যেভাবে ছড়ায় এইচএমপিভি, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। এটি শ্বাসতন্ত্রবাহিত সংক্রামক ব্যাধির জন্য দায়ী ভাইরাস।

এইচএমপিভি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং কীভাবে ছড়ায়? বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

এইচএমপিভি ভাইরাস কী

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণ ভাইরাসের উদ্ভব নানা কারণে হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকম ভাইরাসের সংমিশ্রণে নতুন ভাইরাসের উদ্ভব হয় বা ভাইরাস তার টিকে থাকার জন্য রূপ পরিবর্তন করে। ভাইরাসের পরিবর্তন যখন অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন একটি পর্যায়ে সেই ভাইরাসের নতুন নামকরণ করা হয়।

হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) ২০০১ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল নেদারল্যান্ডসে। বাংলাদেশেও ২০০১ সাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে। ২০০১ সালের আগে থেকেই এই ভাইরাসটি পৃথিবীতে ছিল। কিন্তু নতুন করে বিজ্ঞানীদের চোখে ধরা পড়ে ২০০১ সালে।

এইচএমপিভি কীভাবে ছড়ায়

অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রবাহিত যেসব ভাইরাস, যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, করোনাভাইরাসের মতো কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য বা মিল রয়েছে এইচএমপিভি ভাইরাসের।

শ্বাসতন্ত্রবাহিত যেসব রোগ আছে, যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা সেটার মতোই এইচএমপিভি ছড়িয়ে পড়ে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এইচএমপিভি ছড়ায়। এইচএমপিভি আক্রান্ত হাঁচি-কাশি লেগে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড় বা কোনো বস্তু এমনকি কোনো জায়গা অন্য কেউ স্পর্শ করে সেই হাত নিজের নাক-মুখে স্পর্শে করলে সেখান থেকে এইচএমপিভি হতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমেই এইচএমপিভি ছড়ানোর ইতিহাস আছে।

এই ভাইরাসের যে রূপ সেটির বিভিন্ন রকম শ্রেণিবিন্যাস করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এইচএমপিভি ভাইরাসের মিউটেশন হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। গুরুতর ফর্মে যাওয়া এবং মানুষের খুব বেশি ক্ষতি করতে সক্ষম, মৃত্যুহার খুব উঁচু এমন পর্যায়ে যায়নি এইচএমপিভি। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় ভাইরাসটি তাই পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।

লক্ষণ কী, ঝুঁকিতে কারা

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ অনেকটা একই রকম। এইচএমপিভি সংক্রমিত ব্যক্তির জ্বর হবে, হাঁচি-কাশি হতে পারে, কাশি থেকে কারো কারো গলা ব্যথা হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে এই রোগটি জটিলতা বাড়াতে পারে। যেমন:

১. যাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, যেমন: শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাদের ঝুঁকি বেশি।

২. যারা অন্যান্য রোগে ভুগছেন, যেমন: ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, ক্যানসার, কিডনিজনিত জটিলতা, অ্যাজমা আছে।

৩. কোনো ওষুধ খাওয়ার কারণে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে তাদের।

৪. অন্তঃসত্ত্বা নারী।

চিকিৎসা

এইচএমপিভি ভাইরাসের চিকিৎসায় সরাসরি কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। অধিকাংশ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ওষুধ নেই। এক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং এর পাশাপাশি রোগীর যত্ন নিশ্চিত করতে হবে। এটি এমনিতে সেরে যায় নির্দিষ্ট সময় পর। তবে রোগ যাতে গুরুতর পর্যায়ে না যায়, সেজন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

শরীরে যদি অন্য কোনো সংক্রমণ থেকে থাকে, সেটার জন্য ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। যাতে ওই সংক্রমণ এবং এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ যুক্ত হয়ে জটিল অবস্থা তৈরি করতে না পারে।

করোনার মতো মহামারি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এমন অবস্থায় এখনো যায়নি এইচএমপিভি ভাইরাস। তবে রোগটি যত বেশি ছড়াবে, তত বেশি আশঙ্কা থাকে এই ভাইরাসটি তার ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, খুব বৃদ্ধি হতে পারে, আবার কমেও যেতে পারে।

প্রতিরোধ

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রবাহিত রোগ যেভাবে প্রতিরোধ করা হয়, এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধ একইভাবে সচেতন হতে হবে। নিয়মিত বিরতিতে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখে রুমাল, টিস্যু বা কনুই দিয়ে ঢেকে নিতে হবে, সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, এইচএমপিভি সংক্রমিত ব্যক্তিকে মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিদেরও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

জ্বর হলে রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে নিজ অবস্থানে, অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের মতো তিন দিনের ভেতর জ্বর কমে যাবে। যদি জ্বর না কমে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনেক বেশি রোগী হাসপাতালে এলে সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এইচএমপিভি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কি না, সেটি লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতাল, চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Act now, enough of silence

The world  has been pushed to its breaking point and can no longer tolerate this barbarity. It’s the duty of every government, the United Nations, and all international and national civic, non-governmental, and rights organisations to take a firm stand now.

3h ago