ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতক কারা, ঝুঁকি এড়াবেন যেভাবে

নবজাতক,
ছবি: সংগৃহীত

সন্তানের সুস্থ এবং স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ প্রতিটি বাবা-মায়ের প্রথম প্রত্যাশা। বিভিন্ন কারণে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে, তার মধ্য অন্যতম সন্তান যদি ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতক হয়। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতকের বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সানজিদা আহমেদ।

ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতক কারা?

ডা. সানজিদা আহমেদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতক হচ্ছে সেসব নবজাতক যাদের অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা ও মৃত্যুঝুঁকি অন্য শিশুদের তুলনায় বেশি থাকে।

নবজাতক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণ

বিভিন্ন কারণে নবজাতক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যেমন:

১. অন্তঃসত্ত্বাকালীন মায়ের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।

২. প্রসবকালীন জটিলতা।

৩. জন্মের পর যদি শারীরিক কারণে শিশুর দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ইতিহাস থাকে।

৪. অন্তঃসত্ত্বাকালীন মায়ের বয়স যদি ৪০ বছরের বেশি অথবা ১৬ বছরের কম হয়।

৫. অন্তঃসত্ত্বাকালীন মায়ের অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, সংক্রমণ, এমনকি শিশুর ক্ষতি করতে পারে এরকম ওষুধ সেবন করলেও নবজাতক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

৬. সন্তানসম্ভবা মায়ের যদি হরমোনের ঘাটতি থাকে, কিডনিজনিত সমস্যা, হার্টের দুর্বলতা থাকে—এসব কারণেও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুর জন্ম হতে পারে।

৭. জন্মগত ক্রটিও শিশু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

৮. আরও কিছু কিছু কারণে শিশুর ঝুঁকি থাকতে পারে। যেমন: জন্মের সময় শিশুর গর্ভকালীন বয়স যদি ৩৫ সপ্তাহের কম হয়, জন্মের ওজন যদি এক হাজার ৮০০ গ্রামের নিচে হয়, জন্মের পর দেরি করে কাঁদার ইতিহাস থাকে, অতিমাত্রায় জন্ডিস থাকে। এ ছাড়া নবজাতকের যদি গুরুতর কোনো সংক্রমণ থাকে, যেমন: সেপসিস, মেনিনজাইটিস এসব কারণেও নবজাতক ঝুঁকিপূর্ণ হয়।

চিকিৎসা

ডা. সানজিদা আহমেদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতকরা ভবিষ্যতে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং পরবর্তীতে বিকাশজনিত সমস্যায় নিয়ে ভুগতে পারে। যেমন: সেরিব্রাল পালসি, মৃগী রোগ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এসব বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতকের চিকিৎসায় সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অথবা নবজাতক বিশেষজ্ঞ প্রধান ভূমিকা পালন করবেন। এ ছাড়া শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সমস্যা, যেমন: মস্তিষ্কের রোগ, দৃষ্টিশক্তিজনিত এবং শ্রবণশক্তিজনিত সমস্যার জন্য শিশু নিউরোলজিস্ট, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞেরও শরণাপন্ন হতে হবে।

এই শিশুদের পিছিয়ে পড়া রোধ করার লক্ষ্যে আর্লি স্টিমুলেশন থেরাপি দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি, যেমন: ডেভেলপমেন্টাল থেরাপি, ভিজ্যুয়াল স্টিমুলেশন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি এবং এর মাধ্যমে এই শিশুদের ভবিষ্যৎ অক্ষমতা বা ডিজঅ্যাবিলিটি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

করণীয়

১. অন্তঃসত্ত্বাকালীন অবস্থায় সন্তানসম্ভবা মায়ের নিয়মিত চেক-আপ করতে হবে। মায়ের যদি কোনো ধরনের জটিলতা থাকে তার দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে।

২. প্রসবকালীন সময়ে অবশ্যই একজন দক্ষ চিকিৎসক অথবা দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা প্রসব করাতে হবে। অর্থাৎ নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করতে হবে।

৩. সন্তান প্রসব পরবর্তী সময়ে নবজাতকের যদি কোনো জটিলতা হয়, যেমন: জন্মের পর শিশুটি যদি সঙ্গে সঙ্গে কান্না না করে, যদি তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, এছাড়া যদি কোনো সংক্রমণের উপসর্গ থাকে, যেমন: নেতিয়ে পড়া, টেনে স্তন্যপান না করা, খিঁচুনি হওয়া—এসব সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী নবজাতককে এনআইসিউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে সেবা গ্রহণ করতে হবে। এতে করে নবজাতকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।

ডা. সানজিদা আহমেদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতকরা মানসিক বিকাশে অন্য শিশুদের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে পড়তে পারে। শিশু হাঁটাচলা, বুদ্ধির বিকাশ এবং কথা বলা এসব ক্ষেত্রে তার পিছিয়ে পড়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে, মৃগী রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এজন্য শিশুর ৬ সপ্তাহ বয়স থেকে নিয়মিত শিশু নিউরোলজি ক্লিনিকে ফলো-আপ করা খুবই জরুরি। আর্লি চাইল্ডহুড বলতে শিশুর জন্মের পর থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত বোঝায়। এই বয়স পর্যন্ত শিশুর বিকাশ হতে থাকে। সেজন্য যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতককে অবশ্যই ৬ সপ্তাহ বয়স থেকেই নিয়মিত শিশু নিউরোলজি ক্লিনিকে ফলোআপ করতে হবে।

কারণ সময়ের সঙ্গে শিশুর শারীরিক, মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটি জানা জরুরি। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ নবজাতকের চিকিৎসায় সময়সূচি খুব গুরুত্বপূর্ণ, প্রথমে ৬ সপ্তাহের পর ৩ মাস, ৬ মাস, ৯ মাস, ১২ মাস, এরপর ১৮ মাস এবং এরপর থেকে ৬ মাস পরপর ৮ বছর পর্যন্ত শিশুর বিকাশ বা কোনো ধরনের জটিলতা পর্যবেক্ষণ করার জন্য নিয়মিত ফলো-আপে থাকতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

5G goes live, but with few phones to connect

Bangladesh’s long-awaited 5G rollout began this week, but a lack of compatible handsets means the next-generation network is unlikely to see mass adoption anytime soon.

6h ago