বইমেলা বিশেষ-৮

বইয়ের নির্মোহ পর্যালোচনা দরকার

চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হয়েছে গবেষক আলতাফ পারভেজের 'জুলফিকার আলী ভুট্টো : দক্ষিণ এশিয়ার কুলীন রাজনীতির এক অধ্যায়'। বইমেলা ও গবেষণা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

গত বছর প্রকাশ করেছেন মাওলানা মওদূদীর রাষ্ট্রচিন্তা। এবার জুলফিকার আলী ভুট্টোকে নিয়ে বই। এতো দিন পর ভুট্রোর পর্যালোচনা কেন, এটি কি আপনার ধারাবাহিক অন্বেষণ?
 
আলতাফ পারভেজ: একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের উপর অনুসন্ধান যেকোন সময় হতে পারে। ভুট্টো দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক চরিত্র। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাসেও তিনি গভীরভাবে আছেন। তাকে নিয়ে বাংলায় কোন জীবনী গ্রন্থ নেই। এমনকি ইংরেজিতে যেসব জীবনী গ্রন্থ রয়েছে সেগুলোকেও আমার পূর্ণাঙ্গ মনে হয়নি। এসব বিবেচনা থেকেই ভুট্টোর একটা রাজনৈতিক জীবনী লেখায় হাত দিয়েছি।

সব সময় আপনার বইয়ের কাটতি ভালো। তার মানে কি সিরিয়াস বইয়ের পাঠক বাড়ছে?

আলতাফ পারভেজ: আমার বই বলে নয়—সাধারণভাবেই পাঠক এখন গবেষণাধর্মী রাজনৈতিক সাহিত্য পছন্দ করছেন। আমাদের প্রকাশনা শিল্পে 'অপন্যাসে'র যে তরঙ্গ ছিল সেটা থেমেছে। সেটা থামার পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তৈরি ছদ্ম তারকা-লেখকদের আরেকটা তরঙ্গ তৈরি হয়েছিল। সেটাও এবার কাজ করেনি আর। ফলে আপাতত কিছু সময়ের জন্য হয়তো 'সিরিয়াস' বইয়ের একটা রাজত্ব থাকবে। তবে প্রধান প্রধান মিডিয়া হাউসগুলো এত প্রভাবশালী যে, এ অবস্থা তারা দীর্ঘদিন চলতে দিবে না। তাদের তৈরি করা লেখকরা শিগগির কোন না কোনভাবে তারকা আকারে হাজির হবেন।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির মধ্যে অপরাজনীতির চর্চাও বিদ্যমান। এর মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে আপনার গবেষণা কী বলে?

আলতাফ পারভেজ: বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্যে দক্ষিণ এশিয়া মোটাদাগে অনুপস্থিত। আমাদের এখানে মূলত অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে লেখা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি-- আমাদের এখানে শ্রীলঙ্কা নিয়ে বাংলা বই ১-২টা মাত্র। পাকিস্তান, বার্মা নিয়েও একই অবস্থা। ভারতে শ্রী লঙ্কা নিয়ে অন্তত এক শত বই পাবেন। পাকিস্তানে ভারত নিয়ে বিপুল প্রকাশনা রয়েছে। আমাদের ভাবনার পরিসরটা বাড়ানো দরকার। লেখক-গবেষকরা এগিয়ে এলে রাজনীতিবিদদের 'অপরাজনীতি'র চর্চাও ঝুঁকিতে পড়তো। সেক্ষেত্রে আবার আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগত এখনও দক্ষিণ এশিয়া মানের অনেক পেছনে রয়েছে। 

বইমেলা সংস্কৃতিতে যেভাবে ভূমিকা রাখার কথা, বুদ্ধিবৃত্তিক জের থেকে বইমেলাকে সেভাবে পরিচালনা করতে পারছি? 

আলতাফ পারভেজ: বইমেলা একটা ইভেন্ট মাত্র। বুদ্ধিবৃত্তিক জগতকে বা সংস্কৃতির পরিসরকে বইমেলা গাইড করলে সেটা ক্ষতিকরই হবে। সেই ক্ষতি কিছুটা হচ্ছেও। বইমেলা অতিরিক্ত গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করি। আমাদের বিশেষভাবে দরকার বইয়ের নির্মোহ পর্যালোচনা। এখানে সেরকম বই রিভিউ হয় কম। ফলে পাঠকের কাছে ভালো এবং খারাপ সংক্রান্ত সংবাদ পৌছাচ্ছে না। মিডিয়া যাকে ভালো বলছে—সেই ভালো লেখক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে জনসমাজে। আমাদের প্রকাশনা জগতের মান গুণগতভাবে খুবই খারাপ।

প্রজন্মের ইতিহাস ঐতিহ্য চর্চা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

আলতাফ পারভেজ: ইতিহাস ও রাজনৈতিক সাহিত্য নিয়ে কাজ করার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো মূল কাজ বাদ দিয়ে চাটুকারিতায় লিপ্ত রয়েছে। ইতিহাস ঐতিহ্য চর্চায় তরুণ-তরুণীদের দোষ নাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী হচ্ছে? শিক্ষার্থীরা সেখানে তো নিরাপত্তার সঙ্গে থাকতেই পারছে না। সেগুলোতে পড়ালেখা-গবেষণার মান নিয়ে তো কোন ভাবনা-চিন্তা নেই। তাহলে গবেষক মনটা তৈরি কীভাবে হবে? ইতিহাস ও রাজনীতিবিদ্যার একাডেমিক জগতে আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো নয়। কারণ আমাদের একাডেমিক অবকাঠামো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বারবার।

 

Comments

The Daily Star  | English
BNP opposes selective hiring for election duty

Officials for polls duty: BNP to oppose hiring from select entities

Party will ask EC not to pick people from certain organisations known to be close to a right-wing party

10h ago