লিচু খেলে যেসব উপকার পাবেন

লিচুর উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

ফলের মৌসুম গ্রীষ্মকাল। অন্য ঋতুর তুলনায় গ্রীষ্মকালে ফল বেশি পাওয়া যায়। যেকোনো মৌসুমী ফল খাদ্যতালিকায় রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। গ্রীষ্মকালীন একটি রসালো ফল লিচু, যা সবারই খুব পছন্দের। মিষ্টি এই ফলটি খেতে পছন্দ করলেও লিচুর পুষ্টিগুণ কেমন এবং এটি কী পরিমাণ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো সেটা অনেকেই জানেন না।

লিচুর উপকারিতা এবং সতর্কতাসহ এ বিষয়ে আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

শরীফা আক্তার শাম্মী বলেন, 'যেকোনো ফলই শরীরের জন্য উপকারী। আর লিচু যেহেতু একটি মৌসুমী ফল, এটি খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।'

লিচুর পুষ্টিগুণ

লিচুতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি। প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট খুব অল্প পরিমাণে থাকে। লিচুতে ফ্যাট নেই। রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। খনিজ উপাদানগুলো হলো ম্যাঙ্গানিজ আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, কপার ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার অবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

উপকারিতা

  • লিচুতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকায় এটি খেলে গরমে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হয়। গরমে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই পানি খাওয়ার পাশাপাশি লিচুর মতো জলীয় উপাদান সমৃদ্ধ ফল খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
  • লিচুতে এপিকেচিন ও রুটিন নামক দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ রয়েছে, যা এ গরমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
  • লিচুতে রয়েছে এসকরবিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তে শ্বেতকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে শরীরে বাইরের কোনো ক্ষতিকারক জীবাণু প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
  • লিচুতে লিচিট্যানিন নামক ভাইরাস বিরোধী উপাদান আছে, যা ভাইরাস ছড়াতে বাধা দেয়।
  • লিচু ডায়াটেরি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন ও কপার রয়েছে লিচুতে। এগুলো লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে এবং রক্ত সঞ্চালনের উন্নয়ন করে। রক্ত সঞ্চালনের উন্নয়ন হলে রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • লিচুতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এসব মিনারেল হাড়কে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম শুষে নিতে। ফলে হাড় শক্ত ও সুস্থ থাকে।
  • শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর সময় খাদ্যতালিকায় এ ফল পরিমাণমতো রাখা ভালো। লিচুতে থাকা ফাইবার এবং পানি পেট ভরিয়ে রাখে। ফ্যাট না থাকা ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাদ্যআঁশ দেহের ভেতর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে।
  • লিচুতে আছে ফ্ল্যাভানল নামক উপাদান, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • লিচুতে থাকা উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধে ও সহায়তা করে।
  • লিচুর উপাদান ত্বকের বলিরেখা দূর করে, বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, ত্বক উজ্জ্বল করে।

সতর্কতা

  • লিচুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি খেলে ধীরে ধীরে রক্তে সুগার প্রবেশ করে। তাই এ ফলটি ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের লিচু খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করে সেই অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় লিচুর পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। যেমন সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ৪০ গ্রাম পরিমাণ লিচু খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে। অন্যথায় অতিরিক্ত লিচু খাওয়া হলে রোগী অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
  • পটাশিয়াম থাকায় লিচু কিডনি রোগীদের খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। তবে পটাশিয়াম লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকলে সপ্তাহে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
  • লিচু সকালে খালি পেটে, খাওয়ার পরেই এবং ঘুমাতে খাওয়ার সময় খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীরে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে।
  • লিচু একটি গরম ফল। গরম ফল হওয়াতে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়। এ ছাড়া বেশি খাওয়ার ফলে পেট ব্যাথা, পেটের সমস্যা, অ্যাসিডিটি, বমি হতে পারে।
  • মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে। ফলে শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি ভাব, দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

একজন সুস্থ ব্যাক্তি দিনে ১০-১২টি লিচু খেতে পারেন। তবে একসঙ্গে না খেয়ে একটু বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো।

 

Comments

The Daily Star  | English

‘This fire wasn’t an accident’: Small business owner’s big dreams destroyed

Once a garment worker, now an entrepreneur, Beauty had an export order ready

4h ago