আকাশে ১৯ ঘণ্টা: বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইটে যাত্রার আগে এই প্রস্তুতি নিয়েছেন?

একটানা দীর্ঘ সময় ধরে উড়োজাহাজে যাত্রা করছেন, বিষয়টা ভাবতেই কেমন ভয় কাজ করে। আর বিশ্বের দীর্ঘতম বাণিজ্যিক ফ্লাইটে চড়ার অভিজ্ঞতা তো অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীর কাছেও এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইটটি নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছায়। টানা প্রায় ১৯ ঘণ্টা ১০ মিনিট আকাশে উড়ে গিয়ে এই যাত্রা শেষ হয়।
গত জুনে আমি বিশ্বের এই দীর্ঘতম যাত্রীবাহী ফ্লাইটে ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলাম। এই অসাধারণ অভিজ্ঞতার কথা আমার সবসময় মনে থাকবে। অসাধারণ কাস্টমার সার্ভিস, আরামদায়ক আসন এবং সুস্বাদু ইন-ফ্লাইট খাবার সেই দীর্ঘ যাত্রাকে এতই অসাধারণ করে তুলেছিল যে এই যাত্রা সহজে ভোলার মতো নয়।

যদিও আমি আবারও এমন একটি যাত্রা শুরু করতে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত, তবে সবার ক্ষেত্রে অনুভূতিটা একই নাও হতে পারে। যেমন: আমার স্বামী এই দীর্ঘ ফ্লাইটের মাঝেমধ্যেই অস্থিরতা অনুভব করেছিলেন। কারও কাছে প্রায় একদিন ধরে উড়োজাহাজের কেবিনে আটকে থাকার ধারণাটাই ভয়ের মনে হতে পারে। তবে আমার ক্ষেত্রে একেবারেই কোনো সমস্যা হয়নি।

ফ্লাইটের প্রস্তুতি
আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে দীর্ঘ আকাশযাত্রার সঙ্গে আমার পরিচয় নতুন নয়। তবুও টানা ১৯ ঘণ্টা একই ফ্লাইটে বসে থাকার অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনো হয়নি বলে, এই ফ্লাইট সামলাতে পারব কি না তা নিয়ে মনে খানিকটা সংশয় ছিল।
ফ্লাইটে উঠে প্রথমেই আমি পোশাক বদলে ঘরে থাকার মতো আরামদায়ক পায়জামা আর টি-শার্ট পরে ফেললাম। এরকম দীর্ঘ ফ্লাইটে ফ্যাশনাবেল পোশাক না পরে আমি আরামদায়ক পোশাকেই থাকার চেষ্টা করি। সেদিন অল্প যেটুকু মেকআপ করেছিলাম তা ফ্লাইটে উঠেই মুছে ফেললাম প্রথমে। এরপর ত্বকে ওয়াটার বেইসড ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ফেসিয়াল মিস্ট ছিটিয়ে নিলাম। এই দীর্ঘ যাত্রায় ফেসিয়াল মিস্ট সত্যিই ভীষণ উপকারী ছিল। আমাদের পাঠকদের জন্য একটি দরকারি পরামর্শ: উড়োজাহাজের শুষ্ক বাতাস খুব দ্রুত ত্বককে ডিহাইড্রেট করে ফেলে। তাই যখনই দীর্ঘ ফ্লাইটে উঠবেন, সঙ্গে অবশ্যই ওয়াটার-বেইসড ময়েশ্চারাইজার রাখুন যা আপনার ত্বককে সুস্থ ও আর্দ্র রাখবে।

ফ্লাইটে পড়ার জন্য যাত্রার দু'দিন আগেই আমি স্থানীয় পাবলিক লাইব্রেরি থেকে একটি উপন্যাস নিয়েছিলাম, আর তা হলো আলকা জোশির লেখা 'দি হেনা আর্টিস্ট'। আকাশে বসে বই পড়ার অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। কোনো বিঘ্ন নেই, কোনো শব্দ নেই, শুধু বিমানের ইঞ্জিনের মৃদু গুঞ্জন। আর যদি জানালার পাশে বসেন, তবে বই পড়ার ফাঁকে মেঘেদের ভেসে যাওয়াও দেখা যায়।

আন্তরিক সেবা
ফ্লাইটের নারী-পুরুষ কেবিন ক্রুরা খুব আন্তরিক ছিলেন। পুরো সময় যথাযথভাবে আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন।
ফ্লাইট চলাকালে মালয়েশিয়ান বংশোদ্ভূত এক চমৎকার কেবিন ক্রুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল, যিনি আমাকে সার্ভ করছিলেন। আমি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এত দীর্ঘ ফ্লাইটের জন্য কেবিন ক্রু সদস্যরা কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করেন। তিনি হেসে বলেছিলেন, 'আমরা দীর্ঘ ফ্লাইটের জন্য লেওভার সময়ে যথেষ্ট বিশ্রাম নিই। আর আকাশে থাকাকালেও যখনই বিরতির সুযোগ পাই, তখনই আমরা ছোট ছোট ঘুম দিয়ে সেই সময়টাকে কাজে লাগাই।'
ফ্লাইটে তারা যেই ট্রাফেলস খেতে দিয়েছিল, সেটা এতটাই মজা ছিল যে আমি আবার চেয়ে নিলাম। তখন তিনি আমাকে প্রায় আধ ডজন ট্রাফেলস এগিয়ে দিয়ে হেসে বললেন, 'ফ্লাইটের ভেতর ক্যালোরির হিসাব করতে নেই।'

সেই কথোপকথনের সময়ই আমি তাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলাম, যা বেশ কিছুদিন ধরে আমার মনে কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল। কেবিন ক্রুরা কীভাবে এত স্লিম থাকেন? তারা কি কোনো কড়া ডায়েট মেনে চলেন? উত্তরে তিনি চোখ টিপে বললেন, 'আমি কর্সেট পরে আছি।'
আমার মনে হয়, আমি আবারও এই দীর্ঘ যাত্রায় নামতে প্রস্তুত। আরামদায়ক পোশাক, অসাধারণ বই, ইন-ফ্লাইট মুভি, সুস্বাদু খাবার, পর্যাপ্ত হাইড্রেশন এবং আন্তরিক কেবিন ক্রু সদস্যদের সৌজন্য—এসব মিলিয়ে ১৯ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই আকাশযাত্রা সত্যিই উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। সময় যেন উড়েই গেল!
অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম
Comments