীয় বাহিনী নির্যাতন চালাচ্ছে—বিশেষ করে নারীদের ওপর। এসব খবর ভয় না বাড়িয়ে বরং তাদের আরও লড়াই করতে উৎসাহ জোগাত। 

প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স

গ্রামের মানুষও প্রতিরোধে পাশে দাঁড়াত—তারা খাবার দিত, লুকিয়ে রাখত এবং ইন্দোনেশীয় সৈন্যদের গতিবিধির খবর দিত।

জিমেনেস বলেন, 'নারীদের ওপর অত্যাচারের কারণেই আরও বেশি গ্রামবাসী আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল।'

হত্যা-নির্যাতন চললেও তিমুরের মানুষ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আশ্রয়, খাবার এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পিছপা হয়নি।

দীর্ঘ দুই দশকের দখলদারত্ব, সশস্ত্র প্রতিরোধ, বিদেশে থাকা সমর্থকদের প্রচার এবং আন্তর্জাতিক চাপের ফলে অবশেষে ইন্দোনেশিয়া গণভোটে রাজি হয়।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ভোট হয়। অনেক ভয়ভীতি ও সহিংসতার মধ্যেও ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়। ২০০২ সালে পূর্ব তিমুর স্বাধীন দেশ হিসেবে পথচলা শুরু করে। তবুও ইন্দোনেশিয়ার দখলদারত্বের ক্ষত আজও তিমুরের সমাজে রয়ে গেছে।

ক্রিস্টিনা সিতির গল্প

লসপালোসে বড় হওয়া ক্রিস্টিনা সিতির শৈশব ছিল নিঃসন্দেহে কঠিন এবং খুবই একাকী। তার জন্ম-পরিচয়ের কারণেও অন্য শিশুরা তাকে অহরহ কটূক্তি করত। অনেক পূর্ণবয়স্করাও তাকে এড়িয়ে চলত।

'ওরা আমাকে অবৈধ সন্তান বলত, ইন্দোনেশীয় সন্তানের তকমা দিত, বলত আমার কোনো বাবা নেই। কিছু প্রতিবেশী, এমনকি আত্মীয়রাও, তাদের সন্তানদের আমার সঙ্গে মিশতে দিতে চাইত না,' বলেন সিতি।

সিতির বাবা ছিলেন ইন্দোনেশীয় সেনা। প্রতিরোধে যোগ দেওয়া ভাইদের নিরাপদে রাখতে তার মা বাধ্য হয়েছিলেন সেই সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে এবং পরে বিয়ে করতে।

৪৩ বছর বয়সী সিতি আল জাজিরাকে বলেন, 'পরিবারকে রক্ষা করার জন্যই আমার মাকে এক ইন্দোনেশীয় সেনা কমান্ডারকে বিয়ে করতে হয়েছিল।'

'আমি যখন মাত্র দুই বছরের, বাবা পূর্ব তিমুর ছেড়ে ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে যান। এরপর তিনি আর কখনও ফিরে আসেননি, কোনো খোঁজও দেননি,' যোগ করেন তিনি।

পরে তার মা এক স্থানীয় তিমোরিজ পুরুষকে বিয়ে করেন। কিন্তু তাতেও সিতির জীবনের ভয়াবহতা শেষ হয়নি। তিনি জানান, মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে জন্ম নেওয়া তার সৎবোনকে মাত্র দুই সপ্তাহ বয়সেই জোর করে তুলে নিয়ে যায় ইন্দোনেশীয় সেনারা। পরে সেই নবজাতককে দত্তক দেওয়া হয় এক ইন্দোনেশীয় সেনা পরিবারের কাছে।

'দখলদারত্বের সময়ে আমার মা অসীম কষ্ট সহ্য করেছেন। তিনি খুব শক্ত ছিলেন, কিন্তু সেই ভয়াবহ সময়েরই এক শিকার,' বলেন সিতি।

'আমার মায়ের মতো আরও অনেক নারীকেই একই পরিণতি মেনে নিতে হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

১৯৯৯ সালে পূর্ব তিমুরের রাজধানী দিলিতে পরিচিত দুই নারীর পুনর্মিলন। ছবি: রয়টার্স

'তাদেরও আমার বয়সী, কারও আরও বড় বা ছোট সন্তান আছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এমন নারী আছেন, যারা বিভিন্নভাবে ইন্দোনেশীয় দখলদারদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন,' বলেন সিতি।

ইন্দোনেশীয় দখলের সময় কত নারী যৌন সহিংসতা ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায় না। আর যেসব ইন্দোনেশীয় সেনা ও কমান্ডার এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিলেন, তাদের খুব কমজনকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

একইভাবে বিচারের বাইরে রয়ে গেছেন তিমোরিজ সহযোগীরাও—যারা স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়ে নিজেদের মানুষদের ওপরই সন্ত্রাস চালিয়েছিল। ১৯৯৯ সালের গণভোটের পর এসব সহযোগীরা পশ্চিম তিমুরে পালিয়ে যান, আর দেশে রেখে যান ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।

কমিশন ফর রিসেপশন, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক হুগো ফার্নান্দেস বলেন, ১৯৯৯ সালে এসব সহযোগীদের তাণ্ডবের পর পূর্ব তিমুরকে যেন 'শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছিল'।

'দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মানুষ তখনও নিহতদের জন্য কাঁদছিল। অসংখ্য বর্বরতার ঘটনা ঘটেছিল,' বলেন তিনি।

২০০৫ সালে কমিশন ফর রিসেপশন, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন দখলদারত্বের সময়ে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তারিত তুলে ধরে আড়াই হাজার পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়া অনেকের জন্য একধরনের মানসিক স্বস্তি এনে দিলেও ফার্নান্দেস আল জাজিরাকে বলেন, দীর্ঘ দখলদারত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনিষ্পন্ন বিষয় হলো অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা।

পূর্ব তিমুরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা ও প্রধানমন্ত্রী জানানা গুসমাও যেখানে 'রিকনসিলিয়েশন বা মিটমাট' নিয়ে কথা বলতে বেশি আগ্রহী, সেখানে অনেকেই এখনো 'ন্যায়বিচারে'র দাবি জানিয়ে চলেছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, পূর্ব তিমুরে অপরাধ করা ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্দোনেশিয়ার ভেতরেও যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং বহু অপরাধীরই ইন্দোনেশিয়ার কাছে 'জাতীয় বীর' বিবেচিত হওয়ার কারণে আটকে যায়।

পূর্ব তিমুরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে ইন্দোনেশিয়া ২০০১ সালে যে 'অ্যাড-হক' আদালত গঠন করেছিল, সেখানে বিচার হওয়া ১৮ জনের মধ্যে কেবল একজন দোষী সাব্যস্ত হন। তিনি ইন্দোনেশিয়া-সমর্থিত তিমোরিজ মিলিশিয়া নেতা ইউরিকো গুতেরেস।
 
তবে ন্যায়বিচারের দাবি এখন ইন্দোনেশিয়ার সরকারের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত পৌঁছেছে—এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো পর্যন্ত। পূর্ব তিমুরে দায়িত্ব পালন করা কোপাসাস বাহিনীর সাবেক এই কমান্ডারের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বহু বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে। 

১৯৮৩ সালের এক গণহত্যাসহ সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আসছেন সুবিয়ান্তো। সেই হত্যাকাণ্ডে দুই শতাধিক পুরুষ নিহত হওয়ায় পূর্ব তিমুরের সেই এলাকাকে পরে 'বিধবাদের উপত্যকা' বলা হতো।

ফার্নান্দেস আল জাজিরাকে বলেন, পূর্বের সহিংস ইতিহাস সত্ত্বেও বর্তমান পূর্ব তিমুর সরকার ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, 'ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক—এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।'

ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুরের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। সম্প্রতি জাকার্তা দিলির দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানে অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকেও সমর্থন দিয়েছে।

গণকবর থেকে মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করছেন পূর্ব তিমুরের ফরেনসিক পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

ন্যায়বিচার

এখনও ইন্দোনেশিয়ার দখলদারত্বের ইতিহাস যাদের মনে আছে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার নিয়ে মতভেদ স্পষ্ট। ক্রিস্টিনা সিতি আল জাজিরাকে বলেন, দখলদারত্বের সময়ে যা ঘটেছিল তার জন্য তিনি কোনো ন্যায়বিচার চান না।

তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের সঙ্গে যা হয়েছিল, তা যুদ্ধের বিশাল দুঃখ-কষ্টের এক ছোট অংশ মাত্র। আমার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ভয়াবহ কষ্ট সহ্য করেছে।

তিনি আরও বলেন, 'কেউ যুদ্ধেই মারা গেছেন, কেউ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন, কারও সন্তানকে ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আর কেউ কোনো খোঁজ-খবর ছাড়াই হারিয়ে গেছেন।'

মেজর জেনারেল জিমেনেসের মতে, ন্যায়বিচার শুরু হওয়া উচিত দেশের ভেতর থেকেই। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, দেশ যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে তিনি গভীরভাবে হতাশ। জনগণের সম্পদ লুটে নেওয়া রাজনীতিবিদদের তিনি কঠোর ভাষায় নিন্দা করেন।

'যারা জঙ্গলে লড়াই করেছে, শুধু তারাই একে অন্যের অনুভূতি বোঝে,' বলেন জিমেনেস।
 
ইন্দোনেশীয় সেনাদের হাতে খুব ছোট বয়সেই অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ভোগান্তি সইতে হলেও বার্তা দোস সান্তোস বলেন, তার কাছে ন্যায়বিচার মানে হলো 'মনের ক্ষত সারানো ও রিকনসিলিয়েশন'।

দোস সান্তোস বলেন, 'আমি বহু আগেই আমার যন্ত্রণা, রাগ, ক্ষোভ আর তিক্ততা ছেড়ে দিয়েছি। স্বাধীনতার আনন্দ আমার সব ক্ষত, রাগ আর তিক্ততার চেয়েও অনেক মূল্যবান।'

Comments

The Daily Star  | English

NCP leader Jannat sought police protection a month before death

Repeated threats and harassment led her to file complaint in November

29m ago