চৈত্রের বৃষ্টিতে ঝরেছে মুকুল, গ্রীষ্মের খরায় গুটি নষ্ট—লিচুর ফলন নিয়ে শঙ্কা

ঈশ্বরদীর লিচুর বাগানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, মুকুল থেকে বেড়ে ওঠা লিচুর গুটির বড় অংশই ঝরে পড়ছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে লিচুর সর্বাধিক ফলনের আশা করেছিলেন পাবনার লিচু চাষিরা। তবে চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে দুই দফায় বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ মুকুল পচে ঝরে যায়।

এদিকে গ্রীষ্মের শুরুতে প্রচণ্ড তাপদাহে এখন মুকুল থেকে বেড়ে ওঠা লিচুর গুটির বড় অংশই ঝরে পড়ছে। 

এ অবস্থায় লিচুর বাম্পার ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঈশ্বরদী উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে পাবনার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে এবং চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফাল্গুনের শুরুতে প্রতিটি লিচু গাছে যথেষ্ট পরিমাণ মুকুল এসেছিল।

চলমান খরায় লিচুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান চাষিরা। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

তবে চৈত্রের মাঝ থেকে শেষ দিকে কয়েক দফায় বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ মুকুল নষ্ট হয়ে যায়।

ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর গ্রামের লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী মো. মিরাজুল শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টিতে লিচুর মুকুলের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রীষ্মের শুরুতে যখন মুকুল থেকে গুটিতে পরিণত হচ্ছিল, সে সময় মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে গুটির একটি বড় অংশ ঝরে পড়ে।'

তিনি জানান, নিজের বাগানের গাছসহ এ বছর কেনা প্রায় ৫০০ গাছের প্রতিটি গাছেই ৫০-৬০ শতাংশ মুকুল গুটিতে পরিণত হতে পারেনি।

মিরাজুল বলেন, 'গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে প্রতিটি গাছ গড়ে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। আশা ছিল দুই মাস পরিচর্যা করে প্রতিটি গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার লিচুর ফলন পাওয়া যাবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় একটি গাছ থেকে ৫ থেকে ৮ হাজারের বেশি লিচু পাওয়া যাবে না।'

ফলন এ রকম হলে লিচুর দাম গত বছরের চেয়েও বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি।

একই কথা বলেন একই এলাকার লিচু চাষি মো. রাকিবুল ইসলাম। তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, তার বাগানের শতাধিক গাছের প্রতিটি থেকেই ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মুকুল ঝরে গেছে। চলমান খরায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

রাকিব বলেন, 'যে সময় লিচুর গুটি আসে সে সময় বৃষ্টিপাত না থাকায় এবং অতিরিক্ত খরায় লিচু গাছের গোঁড়ায় ও মাথায় শুষ্কতার কারণে অনেক গুটি ঝরে পড়ছে।'

এখনই বৃষ্টি না হলে লিচুর উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করেন তিনি। 

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, সাধারণত গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে সে পরিমাণ লিচুর ফলন হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফল উৎপাদন হয়। সে দিক থেকে খরায় কিছুটা ক্ষতি হলেও এখনো লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। 

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পাবনায় লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৮ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন। 

ঈশ্বরদী উপজেলার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী শেখ মেহেদি হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষকদের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ নির্ভর করে লিচুর উৎপাদনের ওপর। লিচুর বাম্পার উৎপাদন হলে এ অঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হবে আর ফলন বিপর্যয় হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পুরোটাই নির্ভর করছে প্রকৃতির ইচ্ছার ওপর।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জামাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকদের দাবি সঠিক নয়। গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে, তা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফল হয়, বাকি মুকুল ঝরে যায়। এ বছর স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছে। যে পরিমাণ মুকুল এসেছে তার অর্ধেক ফলন হলেও লিচুর ভারে ডাল ভেঙে পড়ার কথা।'

তবে প্রাকৃতিক নিয়মে ভারসাম্য রক্ষায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুকুল থেকেই ফল উৎপাদন হবে এবং বাকি মুকুলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। 

তিনি অবশ্য বলেছেন, 'চলমান খরার কারণে লিচুর ক্ষতি হচ্ছে। তাপদাহ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে গাছগুলো শুষ্ক হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের প্রতিনিয়ত গাছের উপরের দিকে পানি স্প্রে করতে এবং গাছের গোঁড়ায় পরিমাণ মতো পানি দিতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।'

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি হবে। এতে লিচু গাছগুলো প্রয়োজনীয় পানি পাবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা। 

তিনি বলেন, 'চাষিরা যাই বলুক এবার পাবনায় লিচুর বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

4h ago