ঘুরে দেখুন রাজশাহীর এই স্থানগুলো

রাজশাহী ভ্রমণ
ছবি: সাজেদুর আবেদী শান্ত

পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত অনিন্দ্য সুন্দর জেলা রাজশাহী। রাজশাহীকে বলা হয় পরিচ্ছন্ন শহর, আমের শহর, রেশমের শহর ও শিক্ষার শহর। আলো ঝলমলে এই রাজশাহী শহরে দেখার মতো অনেক স্থান রয়েছে।

হাতে যদি থাকে একদিনের ছুটি, তাহলে ঘুরে দেখতে পারেন সেসব।

টি বাঁধ

রাজশাহীর সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হলো টি বাঁধ। বলা চলে রাজশাহীর সিগনেচার দর্শনীয় স্থান। শহর থেকে একদম হাঁটার দূরত্বে এ বাঁধ অবস্থিত। মূলত ইংরেজি অক্ষর টির মতো দেখতে বলে বাঁধের নাম টি বাঁধ।

বাঁধ থেকে নদীর শান্ত, শীতল ও স্নিগ্ধ দৃশ্য উপভোগ যায়। বর্ষায় সময় কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। বাঁধের সামনে অপরুপ দৃশ্য ধরা দেবে চোখে। নদীর ওপারে ছোট্ট একটি গ্রাম রয়েছে। এ ছাড়াও কয়েকটি ছোট চর রয়েছে। নৌকা নিয়ে সে স্থানগুলোতে যাওয়া যায়। বাঁধে সবসময় নৌকা থাকে। তবে যেতে চাইলে নৌকা ভাড়া দরদাম করে ঠিক করা উচিত।

রাজশাহী
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক

টি বাঁধ থেকে একদম হাঁটা পথে পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানার পাশাপাশি এখানে একটি শিশু পার্কও রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন বৃক্ষে শোভিত। ভাস্কার্য, পানির ফোয়ারাসহ ছোট এক লেক রয়েছে পার্কে। পার্কের কৃত্রিম পাহাড় থেকে পদ্মা নদীর সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। এ ছাড়াও চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, প্যাডেল বোডসহ বেশ কয়েকটি রাইড। অন্যদিকে চিড়িয়াখানায় রয়েছে হরিণ, ঘড়িয়াল, ঘোড়া, উদবিড়াল, বালিহাঁস, সাপ, কুমিরসহ বেশকিছু প্রাণী।

চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ২৫ টাকা প্রবেশমূল্য দিয়ে এখানে প্রবেশ করতে হয়।

সিএন্ডবি রোড

রাজশাহীর আরেকটি সুন্দর জায়গা হলো সিএন্ডবি রোড। এটি মূলত একটি রাস্তা। রাস্তার পাশেই রাজশাহী সার্কিট হাউজ। সবুজ, শ্যামল, ছায়া শোভিত এ রাস্তায় হাঁটলে মন ভালো হয়ে যায়, তা সকাল হোক কিংবা বিকেল। চিড়িয়াখানা ঘুরে এখানে আসতে পারেন। এ ছাড়া বিকালে বা সন্ধায় এখানে গরম গরম রসগোল্লা পাওয়া যায়।

রাজশাহী ভ্রমণ
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

রাজশাহী কলেজ

সিএন্ডবি রোড থেকে একটা অটোরিকশা নিয়ে মাত্র ১০ মিনিটে আসা যায় রাজশাহী কলেজে। কলেজটি খুবই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। বিশেষ করে কলেজে লাল দালান অন্যন্য সৌন্দর্যের প্রতীক। এটি কলেজের প্রশাসন ভবন। এ ছাড়াও কলেজে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে। পাশাপাশি শাপলা ফুলে ভরা এক পুকুর রয়েছে। পুকুরের পাড়ে বসলে এক অমীয় সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। প্রাচীন পুঁথি, দুর্লভ ও মূল্যবান বইয়ের কারণে কলেজের গ্রন্থাগারটিও বিশেষভাবে পরিচিত। এ ছাড়াও কবি রজনীকান্ত সেন, ঋতৃক ঘটকের মতো বিখ্যাত জনেরা এ কলেজের ছাত্র ছিলেন।

প্যারিস রোড, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী ঘুরতে এসেছেন, অথচ প্যারিস রোডে যাবেন না- তা তো হয় না! প্যারিস রোড না ঘুরলে রাজশাহী ভ্রমণে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। রাজশাহী কলেজ ঘোরা শেষ হলে অটোরিকশায় করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে। প্যারিস রোডটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই অংশ।

প্যারিস রোডের দুধারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে গগনশিরীষ নামের সুউচ্চ গাছ। জানা যায়, এই গাছগুলো ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে আনা। তাই রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে 'প্যারিস রোড'।

প্যারিস রোড রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটক থেকে শেরে বাংলা ফজলুল হক হল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ধরে বিস্তৃত। এ রাস্তায় হাঁটলে এক ছায়া শীতল অনুভব করা যায়। নির্জন-নিস্তব্ধ রাস্তায় হাঁটলে মনের ভেতর নেচে উঠে অজানা এক আনন্দ। প্যারিস রোড ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখার মতো আরও অনেক জায়গা রয়েছে। হাতে সময় থাকলে সেগুলোও দেখতে পারেন।

আলোসজ্জিত রাস্তা

রাজশাহীর অন্যতম আরেকটি সৌন্দর্য হলো রাতের আলোকসজ্জিত রাস্তা। বিশেষ করে তালাইমারি থেকে আলুপট্টি, তেরোখাদিয়া ও প্লেন চত্বরের রাস্তা। আলোসজ্জিত এ রাস্তা যেনো রাজশাহী শহরকে আরও নতুন করে প্রাণ দেয়। যে কোনো পথচারী রাস্তার এই সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করতে বাধ্য। নানা রঙের আলোঝলকানি এ রাস্তা পায়ে হেঁটে উপভোগ করতেই বেশি ভালো লাগে।

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে আকাশপথ, সড়কপথ, রেলপথ তিন উপায়েই রাজশাহী যাওয়া যায়।

সড়কপথে ঢাকা মহাখালী, শ্যামলি ও গাবতলি থেকে সরাসরি রাজশাহী বাস চলাচল করে। গ্রীনলাইন, একতা, দেশ ট্রাভেলস, হানিফ, শ্যামলী পরিবহন উল্লেখযোগ্য। এসি-নন এসিভেদে এসব বাসের ভাড়া ৭০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা।

ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিল্কসিটি, পদ্মা, ধুমকেতু ও বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাওয়া যায়। এসি-ননএসি কেবিনভেদে ট্রেনের টিকেটের মূল্য ৩৪০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই ট্রেনের শিডিউল দেখে নিবেন।

বিমানে যেতে চাইলে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যেতে হবে। ফ্লাইটভেদে বিমানের টিকেটের মূল্য ৩৫০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা। ফ্লাইট ও শিডিউল অনুযায়ী প্লেনের ভাড়া কমতে বা বাড়তে পারে।

যেখানে থাকবেন

রাজশাহীতে পাঁচ তারকা মানের হোটেল না থাকলেও বেশকিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে। উন্নতমানের হোটেলগুলোর মধ্যে গ্রান্ড রিভারভিউ হোটেল (চার তারকা মানের), রয়্যাল রাজ হোটেল, হোটেল এক্স রাজশাহী, যাত্রা ফ্ল্যাগশিপ হোটেল, হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, অরণ্য রিসোর্ট, রত্নদ্বীপ রিসোর্ট, পর্যটন মোটেল ইত্যাদি। এসি-ননএসি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী এসব হোটেলে রাত্রিযাপন করলে গুনতে হবে ৬০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা।

রাজশাহী দর্শনীয় স্থান
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

যা খাবেন

রাজশাহীতে অনেক জনপ্রিয় খাবার রয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী্র উপশহরে কয়েকটি কালাই রুটির দোকান রয়েছে। রাজশাহীর এ কালাই রুটি অনেক জনপ্রিয় খাবার। হাঁসের মাংস, বেগুন ভর্তাসহ অনেক প্রকারের ভর্তা দিয়ে কালাই রুটি পাওয়া যায়। এ ছাড়া, রাজশাহীর কাটাখালীর গরুর মাংস অথবা হাঁসের মাংসের কালাভুনা খেতে ভুলবেন না।

Comments

The Daily Star  | English
govt employees punishment rule

Govt employees can now be punished for infractions within 14 working days

Law ministry issues ordinance amending the Public Service Act, 2018

1h ago