তীব্র শীতে রংপুর অঞ্চলে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ

ছবি: স্টার

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুর অঞ্চলের জনজীবন। মৌসুমের শুরু থেকেই ঠান্ডাজনিত কারণে নানা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার হারই সবচেয়ে বেশি। 

সম্প্রতি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালসহ একাধিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড এখন রোগীতে পূর্ণ।  এর মধ্যেও আরও শিশু আসছে।

চিকিৎসকেরা জানান, শিশুদের মধ্যে বেশির ভাগই নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিসসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু ওয়ার্ডে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন শিশু চিকিৎসা নিলেও বর্তমানে গড়ে ৮০ থেকে ১০০ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। অত্যধিক রোগীর চাপে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।  ফলে বাধ্য হয়ে অনেক শিশুকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া নিশাত ইসলাম নামের এক শিশুর মা নুরনাহার বেগম বলেন, 'ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় আমার ছেলের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। গত তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় এখন আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ আছে।' 

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা শীতের প্রভাব বেশি অনুভব করে। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়া ও দীর্ঘ সময় কুয়াশা থাকায় শিশুদের শ্বাসনালিতে সংক্রমণ বেড়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিই সবচেয়ে বেশি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মনিকা মজুমদার বলেন, 'শীতকালে শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলতে হবে।'

শীতের প্রকোপে রোগাক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে চরাঞ্চল ও নিম্নআয়ের মানুষদের মধ্যে। একদিকে তাদের যেমন গরম কাপড়ের অভাব, তেমনি অসুস্থ হওয়ার পরে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তাদের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত চার বছর বয়সী মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে রোববার বিকেলে  লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে আসেন দিনমজুর মমিনুল ইসলাম । তার বাড়ি সদর উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত চর হরিণচড়া গ্রামে। 

মমিনুল বলেন, 'সেই চর থেকে হাসপাতালে আসা ভীষণ কষ্টকর। কিন্তু না এসে তো উপায় নেই।' 

শিশুদের মতো একই অবস্থা বয়স্কদেরও। তীব্র শীতে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বাতজনিত সমস্যায় ভোগা বয়স্ক রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখা যাচ্ছে।

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রের চর যাত্রাপুর থেকে ঠান্ডাজনিত কারণে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে আসেন কৃষক দবিয়র রহমান। তিনি জানান, প্রথমে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিলেও সুস্থ না হওয়ায় রোববার রাতে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। 

দবিয়র বলেন, 'চর এলাকায় ঠান্ডার প্রকোপ বেশি। অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে আমরা নিজেরাও ঠিকমতো কাজেও যেতে পারছি না।' 

কুড়িগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, 'চলমান শৈত্যপ্রবাহ যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। আমরা হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী মজুত রাখার নির্দেশ দিয়েছি। এর পাশাপাশি জনসচেতনতাও কাম্য। 

তিনি আরও বলেন, 'শীতকালে শিশুদের বুক ঢেকে রাখতে হবে। ভেজা কাপড় পরানো যাবে না। গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।'

রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনে রংপুর অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি  সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। সকালে ঘন কুয়াশা থাকায় ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বরের পরে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
gold price rises in Bangladesh

Gold shines through 2025 amid price volatility

If there were a “metal of the year” award, gold would be a strong contender, maintaining an exceptional run even on the final trading day of 2025..Businesspeople said the retail gold market in Bangladesh has remained unstable over the past few months, driven by fluctuating global prices, s

8m ago