বইমেলা বিশেষ-৫

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণায় সামাজিক বা আদর্শিক দায়বদ্ধতা নেই

চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদের ৫টি বই। তার মধ্যে প্রথমা থেকে এসেছে ইতিহাসের বাঁকবদল : একাত্তর ও পঁচাত্তর এবং একাত্তরের মুজিব। বইমেলা ও নিজের লেখালেখি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

গবেষণায় অনেকদিন। আপনার বই কোন ধরনের পাঠক পড়ে, সিরিয়াস বইয়ের পাঠক বাড়ছে কি ?

মহিউদ্দিন আহমেদ: আমার ধারণা, যারা রাজনীতিসচেতন কিংবা যাদের বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ আছে, তারাই আমার পাঠক। সিরিয়াস বইয়ের পাঠক বাড়ছে কি না তা জরিপ ছাড়া বলা মুশকিল। তবে আমার মনে হয়ে, ভালো বা নির্বাচিত বইয়ের পাঠক বাড়ছে। 

বইমেলাকে বলে প্রাণের মেলা। সত্যি কি প্রাণের মেলা? 
মহিউদ্দিন আহমেদ: বাঙালি এমনিতেই ভাববিলাসী। সে থেকেই এ ধরনের কথা উঠেছে। এটা আবেগের কথা। বই এবং বইমেলা নিয়ে যাদের আবেগ আহে, এটাকে তারা প্রাণের মেলা বলতেই পারেন। বছরের এ সময়টির জন্য অনেক পাঠক ও লেখক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন। যারা বই কেনেন না,পড়েন না,তাদের কাছে এই আবেগের মূল্য নেই।

মেলায় যে কোন সময় যে কোন বই/ প্রকাশককে অংশ নিতে বাধা, বই বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা, এটা করার ক্ষমতা বাংলা একাডেমির আছে কিনা? যাকে বলে বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক 

মহিউদ্দিন আহমেদ: যতই স্বায়ত্তশাসিত বলা হোক, বাংলা একাডেমি আসলে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকার যেমনটি চাইবে, সে রকমই হবে। বইয়ের ব্যাপারে আমার চূড়ান্ত কথা হলো- লেখক কী লিখবেন, প্রকাশক কী ছাপবেন আর পাঠক কী পড়বেন, এটা তাদের ব্যাপার। এখানে অন্যের নাক গলানো উচিত নয়। নৈতিকতা পুলিশিং আসলে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার প্রতিফলন। 

রাজনৈতিক সচেতনতা তরুণদের মধ্যে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। রাজনীতিবিদরা কি এটা মাথায় রাখছেন বলে মনে করেন?

মহিউদ্দিন আহমেদ: রাজনীতি সচেতনতা থাকা আর রাজনৈতিক দল করা এক বিষয় নয়। রাজনৈতিক সচেতনতার সঙ্গে দলীয় রাজনীতির তেমন সম্পর্ক নেই। তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা আছে। তাই দলীয় রাজনীতির ওপর তারা আস্থা হারাচ্ছেন। এজন্য দায়ী দলগুলোই। দল চায় শর্তহীন আনুগত্য। সেখানে সচেতনতার কোনো দাম নেই।

দীর্ঘদিন রাজনীতির জটিল বিষয়গুলো মোকাবিলা করেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ— এই ধরনের বিষয়ে গবেষণা করে না কিনা?

মহিউদ্দিন আহমেদ: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকার শিক্ষক কম। বেশিরভাগই শিক্ষকতার চাকরি করেন। চাকুরে মানসিকতার কারণে বা প্রভাবে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন চাকরির নিরাপত্তার প্রতি। তারা ঝুঁকি নিতে চান না। তারা প্রশ্ন করেন না। যেটুকু গবেষণা করেন, সেটা তাদের পদোন্নতির শর্ত পূরণের জন্য। সামাজিক বা আদর্শিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নয়। এ জন্য দেখা যায়, তাদের বেশিরভাগ গবেষণার পাঠক নেই। শতকরা ৯৯ ভাগ পিএইচডি থিসিস ছাপা হয় না। একজন সুপারভাইজারকে সন্তুষ্ট করা আর হাজার হাজার পাঠককে খুশি করতে পারার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago