আহমদ রফিক

ভাষা সৈনিকের ৯৭তম জন্মদিন কাটছে হাসপাতালে 

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

লেখক, গবেষক ও ভাষা সৈনিক আহমদ রফিকের ৯৭তম জন্মদিন কাটছে হাসপাতালে। পরিবার ছাড়া এমন জন্মদিন আগে কখনো আসেনি। তিনি ঢাকার পান্থপথের হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। 

গতকাল তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে এই হাসপাতালে আনা হয়েছে। অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন নেই। চিকিৎসকের সূত্রে তথ্যটি জানিয়েছেন লেখক ও শিক্ষক ইসমাইল সাদী। 

আহমদ রফিকের ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তার স্ত্রী মারা গেছেন ২০০৬ সালে। তিনি নিঃসন্তান। ইসমাইল সাদী বেশ কয়েক বছর ধরে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি আরও জানান, শারীরিক দুর্বলতা, কিডনি রোগসহ বয়সের  জটিলতায় আক্রান্ত।  

তিনি আরও জানান, আহমদ রফিক সার্বক্ষণিক লেখক। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে তিনি প্রায় চলনশক্তি ও দৃষ্টিশক্তিহীন। স্মৃতিশক্তি প্রখর ছিল বলে বলতে পারতেন অনর্গল। সময় কাটে না বলে বছরখানেক থেকে তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গীর সহযোগিতায় একটা উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছিলেন। শেষও করেছেন। কিন্তু সম্পাদনা করবেন কীভাবে? আশ্বস্ত করেছি দায়িত্ব নেওয়ার। কথাও দিয়েছিলেন, দেবেন। কিন্তু দেবেন-দিচ্ছি করেও দিতে পারলেন না।

হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আহমদ রফিক দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি নানা রোগে ভুগছেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস লাইটিস,ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ,পারকিন্সনস্ ডিজিজ, অ্যালঝেইমারস ডিজিজ, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ,ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স, বেড সোর ইত্যাদি। এর মাঝে সারাক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন। তবে তিনি অজ্ঞান নন, স্পর্শ করলে চোখ মেলে তাকান এবং সাড়া দেন। স্মৃতিভ্রষ্টতার কারণে নিজে কোন কথা বলেন না।

কবি ও বহুমাত্রিক লেখক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক  অসুস্থ অবস্থায় নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরে ভাড়া বাসায় একাই ছিলেন। তার দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এসেছিল ২০১৯ সাল থেকেই। সে বছর চোখে অস্ত্রোপচার করলেও অবস্থার বেশি হেরফের হয়নি। ২০২৩ সাল থেকে প্রায় দৃষ্টিহীন।

আহমদ রফিকের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল কালাম জানিয়েছেন, ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভাঙার পর থেকেই আহমদ রফিকের অবস্থা বিশেষ ভালো যাচ্ছিল না। এর মধ্যে দৃষ্টি হারানোর পর লেখালেখি বন্ধ হওয়ায় খুবই মানসিক কষ্টে ছিলেন।

পেশায় তিনি ছিলেন চিকিৎসক। জীবনভর দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশ পদক পেয়েছেন। এ ছাড়া কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে 'রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য' উপাধিতে দিয়েছে।

১৯৫৮ সালে তার প্রথম গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য, রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, একুশে পরিষদ ও ভাষা আন্দোলন জাদুঘরের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন আহমদ রফিক। সাহিত্যে গবেষণামূলক রচনার জন্য ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিল্পসাহিত্য পুরস্কার, ২০১৩ সালে রবীন্দ্র পদক লাভ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখায় ১৯৯৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া ১৯৯৭ সালে কলকাতা থেকে রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য উপাধি পান।

সর্বশেষ দুটি বই সময় প্রকাশন থেকে 'ভারত-পাকিস্তান বাংলাদেশ কথা', এই সময় পাবলিকেশনস থেকে প্রবন্ধগ্রন্থ 'শিল্প-সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য' প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালের একুশের বইমেলায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

5h ago