জাপানে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে আহত ৩০, সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার
জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আজ মঙ্গলবার জানিয়েছে। ভূমিকম্পে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তীব্র শীতের মধ্যে বহু মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন।
বার্তাসংস্থা এএফপির খবরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
জাপান আবহাওয়া সংস্থা জানায়, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫, এর আগে ৭ দশমিক ৬ বলা হয়েছিল। সংস্থাটি আরও সতর্ক করে বলেছে, আগামী কয়েক দিনে একই রকম বা আরও বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি জানান, আওমোরি অঞ্চলের উপকূলে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এতে সাগরে সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ সৃষ্টি হয়েছিল।
ফায়ার অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, হোক্কাইডো দ্বীপে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাস্তায় বেশ কয়েকটি বড় ফাটল তৈরি হয়েছে এবং অন্তত একটি গাড়ি গর্তে পড়ে আছে। ভাঙা জানালার কাচ রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। সরকারি মুখপাত্র মিনোরু কিহারা মঙ্গলবার জানান, একটি বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এক এএফপি প্রতিবেদক জানান, হোক্কাইডোতে প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে মাটিতে তীব্র কাঁপন অনুভূত হয়, এ সময় বাসিন্দাদের স্মার্টফোনের অ্যালার্ম বেজে ওঠে।
হোনশু দ্বীপের আওমোরি অঞ্চলের এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, এ ধরনের কাঁপুনি আমরা আগে কখনও অনুভব করিনি। এটি হয়তো ২০ সেকেন্ডের মতো স্থায়ী ছিল।
জরুরি সেবা সংস্থাগুলো জানায়, ভূমিকম্পের পর প্রায় ২৮ হাজার মানুষকে বাড়িঘর ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। গণমাধ্যম জানায়, কিছু অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র এরইমধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে।
কিয়োডো নিউজ জানায়, প্রচণ্ড ঠান্ডায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি থাকলেও ভূমিকম্পের পরপরই আমোরি অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার ৭০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না।
তবে মঙ্গলবার সকালে বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনা হয়। ইউটিলিটি কর্তৃপক্ষ জানায়, ৪০টিরও কম বাড়িতে তখনো বিদ্যুৎ ছিল না।
প্রথমে তিন মিটার পর্যন্ত সুনামির সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল। হাজারো বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ৭০ সেন্টিমিটার। কয়েক ঘণ্টা পরে সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়।
কিছু এলাকায় বুলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়, যেন প্রকৌশলীরা রেললাইনের ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করতে পারেন।
তোহোকু ইলেকট্রিক পাওয়ার জানায়, আওমোরির হিগাশিদোরি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা পাশের মিয়াগির ওনাগাওয়া কেন্দ্র—কোনোটিতেই কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি।
তাকাইচি মঙ্গলবার সকালে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহ জেএমএ বা স্থানীয় সরকারের দেওয়া তথ্য নিয়মিত শুনুন। ঘরের আসবাবপত্র ঠিকভাবে আটকানো আছে কি না দেখে নিন…এবং কাঁপুনি অনুভব করলে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখুন।
২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে যে সুনামি আঘাত হানে, তাতে ১৮ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত বা নিখোঁজ হন এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে।
জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের রিং অব ফায়ারের পশ্চিম প্রান্তে চারটি বড় টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি।


Comments