নিজের লেখা-গান-কবিতা কপিরাইট করবেন যেভাবে

নিজের লেখা, গান, কবিতা কীভাবে কপিরাইট করবেন অনেকেই জানেন না বা জানলেও কপিরাইট সম্পর্কিত ধারণা খুব বেশি বিস্তৃত নয়। কপিরাইট আসলে কী এবং কপিরাইট আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
কপিরাইট কী
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, কপিরাইট হলো সৃষ্টিশীল কাজের (যেমন: কবিতা, গান, গল্প, বই, নাটক, চিত্রকলা, সফটওয়্যার ইত্যাদি) ওপর লেখক বা স্রষ্টার আইনগত অধিকার। এর মাধ্যমে তিনি কাজটি ব্যবহার, প্রকাশ, বিক্রি বা অনুমতি দেওয়ার একচেটিয়া অধিকার পান।
নিজের লেখা গান-কবিতার কপিরাইট কীভাবে করা যায়
কপিরাইট আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, গান বা কবিতার একটি কপি প্রস্তুত করে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। এরপর, নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। যাচাই শেষে কপিরাইট নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়।
তবে মনে রাখতে হবে, কোনো লেখা সৃষ্টির সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কপিরাইট জন্ম নেয়। নিবন্ধন করলে আদালতে প্রমাণ করা সহজ হয়।
কপিরাইট আইন কী বলে
বাংলাদেশ কপিরাইট আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, মৌলিক সাহিত্য, সংগীত, নাটক, শিল্পকর্ম, সিনেমা বা সফটওয়্যারের কপিরাইট লেখকের অধিকারভুক্ত। অনুমতি ছাড়া নকল, বিক্রি, প্রকাশ বা ব্যবহার করলে কপিরাইট লঙ্ঘন হবে।
কপিরাইটের মেয়াদ সাধারণত লেখকের মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত বহাল থাকে।
কপিরাইট লঙ্ঘনের শাস্তি
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, কপিরাইট আইন, ২০২৩ এর ৮৪ থেকে ১০৭ ধারা পর্যন্ত কপিরাইট সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের সংজ্ঞা ও অপরাধভেদে শাস্তির দণ্ডের বিধান রয়েছে। এই আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়াও যার কপিরাইট নষ্ট করা হয়, তিনি চাইলে দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন।
কপিরাইটের সীমাবদ্ধতা
কপিরাইটের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন:
- আইনের বিষয়টি বেশিরভাগ মানুষের কাছেই পরিষ্কার নয় এবং আইনের প্রয়োগে দুর্বলতা রয়েছে।
- গবেষণা, শিক্ষা, সমালোচনা বা সংবাদ পরিবেশনের জন্য সীমিতভাবে ব্যবহার করলে সেটি লঙ্ঘন নয়, বরং ফেয়ার ইউজ হিসেবে বিবেচিত।
- যেসব কাজের কপিরাইট মেয়াদ শেষ, সেগুলো সবাই অবাধে ব্যবহার করতে পারে।
কপিরাইট ও অন্যান্য মেধাস্বত্বের মধ্যে পার্থক্য
- কপিরাইট হলো সৃজনশীল কাজের অধিকার।
- পেটেন্ট হলো নতুন আবিষ্কার বা প্রযুক্তির অধিকার।
- ট্রেডমার্ক হলো ব্র্যান্ডের নাম, লোগো বা স্লোগানের অধিকার।
- এসব অধিকার সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশে কপিরাইট আইন, পেটেন্ট ও ডিজাইন আইন এবং ট্রেডমার্ক আইন রয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে কপিরাইট কীভাবে সুরক্ষিত হয়
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বাংলাদেশ বার্ন কনভেনশনের (বার্ন কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব লিটারারি অ্যান্ড অ্যার্টিস্টিক ওয়ার্কস) সদস্য হওয়ায় এদেশের নাগরিকদের কাজ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই কপিরাইট সুরক্ষা পায়।
Comments