ইন্দোনেশিয়ায় বিনামূল্যের সরকারি খাবার খেয়ে হাজারো শিশু বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত

ইন্দোনেশিয়ার স্কুলে ফ্রি সরকারি খাবার খাচ্ছে শিশুরা। ছবি: এএফপি
ইন্দোনেশিয়ার স্কুলে ফ্রি সরকারি খাবার খাচ্ছে শিশুরা। ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ায় সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের খাবার খেয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক হাজার তিনশ'রও বেশি শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এই ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়েছে এবং সরকারের এই উদ্যোগ অবিলম্বে স্থগিত করার দাবি উঠেছে।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

গত সপ্তাহে জাভা দ্বীপের ওয়েস্ট বানডুং জেলায় কাবারে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি শিশু স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ভর্তি হয়। তবে সার্বিকভাবে অসুস্থের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। 

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, অসুস্থ শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

ইন্দোনেশীয় শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা দূর করতে প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো সরকারি উদ্যোগে শিশুদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার এই উদ্যোগ হাতে নেন।

শুরুতে এই উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসা পেলেও সাম্প্রতিক এই ঘটনার পর বেশ কয়েকটি লঙ্গরখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

৫০ বছর বয়সী আমিনাহ'র সাত বছর বয়সী নাতি বিনামূল্যের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, 'এই প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করে তার পরিবর্তে আর্থিক সহায়তা দেওয়া উচিৎ।'

'আমি চাই বাচ্চারা বাসা থেকেই তাদের দুপুরের খাবার নিয়ে যাক', যোগ করেন তিনি।

ফ্রি খাবার খেয়ে অসুস্থ শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। ছবি: এএফপি
ফ্রি খাবার খেয়ে অসুস্থ শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। ছবি: এএফপি

কিছুদিন আগেই প্রাবোয়োর সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভে অংশ নেয় দেশটির সাধারণ জনগণ। মূলত, ইন্দোনেশিয়াজুড়ে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রতিবাদেই ওই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। তারপর নতুন এই সমস্যায় আরও বিপদে পড়েছে প্রাবোয়ো সরকার—এমনই মত দেন বিশ্লেষকরা।

দেশটির ২০ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

নয় মাস প্রকল্পটি চালু থাকার পর দেখা গেছে, হাজারো মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। যার ফলে বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা এই লাখো ডলারের প্রকল্প বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

এএফপির সাংবাদিক ওয়েস্ট বানডুং জেলায় সরেজমিনে পরিদর্শনে যেয়ে দেখেন, স্থানীয় সরকার খাবারে বিষক্রিয়া আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে একটি সাময়িক স্বাস্থ্য ক্লিনিক চালু করেছে। সেখানে অক্সিজেন ট্যাংকের সঙ্গে শিশুদের যুক্ত করে রাখা হয়েছে। তাদের বেদনার্ত, করুণ চিৎকারে পুরো পরিবেশ গুমট হয়ে আছে।

উদ্যোগটির দেখভাল করছে সরকারি সংস্থা জাতীয় পুষ্টি এজেন্সি (বিজিএন)।

সংস্থাটি এর আগে দাবি করে, গত জানুয়ারিতে এই উদ্যোগ শুরুর পর সেপ্টেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত মাত্র ৭০ বিষক্রিয়ায় ঘটনা ঘটেছে। 

তবে বুধবার হালনাগাদ তথ্যে সংস্থাটি স্বীকার করে, কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ছয় হাজার ৪০০ জনেরও বেশি শিশু বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার  অলাভজনক প্রতিষ্ঠান 'সেন্টার ফর ইন্দোনেশিয়াজ স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভস' এর প্রতিষ্ঠাতা দিয়াহ সাত্যানি সামিনারসিহ বলেন, 'এটা শুধুই একটি আনুষ্ঠানিক সংখ্যা। প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে, কারণ সরকার এখনো জনসম্মুখে রিপোর্টিং ড্যাশবোর্ড প্রকাশ করেনি।'

তিনি মত দেন, এই সমস্যার অন্যতম কারণ প্রকল্পের লাগামহীন সম্প্রসারণ। 

প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটির বেশি ইন্দোনেশীয় একবেলা ফ্রি খাবার পাচ্ছেন। ছবি: এএফপি
প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটির বেশি ইন্দোনেশীয় একবেলা ফ্রি খাবার পাচ্ছেন। ছবি: এএফপি

শুরুতে সরকার ২০২৯ সাল নাগাদ ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে প্রতিদিন বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। এর মধ্যে শিক্ষার্থী, গর্ভবতী ও সদ্য সন্তানের জন্ম দেওয়া মায়েদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল। তবে ইতোমধ্যে এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে।

পুষ্টি সংস্থা এপ্রিলে এক হাজার লঙ্গরখানার মাইলফলকে পৌঁছানোর পর অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে আরও অনেক লঙ্গরখানা চালু করে। যার ফলে এই সংখ্যা সেপ্টেম্বর নাগাদ নয় হাজার ৬০০তে পৌঁছায়।

শিগগির ৩০ লাখ থেকে বেড়ে ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষের কাছে এই খাবার পৌঁছাতে শুরু করে।

বিষয়টি নিয়ে পুষ্টি সংস্থা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। 

পুষ্টি সংস্থার চেয়ারম্যান দাদন হিন্দায়ন গত রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, বিষক্রিয়ার বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে নতুন লঙ্গরখানাগুলোতে। সেগুলোতে অভিজ্ঞ রাঁধুনি বা পাচকের সংখ্যা কম। 

তিনি আরও জানান, রান্নায় ব্যবহৃত উপকরণ, পানি ও রান্নার প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত মানদণ্ড মেনে না চলায় এসব ঘটনা ঘটছে। 

প্রাবোয়ো প্রশাসন প্রত্যেকের খাবারের জন্য ৬২ সেন্ট বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২৫ সালের জন্য পরিমাণটি ৭১ ট্রিলিয়ন রুপিয়াহ (চার দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

সোমবার প্রাবোয়ো দাবি করেন, বিষক্রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা মোট খাবারের তুলনায় খুবই কম।

তিনি জানান, এখন থেকে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সব লঙ্গরখানা খাবার বিতরণের আগে পরীক্ষা করবে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আগেই এই প্রকল্প স্থগিত করা উচিৎ।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s janaza held

The namaz-e-janaza of BNP Chairperson Khaleda Zia was held at the South Plaza of the Jatiya Sangsad Bhaban today

6h ago