বন্ডাই বিচের বন্দুক হামলার জেরে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন
অস্ট্রেলিয়ার জনবহুল নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে বন্দুকের মালিকানা নিয়ে তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই।
অর্থাৎ, পুলিশকে যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তাত্ত্বিকভাবে 'অসীম' সংখ্যক বন্দুকের মালিক হতে পারেন ওই রাজ্যের যেকোনো বাসিন্দা।
তবে গত সপ্তাহে রাজ্যের রাজধানী সিডনির বন্ডাই বিচে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনার পর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
আজ সোমবার নতুন এবং আরও কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে ভোটের জন্য রাজ্যের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইন পাস হলে বন্দুকের মালিকানার ওপর বড় ধরনের বিধিনিষেধ চালু হবে। পাশাপাশি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠনের প্রতীক প্রদর্শন ও এসব চিহ্ন ব্যবহার করে বিক্ষোভ নিষিদ্ধের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে এতে।
এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাজ্যের পার্লামেন্টে এই আইনের পক্ষে বিপক্ষে দুই দিন বিতর্কে অংশ নেবেন আইনপ্রণেতারা।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ চার এবং বিশেষ বিশেষ প্রেশার ক্ষেত্রে (যেমন কৃষক) ১০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা নিতে পারবেন।
১৯৯৬ সালের এক হামলায় ৩৫ জন নিহতের পর অস্ট্রেলিয়ায় কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন চালু হয়।
তবে বন্ডাই বিচের ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে, ওই তথাকথিত 'কঠোর' আইনেও অনেক ফাঁক রয়েছে।
পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র নিবন্ধন তালিকা থেকে জানা গেছে, নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে অন্তত ৭০ জন মানুষ আছেন, যাদের নামে ১০০টিরও বেশি বন্দুক নিবন্ধন করা আছে।
বন্ডাই বিচের হামলায় অংশগ্রহণের অভিযোগে অভিযুক্ত সাজিদ আকরাম (৫০) পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি ছয়টি বন্দুকের বৈধ মালিক ছিলেন। তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরামের বিরুদ্ধে ৫৯টি ভিন্ন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের মধ্যে হত্যা ও সন্ত্রাস অন্তর্ভুক্ত আছে।
অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, ওই দুই অভিযুক্ত বন্দুকধারী বেশ কয়েক মাস আগে থেকে হামলার পরিকল্পনা শুরু করেন।
গুলি শুরু করার আগে তারা জনতার দিকে হাতবোমা ছুঁড়ে মেরেছিলেন। কিন্তু কোনো কারণে সেই বোমাগুলো বিস্ফোরিত হয়নি।
পুলিশের প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছবিতে বাবা-ছেলেকে নিউ সাউথ ওয়েলসের দূরবর্তী পল্লী অঞ্চলে আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে।
১৪ ডিসেম্বর বন্ডাই বিচে ইহুদিদের হানুক্কা পরব উদযাপনের সময় বন্দুক হামলায় ১৫ জন নিহত ও আরও ১০-২০ জন আহত হন।
আহততের মধ্যে ১৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তবে তারা স্থিতিশীল আছেন বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
এই হামলায় অস্ট্রেলিয়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
পুলিশ সন্দেহভাজন দুই বন্দুকধারীর একজনের মোবাইলে অক্টোবরে ধারণ করা একটি ভিডিও খুঁজে পায়। এতে ইসলামিক স্টেটের একটি ছবির সামনে তাদের দুইজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। তারা ইংরেজিতে তাদের হামলার কারণ ব্যাখ্যা করেন। এ সময় দুইজনই 'জায়নবাদিদের' নানা পদক্ষেপের নিন্দা করেন।
এসব কারণে এই হামলাকে 'ইহুদিবিদ্বেষ' আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে, প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বেশ চাপের মুখে পড়েছেন। তার প্রতিপক্ষরা বলছেন, তার সরকার ক্রমবর্ধমান ইহুদিবিদ্বেষের ধারায় রাশ টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।
রোববার বন্ডাই বিচে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় আলবানিজের বিরুদ্ধে উপস্থিত দর্শকদের একটি অংশ দুয়োধ্বনি দেয়।
নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস মিনস সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ধরেই নিচ্ছেন, অনেকে পার্লামেন্টে এই আইনের বিপক্ষে যুক্তি দেবেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার এই আইন চালুর বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।

Comments