কেন খাবেন কলার মোচা

কলার মোচা, কলার মোচা, কলার মোচার পুষ্টিগুণ, কলার মোচার উপকারিতা, কলার মোচার স্বাস্থ্য উপকারিতা, কলার মোচার গুণাগুণ, কলার মোচার ভেষজ গুণ, কলার মোচার রেসিপি, কলার মোচা খাওয়ার উপকারিতা, কলার মোচার ভর্তা, কলার মোচার ভাজি, কলার মোচার ঝোল, কলার মোচার রান্না, কল
কলার মোচা। ছবি: সংগৃহীত

কলা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ও বহুল চাষকৃত ফল। কাঁচা কলা থেকে শুরু করে পাকা কলা, কলার থোড়, এমনকি কলার মোচাও আমাদের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। 

পুষ্টিবিদ স্বর্ণালী দাশ বিজয়া। ছবি: সংগৃহীত

কলার মোচা কৃষিজ উপজাত হিসেবে গণ্য হলেও, বিশ্বের বহু দেশে এটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়। 

এটি অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর এক ধরনের ফুল। কলার মোচা বহু বছর ধরে গ্রামীণ সমাজে বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া হয়। 

তবে শুধু স্বাদের জন্য নয়, আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কলার মোচা এক অনন্য ভেষজ খাদ্য যা শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

চলুন জেনে নেই কলার মোচার স্বাস্থ্য উপকারিতা। পরামর্শ দিয়েছেন সিলেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডায়াবেটিস এডুকেটর ও পুষ্টিবিদ স্বর্ণালী দাশ বিজয়া।

কলার মোচার পুষ্টিগুণ

কলার মোচা ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও আঁশে সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর আঁশ, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। 

বিভিন্ন মানসম্মত পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, মোচায় আঁশের পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ, কার্বোহাইড্রেট ৫৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং প্রোটিন ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। 

প্রতি ১০০ গ্রাম মোচায় যা থাকে:

ক্যালরি (শক্তি) — ৫১ কিলোক্যালরি 

প্রোটিন — ১.৬ গ্রাম 

ফ্যাট — ০.৬ গ্রাম 

কার্বোহাইড্রেট — ৯.৯ গ্রাম 

আঁশ (ডায়াটারি ফাইবার) — ৫.৭৪ গ্রাম 

আর্দ্রতা — ৮৮.৭৫ গ্রাম

পটাশিয়াম — ৫৫৩.৩ মিলিগ্রাম 

ক্যালসিয়াম — ৩৩.২৭ মিলিগ্রাম 

ম্যাগনেসিয়াম — ৪৮.৭ মিলিগ্রাম 

ফসফরাস — ৫৩.২৭ মিলিগ্রাম 

লৌহ (আয়রন) — ৫৬.৪ মিলিগ্রাম

ভিটামিন সি — ৪২০ মিলিগ্রাম

রিবোফ্লাভিন — ০.০২ মিলিগ্রাম

থায়ামিন — ০.০৫ মিলিগ্রাম

সালফার — ২৭.০৩ মিলিগ্রাম

এছাড়াও এতে আরও আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন ই ও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। 

স্বাস্থ্য উপকারিতা

কলার মোচার পুষ্টিগুণগুলো জানা হলো। এবার জেনে নিই এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। 

১. হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে: আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় মোচা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ কার্যকর। এটি অন্ত্রের গতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং হজম প্রক্রিয়া সুস্থ রাখে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিক ও অন্ত্রের সমস্যায় মোচা উপকারী।

২. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ও ওজন কমায়: ডায়েটারি ফাইবার দীর্ঘসময় তৃপ্তি বজায় রাখে। এটি ক্ষুধা কমিয়ে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। তাই মোচা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক এবং স্থূলতা প্রতিরোধ করে। 

৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: কলার মোচা একটি লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাদ্য। অর্থাৎ এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে না। আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

৪. রক্ত বাড়ায়: মোচায় বিদ্যমান লৌহ শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে এটি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে কিশোরী ও প্রসূতি মায়েদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাদ্য।

৫. ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা কমায়: মোচা শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত রক্তস্রাব, ব্যথা ও পেশির খিঁচুনি কমে যায়। এটি নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত উপকারী।

৬. মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনে সহায়ক: গবেষণায় দেখা গেছে, কলার মোচা প্রসূতি নারীদের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তাই নতুন মায়েদের জন্য এটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

৭. ক্যানসার প্রতিরোধ: মোচায় ফেনোলিক অ্যাসিড, ট্যানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এগুলো শরীরের ফ্রি-র‌্যাডিকেল নষ্ট করে, যা ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ। তাই মোচা ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং বয়স হলে ত্বকে বলি রেখা পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে। 

৮. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: মোচায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ কমায়, উদ্বেগ হ্রাস করে এবং মুড সুইং নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে এটি মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে এবং মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।

খাওয়ার পদ্ধতি

কলার মোচা বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করে খাওয়া হয়ে থাকে। তবে রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল মশলা ব্যবহার কমাতে হবে, এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হবে না।

ভাজি বা ভর্তা: মসলা ও নারকেল দিয়ে ভাজি বা ভর্তা বানানো যায়। কিছু এলাকায় মোচা শুকিয়ে গুঁড়া করে ভর্তা বা সবজির সাথে খাওয়া হয়।

ডাল বা মোচার ঝোল: ডাল বা মাছের সাথে রান্না করলে সুস্বাদু হয়।

চপ বা পাকোড়া: মোচা কেটে মশলা মিশিয়ে ভেজে নাস্তা হিসেবে খাওয়া যায়।

সালাদ বা স্যুপ: সেদ্ধ করে সালাদ বা স্যুপে ব্যবহার করা যায়।

সতর্কতা

কলার মোচা যেমন পুষ্টিকর, তেমনি কিছু সতর্কতাও মানা জরুরি।

১. বেশি খেলে গ্যাস ও হজমের সমস্যা হতে পারে।

২. রান্নার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ভিজিয়ে নিতে হবে।

৩. ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিত খেতে হবে।

৪. অন্তঃস্বত্ত্বা নারীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেশি খাবেন না।

৫. কিডনি রোগীদের জন্য পটাশিয়াম বেশি হওয়ায় সীমিত খাওয়া জরুরি।

৬. কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জি হতে পারে।

Comments