অতিরিক্ত ভালোবাসার সমস্যাগুলো জেনে নিন

কথায় আছে, অতিরিক্ত কিছুই ভালো না। কিন্তু মানুষের জীবনের সবচাইতে সুন্দর যে অনুভূতি, যাকে নিয়ে বোনা হয় শত স্বপ্নের প্রাসাদ—সেই 'ভালোবাসা', তাও কি একই ফর্মুলা মেনে চলে?
অতিরিক্ত ভালোবাসার অভিব্যক্তিতে যে সমস্যাগুলো জন্ম নিতে পারে, সেগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
ভারসাম্যহীনতা
কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্কে এক পক্ষের অতিরিক্ত আবেগের ফলে দুজনের মধ্যে এক ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। এই অসামঞ্জস্য মূলত দু-পক্ষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।
কারো প্রতি ভালোবাসা নিশ্চয়ই দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখা যায় না। একথা যেমন সত্যি, তেমনি এও সত্যি যে যখন একদিকের পাল্লা অনেক বেশিই ঝুঁকে পড়ে, তখন এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা চলে আসে। এরপরে হোঁচট খেয়ে পড়তে পারে দ্বিমুখী প্রণয় কিংবা বিয়ের মতো সম্পর্কগুলো।
অভিযোগের স্তুপ
'সে আর আমায় আগের মতো ভালোবাসে না' কিংবা 'সবসময় আমিই কেন আগ বাড়িয়ে যাব?' এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগের জন্ম হতে পারে অতিমাত্রায় ভালোবাসার ফলে। এর কারণে অপর পক্ষ যতই চেষ্টা করুক, একইভাবে তার প্রতি সে ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার—তা কখনোই যথেষ্ট বলে মনে হবে না। আর এমনিতেও, ভালোবাসা তো আর কোনো প্রতিযোগিতা নয়!
অবসেসিভ লাভ ডিসঅর্ডার
ভালোবাসা কখনো কখনো এতটাই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যে তার নাম হয়ে যায় 'ডিসঅর্ডার'। এই ডিসঅর্ডারে ব্যক্তি তার ভালোবাসার মানুষের ওপর এমনভাবে অধিকার খাটাতে চায় বা জাপটে ধরে রাখতে চায়, দেখে মনে হয়—অপর ব্যক্তিটি বোধহয় কোনো প্রিয় বস্তু বা সম্পত্তি। এসব আচরণ থেকে তৈরি হতে পারে সন্দেহ, ঈর্ষা এবং আরও অনেক নেতিবাচক অনুভূতির, যার পরিণাম বেশিরভাগ সময়ই একটি অসুস্থ সম্পর্ক কিংবা কাদা ছোঁড়াছুঁড়িময় একটি বিচ্ছেদ।
এই মানসিক সমস্যাটি যদিও মেডিকেল সায়েন্সের কোথাও তালিকাভুক্ত নয়, তবে হরহামেশাই আমাদের আশেপাশে এর ছড়াছড়ি দেখা যায়। ভালোবাসার মতো মিষ্টি বিষয়টিই যখন বিষের মতো ঠেকে—তখন বুঝে নেওয়া দরকার, কোথাও না কোথাও সমস্যা রয়েছে।
শেক্সপিয়ারের সেই ট্র্যাজিক নায়ক ওথেলোকে মনে আছে তো? ভীষণই অদ্ভুত সব সন্দেহে ভুগতো সে। তার এই বাতিকগ্রস্ত আচরণের জন্য তো পরে তার নামে আলাদা করে 'ওথেলো সিনড্রোম'ই তৈরি হলো। ওথেলোর মাত্রাতিরিক্ত ঈর্ষার জন্মও কিন্তু তার চেয়েও বেশি মাত্রা ছাড়ানো ভালোবাসা আর তা থেকে তৈরি হওয়া মানসিক অনিরাপত্তা থেকে।
ভালোবাসার মানুষটিকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, অন্য কারো সঙ্গে তার যেকোনো ধরনের সম্পর্কে ঈর্ষা বোধ করা, তাকে নিয়ে সারাক্ষণ নেতিবাচকভাবে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে—অন্য কিছুতেই মন দিতে না পারা এবং সঙ্গীটির জীবনের অন্যান্য অংশের মধ্যেও অনধিকার চর্চা; এমন বহু লক্ষণ রয়েছে, যা দেখে খুব সহজেই বোঝা যায়, ভালোবাসার পারদ সহনীয়তা ছাড়িয়েছে কি না।
সমাধান কি আছে?
যেকোনো অনুভূতির সুস্থ চর্চা যেভাবে মানুষের জীবনে সমৃদ্ধ করে, ঠিক উল্টোভাবে তার অসুস্থতা ব্যক্তিকে দিনকে দিন ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। সেই ক্ষতি কেউ কেউ হয়তো চিহ্নিত করতে পারে, আবার অনেকেই এড়িয়ে গিয়ে মেনে নেয় জীবনের এই 'উল্টো রথ'।
তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে কারো সঙ্গী যদি নিজেই বিষয়টি নিয়ে আলাপ তোলেন এবং দুজনে মিলে একটি বোঝাপড়ায় আসা সম্ভব হয়, তাহলে ভালোবাসার এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব এবং নিজেদের মধ্যে কিছু সীমারেখা আনার মাধ্যমে একসঙ্গে ভালো থাকাটাও মুশকিল কিছু নয়। কিন্তু যদি বোঝাপড়ার কোনো জায়গাই না থাকে এবং দিনকে দিন তা একে অন্যের মানসিক স্বাস্থ্যে অবনতির পাশাপাশি ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনে তাদেরকে ক্ষতির দিকে এগিয়ে নেয়, তবে বিচ্ছেদের সুরে এগিয়ে যাওয়াও একটি বিকল্প হতে পারে।
এ ধরনের ঘটনায় অনেকসময় অবশ্য বিচ্ছেদও শেষকথা হয় না, কেননা একপাক্ষিক জেদের মতোই একপাক্ষিক বিচ্ছেদও ধোপে না টিকতে পারে। যার ফলে বিচ্ছেদ-পরবর্তী কিছু দোষারোপ, দলাদলি এবং খুব তেতো কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। সে সময় নিজেকে ও নিজের আশপাশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
Comments