সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন তলব করেছে বিআরটিএ

এবছর ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে মিলিয়ে ১৫ দিনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের যে প্রতিবেদন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি দিয়েছে সেটিকে "অসামঞ্জস্যপূর্ণ" ও "উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

গতকাল মঙ্গলবার যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক প্রতিবেদনে জানায়, এবারের ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে মিলিয়ে ১৫ দিনে দেশে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছেন।

আজ বুধবার এর প্রেক্ষিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির কাছে ওই প্রতিবেদন তলব করে চিঠি পাঠিয়েছে বিআরটিএ।

চিঠিতে আগামী ৩ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিকে তাদের প্রতিবেদনে উঠে আসা সড়ক দুর্ঘটনার বিস্তারিত তথ্য- দুর্ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান, নম্বরসহ গাড়ির বিবরণ, নাম ঠিকানাসহ নিহত ব্যক্তির তালিকা বিআরটিএ'র কাছে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

বিআরটিএ'র সহকারী পরিচালক (সাধারণ) আবদুল আউয়াল স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, এবারে পবিত্র ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি ছিল ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক বিআরটিএতে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা ছিল ১৭ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এ কারণে ঈদযাত্রাকে সর্বোচ্চ ১৭ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিন বিবেচনা করা যায়। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ঈদযাত্রাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল অর্থাৎ ১৫ দিন বলা হয়েছে। কীসের ভিত্তিতে ঈদযাত্রাকে ১৫ দিন ঘোষণা করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে দুর্ঘটনার হতাহতের সংখ্যা অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করার লক্ষ্যেই মনগড়া ঈদযাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, ঈদযাত্রাকালীন- ১৭ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৯দিনে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব অনুযায়ী ১৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৬ জন নিহত ২৫৮ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পত্রপত্রিকা ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় ও যাচাই বাছাই করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যা সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিআরটিএ'র প্রতিবেদনের চেয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫১টি, নিহত সংখ্যা ৮৯ জন ও আহত সংখ্যা ৫৫ জন অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উক্ত রিপোর্ট অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

চিঠিতে বিআরটিএ আরও জানায়, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠান মাঝে মধ্যে সরেজমিনে যাচাই-বাছাই ব্যতীত দুর্ঘটনার প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যের সোর্স প্রায় একইরকম হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান একেক প্রতিষ্ঠানের একেক রকম হয়, যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। সরেজমিনে যাচাই-বাছাই ব্যতীত সঠিক দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। কোনো তথ্য প্রকাশ করার আগে তা যাচাই-বাছাই করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রস্তুতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল বিআরটিএতে এক সভা হয়। সভায় শুধু সেকেন্ডারি ডেটার (পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদের) ভিত্তিতে তৈরি করা পরিসংখ্যান জনসম্মুখে প্রকাশ না করার বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই একমত হয়েছিল।

এছাড়া, বিআরটিএ'র পক্ষ থেকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার তথ্য/চিত্র প্রকাশ করার আগে সরেজমিনে তথ্যাদি যাচাই বাছাই করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পত্রও দেওয়া হয়েছিল বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে ভাষায় চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা থেকে মনে হয় তারা আসলে আমাদেরকে হুমকির মধ্যে রাখতে চায়। এর ফলে দুর্ঘটনা কমবে বলে আমরা মনে করি না। বরং সরকারের উচিত আমাদেরকে সহযোগী হিসেবে নেওয়া। প্রয়োজনে তারা আমাদেরকে পরামর্শ দিতে পারে কিন্তু এভাবে চিঠি দিতে পারে না।'

'সরকার একদিকে দুর্ঘটনা কমাতে ব্যর্থ হয়েছে, অন্যদিকে আমাদেরকে থামাতে চায় কিন্তু এতে করে দুর্ঘটনা কমবে না,' বলেন তিনি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে-পরে ১৫ দিনে রেলপথে ২৭টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ৫৫ জন আহত এবং নৌপথে ১০টি দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ২২ জন নিখোঁজ হয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

5h ago