সঙ্গী কথায় কথায় রেগে যান, কী করবেন

রাগ, সঙ্গীর রাগ,
ছবি: সংগৃহীত

কথায় আছে, 'রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন'। কিন্তু এই রেগে হেরে যাওয়াটা সবসময় নিজের ক্ষেত্রে হয় না। ভোগান্তি তখন বেশি হয়, যখন সঙ্গীর রাগের কারণে অপরজনকে সে রাগের ফলাফল ভোগ করতে হয়।

ধরা যাক দুজনে মিলে কোনো অনুষ্ঠানে গেছেন। সব ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু আপনার সঙ্গীর বদরাগী স্বভাবের কারণে তার সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানেই কারো তর্কাতর্কি লেগে গেল। আপনার সময় বেশ ভালো কাটছিল, কিন্তু এখন আপনার মনোযোগ এবং আপনার প্রতি অন্যের মনোযোগ একটু অসহনীয় মাত্রায় চলে গেছে, যেটি আপনার কাম্য নয়। এমন আরও বহু অনাহুত অবস্থায় পড়ার পেছনে সঙ্গীর রাগ একটি নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে, যা নিয়ে আবার পরবর্তীতে দুজনের মধ্যেও ঝামেলা বাঁধার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই কিছু কৌশল মেনে চললে সেই সম্ভাবনা অনেকটা কমিয়ে আনা যায়।

রাগের মাত্রাভেদে বুঝেশুনে এগোনো দরকার। কারো রাগ যদি এতই বেশি হয় যে তা সহিংসতার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বলে মনে হয়, তবে সে সম্পর্ক থেকে সরে আসার মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনও হতে পারে। একইসঙ্গে সেই মানুষটিকে যথাযথ চিকিৎসার আওতায় আনা যায় কি না, সেটিও ভেবে দেখা দরকার।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন

যোগাযোগ যেকোনো ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ হয়। তবে রাগের মুহূর্তে কথা বলতে যাবেন না। স্বাভাবিক সময়গুলোতে সঙ্গীকে বোঝার এবং বোঝানোর চেষ্টা করুন। কেন তার হুট করে রাগ উঠে যাচ্ছে, এই রাগ নিয়ন্ত্রণ করা তার পক্ষে সম্ভব কি না এবং তা নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়; এগুলো নিয়ে একে একে কথা বলুন।

যদিও এর পরের ধাপটি নির্ভর করবে সেই মানুষটির ওপর। কেউ যদি নিজের অতিরিক্ত রাগের বিষয়টি সচেতন থাকেন এবং তা থেকে সরে আসতে চান, তাহলে যোগাযোগের মাধ্যমে তা প্রশমন অনেকটাই সম্ভব। কিন্তু যদি তার উল্টোটা হয়, অর্থাৎ মানুষটি তার রাগকে খারাপ কিছু বলে মনেই না করেন এবং সেভাবেই থাকতে চান—তাহলে 'অরণ্যে রোদনে'র মতো অনুভূতি হতে পারে আপনার।

সম্পর্কে কিছু সীমারেখা টানুন

আপনার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষটির সঙ্গেও প্রয়োজনে সীমারেখা টানতে হবে এবং তাদেরকে জানাতে হবে যে তার যেকোনো নেতিবাচক অভিব্যক্তি নিতে আপনি রাজি নন। আপনার জীবনে, আপনার প্রেম বা বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে কী ধরনের প্রত্যাশা রয়েছে, তা নিয়ে খোলাখুলি আলাপ করুন। সঙ্গীর অন্যায় রাগের বিষয়টি যে আপনি সহ্য করবেন না এবং তা যেন তিনি আশা না করেন—সেটি স্পষ্ট করে বলে দিন। অনেকসময় নীরবতার কারণে অনেক বেশি নেতিবাচক অভ্যস্ততা তৈরি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে যেকোনো সম্পর্কের জন্যই প্রাণঘাতী।

রাগের বদলে রাগ নয়

একজন রেগে গেলে তার জবাবে অন্যজনও রেগে না গিয়ে শান্ত স্বরে, খুব স্পষ্টভাবে যুক্তির মাধ্যমে সুরাহা করার চেষ্টা করুন। এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না যে সেই সুরাহা সবসময় সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করবে, তবে এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফলাফল পাওয়া যাবে—তাতে সন্দেহ নেই।

অনেকেই প্রেমের সম্পর্কে 'রাগ'কে রোমান্টিক ছাঁচে ফেলার চেষ্টা করেন এবং তাতে গর্ববোধ করেন। এমন অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, 'ওর এত রাগ! আমি তো বিপদে পড়ে যাই।' কিংবা 'ঝগড়া না করলে ভালোবাসা কমে যায়।'

একথা সত্যি যে সম্পর্কের ব্যাকরণে কোনো নির্দিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে বহুমাত্রিক মানুষের জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। কিন্তু তা বলে নেতিবাচক বিষয়গুলোকে জোর করে 'ভালো' কিছুর রূপ দেওয়াটা নিজের ও অন্যের জন্য ক্ষতিকর।

সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে ভারসাম্য বজায় রেখে চলা। নিজের ও সঙ্গীর অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে এই ভারসাম্য যাতে সবসময় ঠিক থাকে—সেক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে। কিছুটা সচেতনভাবে, কিছুটা অভ্যেস করে নিয়ে চললেই একে অন্যের দোষ-গুণকে পরিমিত মাত্রায় গ্রহণের ক্ষেত্রে সফল হওয়া সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

8h ago