মাদুরোর জন্য পদত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে: ট্রাম্প
বেশ কিছুদিন ধরেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলাকে নিয়ে মেতে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন মার্কিন নিরাপত্তা কৌশলের ফর্মুলা মেনে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে ঘরের কাছে, 'দক্ষিণ গোলার্ধের' মাথাব্যথা নিকোলাস মাদুরোর পেছনেই ইদানিং বেশি সময় দিচ্ছেন মার্কিন নেতা।
ইদানিং পুতিন-জেলেনস্কি, হামাস, নেতানিয়াহু—এসব নাম ট্রাম্পের মুখে যতটা শোনা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি শোনা যাচ্ছে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের নাম। মাদুরোকে তিনি 'মাদক সম্রাট' বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার ট্রাম্প বলেছেন, মাদুরোর জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের মতো কাজ।
ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির তেল যাতে বিদেশে রপ্তানি না হয়, তা নিশ্চিতে একাধিক যুদ্ধজাহাজ বসিয়ে সমুদ্রসীমা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ওয়াশিংটন।
তবে ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় মিত্র মস্কো জানিয়েছে, তারা মাদুরোর সরকারের প্রতি 'পূর্ণ সমর্থন' অব্যাহত রাখবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন কারাকাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ও হুমকির মাত্রা বাড়িয়েছে।
মাদুরোকে চান না ট্রাম্প
গতকাল ফ্লোরিডায় নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন ট্রাম্প।
এ সময় এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোর উদ্দেশ্য কি ১২ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা মাদুরোকে উৎখাত করা? জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'এটা তার উপর নির্ভর করে। তিনি কি করতে চান। আমার মতে সেটা (পদত্যাগ) করাই তার জন্য বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে।'
এরপর ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, 'তবে তিনি যদি অন্য কিছু করতে চান—যদি কড়া পথে হাঁটেন, তাহলে এটাই হবে তার শেষবারের মতো কড়া পথে হাঁটা।'
মাদুরোর জবাব
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মাদুরো এই হুমকির জবাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'ট্রাম্পের জন্য ভালো হবে কারাকাসকে হুমকি না দিয়ে নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার দিকে নজর দেওয়া।'
সরকারি টিভিতে প্রচারিত ভাষণে মাদুরো বলেন, 'তিনি (ট্রাম্প) তার দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করলে তিনি নিজেও ভালো থাকবেন, তার দেশও ভালো থাকবে। তিনি শুধু নিজ দেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করলে গোটা বিশ্ব ভালো থাকবে।'
মাদুরোর পাশে মস্কো
ভেনেজুয়েলার উপকূলে 'সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নৌকার ওপর হামলা' ও দুইটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করার মতো মার্কিন উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছেন রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক ফোন কলে তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা রোববার এএফপিকে জানান, তৃতীয় একটি তেলের ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে মার্কিন নৌবাহিনী।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ফোন কলের বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে এই তথ্য জানানো হয়।
'ক্যারিবীয় সাগরে ওয়াশিংটনের উসকানিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে দুই মন্ত্রী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এতে ওই অঞ্চলে গুরুতর পরিণতি দেখা দিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক নৌচলাচল বিঘ্নিত হতে পারে', বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'বর্তমান প্রেক্ষাপটে, রাশিয়া আবারও ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা অব্যাহত রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেছে।'
সংকট ঘনীভূত
আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা ভেনেজুয়েলা সংকট নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশেষ বৈঠক করবে।
সেপ্টেম্বর থেকে নৌবাহিনীর মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার উপকূলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। তাদের দাবি, ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে মাদক পাচার রোধ করাই এসব সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য। তবে এই দাবির পেছনে কোনো প্রমাণ দেয়নি তারা।
এসব হামলায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ সামান্য জেলে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলা থেকে তেল বহনকারী জাহাজ চলাচলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
সে সময় ট্রাম্প দাবি করেন, তেল বিক্রি ও রপ্তানির অর্থ দিয়ে কারাকাস 'মাদক সন্ত্রাস, মানব পাচার, হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের' খরচ যোগাচ্ছে।
জবাবে কারাকাস ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে 'শাসক পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র' ও 'আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা' করার অভিযোগ এনেছে।


Comments