হাকিম সানাই গজনভি: সুফি কাব্যের পথপ্রদর্শক

ভালোবাসা জয়ী ব্যক্তি হল সেই, যাকে কিনা ভালোবাসা পরাজিত করেছে—চমৎকার এই কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন সুফি কবি হাকিম সানাই গজনভি। সুফি সাধক ও কবি জালালুদ্দিন রুমি লিখেছিলেন, 'আত্তার হলেন আত্মা, আর দুই চোখ হলেন সানাই; আমি এসেছি তাদের পরে।'

ফরিদ উদ্দিন আত্তারকে রুমি তার অধ্যাত্ম জগতের অন্যতম গুরু বলে স্বীকার করেছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি হাকিম সানাইকে করেছিলেন নয়নের মণি। বস্তুত এ দুজনকেই রুমি শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মর্যাদা দিয়েছেন। হাকিম সানাই অধ্যাত্ম জীবনের এমন এক স্তরে পৌঁছেছিলেন, যেখানে ছিল পরম শান্তির আশ্রয়। তার আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন গজনভি বংশের সুলতান বাহরাম শাহের সভাকবি।

গজনী সাম্রাজ্যের এই শাসক আনুমানিক ১১১৭ থেকে ১১৫৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। বাহরাম শাহ ছিলেন একজন যুদ্ধবাজ শাসক। হাকিম সানাই অধ্যাত্ম জীবনের দর্শন পাওয়ার পর বাহরাম শাহের দরবার পরিত্যাগ করেন।

দরবারী কবি থেকে আধ্যাত্মিক সাধক

সুফি সাধক হাকিম সানাইয়ের জীবনে এক নাটকীয় মোড় আসে। তার প্রথমদিককার রচনাগুলো ছিল মূলত সুলতানের প্রশস্তি। এক সময় গজনাভি সুলতান বাহরাম শাহ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি সানাইকে ভারতের যুদ্ধাভিযানে সঙ্গী হওয়ার আহ্বান জানান। সানাইও তার কথা মতো সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যাত্রা করতে উদ্যত হন। ইতোমধ্যে কবি সানাই সুলতানের প্রশংসায় কিছু পঙক্তি রচনা করে দরবারমুখী হয়েছেন।

কিন্তু দরবারে যাওয়ার পথে সানাই এক বাগানে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে লাই খুর নামক এক মাতাল ব্যক্তিকে দেখেন। লোকটি সুলতানের লোভ ও অন্যায় যুদ্ধকামনা নিয়ে উচ্চস্বরে সমালোচনা করছিলেন।

বাহরাম শাহকে সাধু লাই খুর তিরস্কার করে বলছিলেন, 'রাজ্য, ক্ষমতা, যুদ্ধ—এসব সবই অর্থহীন, আসল কাজ হচ্ছে স্রষ্টার পথে চলা।'

শুধু তাই নয়, সানাইয়ের প্রতিও মাতাল লাই খুর কটাক্ষ করে বলে ওঠেন, 'তুমি কেন একজন লোভী ও নির্বোধ রাজার প্রশংসায় কবিতা লিখে প্রতিভা নষ্ট করছ? কেন তুমি উচ্চতর সত্যের কথা বলছ না?'

মাতাল ব্যক্তিটির তীক্ষ্ণ সমালোচনা মনকে আলোড়িত করে। হাকিম সানাইয়ের হৃদয়কে তা ভীষণভাবে বিদ্ধ করে। আর তাতে নতুন এক স্বপ্নের বীজ বুনে দেয়। সাধু লোকটি বাহরাম শাহের অকারণ যুদ্ধস্পৃহা ও প্রাণহানির সম্ভাবনা নিয়ে যেমন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন, সেইসঙ্গে সানাইয়ের প্রতিভা নষ্ট হওয়ার জন্য বিলাপ করেছিলেন—কেন তিনি এক অহংকারী রাজার প্রশংসায় নিজেকে উৎসর্গ করছেন!

মাতাল লাই খুরের অকপট সত্যবাণী হাকিম সানাইকে এমনভাবে নাড়া দেয় যে, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে রাজদরবার ত্যাগ করেন এবং একজন সুফি সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে আধ্যাত্মিক জীবনের পথে প্রবেশ করেন। তিনি উপলব্ধি করেন, মাতালের কথাই আসলে সত্য।

সানাই শুধু রাজদরবার ত্যাগ করে ক্ষান্ত হলেন না, সুলতানের বোনের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করলেন। রাজকীয় জৌলুস জীবন প্রত্যাখ্যান করে তিনি সহজ-সরল জীবন গ্রহণ করলেন। এরপর তিনি সুফি সাধক ইউসুফ হামদানির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ইউসুফ হামদানি তাকে দীর্ঘ হজ্বযাত্রায় পাঠান, যা সানাইয়ের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেয়।

পারস্য সাহিত্যে হাকিম সানাই গজনভি

পারস্য সাহিত্য ও সুফিবাদের ইতিহাসে হাকিম সানাইয়ের (পুরো নাম: হাকিম আবুল-মাজদ মজদুদ ইবনে আদম সানাই গজনভি) নাম অবিস্মরণীয়। তাফসীর, হাদিস, ফিকহ ও সাহিত্যিক বিদ্যায় দারুণ দক্ষ ছিলেন।

এ ছাড়া, তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন। কিছুটা স্বপ্ন ব্যাখ্যার ক্ষমতাও তার ছিল। উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তার কারণে তাকে 'হাকিম' ও 'শেখ' উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

তার মথনবী কাব্য অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। হাকিম সানাই সাধারণ, স্পষ্ট ও বোধগম্য ভাষায় কবিতা রচনা করতেন। তিনি শুধু একজন কবি নন, বরং সুফি দর্শনের প্রথম মহাকাব্যিক কণ্ঠস্বর। আনুমানিক ১০৮০ খ্রিস্টাব্দে (৪৭০ হি.) আফগানিস্তানের দক্ষিণাংশের গজনি নগরীতে তার জন্ম। গজনভি সাম্রাজ্যই ছিল তার সাহিত্যের রাজনৈতিক পটভূমি।

হাকিম সানাই গজনীর সুলতানের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন [“সাফাভি যুগের এক পার্সিয়ান মিনিয়েচার যেখানে কবি সানাইকে এক গজনাভি সুলতানের দরবারে দেখানো হয়েছে; এটি হাদিকাতুল হাকিকা গ্রন্থ থেকে নেওয়া, যার তারিখ ৯৮৭ হিজরি / ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দ, বর্তমানে এটি নেদারল্যান্ডসের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত”]

আগেই বলা হয়েছে, তিনি সুলতান বাহরাম শাহের দরবারে যুক্ত ছিলেন। গজনীতে জন্মগ্রহণকারী এই কবি ছিলেন একাদশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী সুফি কবি। তিনি বিশ্বাস করতেন, সময়ই সবকিছুর নিয়ামক আর সময়েই তা ঠিক হয়ে যায়। প্রজ্ঞাবান অন্তরই বিশ্বাস করে, অন্ধকার কেটে একসময় আলো আসবেই। তার কথায়, 'এও কেটে যাবে, সময় সব ম্লান করে দেয়।'

জ্ঞানকে তিনি ভেবেছেন মুক্তির উপায় বলে। তিনি বলেন, 'যদি জ্ঞান আত্মাকে আত্মার বন্ধন থেকে মুক্ত করতে না পারে, তাহলে এমন জ্ঞানের চেয়ে অজ্ঞানতা অনেক ভালো।'

সানাই ছিলেন এমন একজন কবি, যিনি পারস্য সাহিত্য ও ইতিহাসে অতি প্রভাবশালী। বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্মের কবিদের ওপর এই প্রভাব অপরিসীম।

কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, সানাই প্রথম কবি, যিনি গভীরভাবে সুফি তত্ত্বকে ফারসি কবিতায় আনেন, যদিও তার আগে অন্যান্য কবিরাও তাদের কবিতায় সুফি বা আধ্যাত্মিক ভাবনা প্রকাশ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, মহাকবি ফিরদৌসীর 'শাহনামা'তেও এমন উপাদান পাওয়া যায়। সানাইয়ের সুফি দর্শন যদিও কিছুটা ক্বালন্দর ও আত্মনিন্দাপন্থীদের (আহলে মেলামত) চিন্তাভাবনা থেকে প্রভাবিত, তবে তা মানবিক ও পরিমিত।

হাকিম সানাইয়ের শ্রেষ্ঠ কীর্তি 'হাদিকাত আল-হাকিকাহ ও শারিয়াত আল-তারিকাহ'—যার অর্থ 'সত্যের সুরক্ষিত উদ্যান ও চলার পথ'। এটি ফারসি ভাষায় সুফিবাদের প্রথম মরমী মহাকাব্য হিসেবে বিবেচিত। গ্রন্থটিতে সৃষ্টিকর্তা, প্রেম, দর্শন ও যুক্তি নিয়ে তার গভীর অন্তর্দৃষ্টির প্রকাশ ঘটেছে। প্রায় নয় শতাব্দী ধরে এ রচনা সুফি সাহিত্য ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে।

হাকিম সানাই মানুষকে লালসা, লোভ ও ক্ষণস্থায়ী মানসিক উত্তেজনা থেকে মুক্ত হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তার কাছে ঐশী জ্ঞানই হয়ে ওঠে সত্য (হক) জ্ঞান।

তার মতে, মোহ ও লালসা ঐশী জ্ঞানের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। তার কাব্য শুধু সাহিত্যমূল্যে নয়, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকেও চৈতন্যে আলোর দীপ্তি এনে দেয়। বিগত নয়শো বছর ধরে তার কাব্য আলো জ্বালিয়েছে মানুষের হৃদয়ে। নিজেকে চিনতে পারাই জগতের বড় শক্তি বলে তিনি প্রকাশ করেছেন। তার মতে, যে জন স্বীয় আত্মাকে চিনতে পারে, সে-ই অসীমকে ধারণ করতে পারে।

তিনি বলেন, 'তুমি, যে কীনা নিজের প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে অপারগ, সেখানে তুমি কী করে অসীমকে জানতে পারবে?'

অসীমকে জানার এই প্রক্রিয়া নিয়ে বহু সুফি সাধকই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার রহস্যময় রাস্তার পথিক হয়েছেন। হাকিম সানাই যেন সে পথের মহান উত্তরাধিকার। পরবর্তীকালে ফরিদ উদ্দিন আত্তারের সঙ্গে এই হাকিম সানাইকে মহান অনুপ্রেরণাদাতা হিসেবে স্বীকার করেন মাওলানা রুমি।

হাকিম সানাই অসংখ্য মরমীবাদী শ্লোক রচনা করেছিলেন। তার প্রধান সাহিত্যকর্ম 'হাদীকাতুল হাকীকা' ফারসি ভাষায় লিখিত প্রথম অতীন্দ্রিয়বাদী (সুফিবাদী) মহাকাব্য। স্রষ্টা সম্পর্কিত এই সাহিত্যকর্মটি প্রেম, দর্শন ও যুক্তি-বুদ্ধি সম্পর্কে গভীর ধারণা প্রকাশ করে।

প্রায় ৯০০ বছর ধরে 'হাদীকাতুল হাকীকা' ক্লাসিক সাহিত্য হিসেবে পঠিত হচ্ছে। সুফি সাহিত্যের পাঠ্যপুস্তক হিসেবেও তা পরিগণিত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে তিনি শিখিয়েছেন—প্রেমের পথই একমাত্র পথ। পার্থিব চাওয়া আর অপরিমিত আকাঙ্ক্ষাকে অতিক্রম করে তবেই প্রেমের পথে চলতে হয়। তার কথায়—

যখন পথ একটি প্রাণকে জ্বালিয়ে তোলে, 
সেখানে স্থির থাকা সম্ভব নয়।
পা মাটিতে স্পর্শ করে,
কিন্তু দীর্ঘক্ষণ নয়।

ফারসি সাহিত্যে হাকিম সানাইয়ের কবিতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কাসিদা (প্রশস্তি কবিতা), গজল (গীতি) ও মসনভি (ছন্দোবদ্ধ দ্বিপদী) ব্যবহার করে সুফিবাদের দার্শনিক, অতীন্দ্রিয় ও নীতিগত ভাবধারা প্রকাশ করেছেন তিনি। এসব ক্ষেত্রে প্রথম পথ প্রদর্শক কবি হিসেবে পারস্য কবিতায় সানাইয়ের অবদান অতুলনীয়। জালালুদ্দিন রুমির স্বীকৃতি থেকেই স্পষ্ট যে, সুফি সাহিত্যে সানাইয়ের কাব্যের প্রভাব কতটা গভীর ও স্থায়ী।

হাদিকাতুল হাকীকাহ গ্রন্থটি সুফি দর্শন ও শিক্ষার এক ভিত্তিপ্রস্তরস্বরূপ। যদিও সানাইয়ের জীবন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া দুষ্কর, তবুও তার কবিতাগুলো জীবনবোধ ও আত্মজীবনীর ইঙ্গিত। সুফি কবি ফরিদউদ্দিন আত্তারের সঙ্গে সানাইয়ের নাম প্রায়শই একইসঙ্গে উচ্চারিত হয়। কারণ উভয়েরই প্রভাব পরবর্তী যুগের সুফি কবি ও আধ্যাত্মিক সাধকদের ওপর পড়েছে। নিচে 'হাদিকাতুল হাকীকাহ' থেকে একটি কবিতা বা কাব্যাংশ অনুবাদে উপস্থাপন করছি— সত্যের বাগান (উদ্ধৃতাংশ)

দৃষ্টিসম্পন্ন আত্মা বুঝতে পারে—
স্রষ্টা ছাড়া অন্য কাউকে প্রশংসা করা
মূর্খতারই পরিচয়।
নিজস্ব সত্তা তার অশ্বারোহী দলের এক দাসমাত্র;
বিবেক সেখানে বিদ্যালয়ের নতুন ছাত্র।
এই অতিথিশালায় যুক্তি আসলে কী—
ঈশ্বরের লেখা এক বাঁকানো আঁকিবুকি ছাড়া?
তিনি যদি নিজেকে না দেখাতেন,
আমরা তাকে কীভাবে চিনতাম?
যদি তিনিই পথ না দেখান,
আমরা কীভাবে তাকে জানতে পারি?
আমরা চেষ্টা করেছিলাম
যুক্তির পথে তাকে পেতে—
সেটা ফলপ্রসূ হলো না;
কিন্তু যেই মুহূর্তে আত্মসমর্পণ করলাম,
সব বাধা যেন অদৃশ্য হয়ে গেলো।

[The Walled Garden of Truth: The Hadiqa, Translator: D.L. Pendlebury]

আধ্যাত্মিক রচনা ও দর্শন

ইউসুফ হামদানির অনুপ্রেরণায় তীর্থযাত্রা করেছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে এসে সানাই তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি 'হাদিকাতুল হাকীকাহ' রচনা করেছিলেন। ঈশ্বর, প্রেম ও যুক্তির দার্শনিক ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ এ গ্রন্থের শিরোনামের দ্বৈত অর্থও তাৎপর্যপূর্ণ, 'দেয়ালঘেরা উদ্যান' যেমন বাগানের ইঙ্গিত করে, তেমনি আরবিতে এর অর্থ 'বেহেশত/স্বর্গ'। এখানে দেয়ালবেষ্টিত উদ্যান তথা বাগানতুল্য বেহেশতের প্রতিরূপ ইঙ্গিতপূর্ণ।

পরবর্তী কবিতাগুলোতে সানাই শেখালেন—সত্যিকারের আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য 'আত্মকেন্দ্রিকতা' পরিত্যাগ করা আবশ্যক। এর মূল চাবিকাঠি হলো প্রেম। প্রেমহীন হলে মানুষ আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, 'তিনি সেই এক নয় যা বুদ্ধি ও জ্ঞানের মাধ্যমে বোঝা যায় এবং সেই পরম নয় যা ইন্দ্রিয় ও কল্পনা দিয়ে চেনা যায়।'

হাকিম সানাই গজনভির সমাধি

তার রচনাগুলো ছিল সহজ-সরল ভাষায় উদ্দীপ্ত, কিন্তু গভীর রূপক ও প্রতীকের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক অর্থ সম্বলিত। এ কারণেই ধর্মতত্ত্ববিদরা যুগে যুগে তার কবিতা অধ্যয়ন করেছেন। তার বিশ্বাস ছিল, যুক্তির পথে খোদা মেলে না। তাকে মেলাতে হলে প্রয়োজন প্রবল অনুভব। এই অনুভবের ঐকান্তিকতা আসে রহস্যের পথে, যার প্রধানতম রাস্তা ভালোবাসা।

তাই তিনি বলেন, 'যেখানে যুক্তি এখনো রহস্যের অন্বেষণ করে চলেছে, সেখানে তুমি তোমার অনুসন্ধান ভালোবাসার খোলা ময়দানে নিঃশেষ করে দাও।'

হাকিম সানাই তার জীবদ্দশায় অসংখ্য আধ্যাত্মিক কবিতা রচনা করেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'জটিল প্রশ্ন', 'রহস্য' ও 'অলিদের পথ'। আজও সানাইকে সুফি কাব্যের পথপ্রদর্শক হিসেবে স্মরণ করা হয়। তার কাব্য মানবপ্রেম, সত্য অনুসন্ধান ও আত্মশুদ্ধির আহ্বান জানানোর জন্য অমর হয়ে আছে।

মহান এই কবি ১১৩১ থেকে ১১৪১ সালের মধ্যে পরলোকগমন করেন। আফগানিস্তানের গজনীতে আজও তার সমাধি সুফি দর্শন ও মধ্যযুগের ইসলামী স্থাপত্যের এক ঐতিহাসিক সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই সমাধি স্থান আধ্যাত্মিক ভাবনা ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে হাকিম সানাইয়ের উত্তরাধিকার বহন করছে।

সানাই গজনভি শুধু একজন কবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সত্য অনুসন্ধানী এক দার্শনিক, যিনি কবিতার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও ঐশী জ্ঞানের পথে আহ্বান করেছিলেন। পারস্য সাহিত্য ও সুফি কাব্যের ইতিহাসে তার অবদান তাই আজও অনন্য ও স্মরণীয়।

Comments

The Daily Star  | English

SC Secretariat Ordinance: Judges may hold executive posts

Lower court judges will be able to hold executive positions in the law ministry as well as state entities even after the establishment of a Supreme Court secretariat aimed at keeping the judiciary free from the executive’s influence, says a draft ordinance.

3h ago