সদরঘাটে নিহত ৫: লঞ্চে ওঠার আগেই লাশ হলো স্বামী-স্ত্রী-সন্তান

সদরঘাটে আজ বিকেলে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে আঘাত করলে এক শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের গাছা এলাকার একটি গার্মেন্টসের কর্মী বেলাল হোসেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুক্তা ও তাদের ৪ বছর বয়সী সন্তান মাইশাকে নিয়ে পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন।

লঞ্চে বাড়ি যাবেন বলে দুপুর নাগাদ তারা সদরঘাট পৌঁছান। কিন্তু লঞ্চে ওঠার আগেই হঠাৎ মোটা রশির আঘাতে গুরুতর আহত হন স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ছিটকে পড়েন বুড়িগঙ্গায়।

এ সময় আরও আহত হন দুজন। পাশেই মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক ৫ জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

তারা হলেন-গার্মেন্টসকর্মী বেলাল হোসেন (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা খাতুন (২৩) ও তাদের ৪ বছর বয়সী সন্তান মাইশা (৪) এবং রবিউল (১৯) ও রিপন হাওলাদার (৩৮)।

আজ বৃহস্পতিবার ঈদের দিন বিকেল ৩টার দিকে সদরঘাট লঞ্চঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

রবিউল সদরঘাটে পাউরুটি বিক্রি করতেন এবং রিপন মোটরসাইকেলে রাইডশেয়ারিং করতেন বলে জানা গেছে।

সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালে দেখা হয় নিহত বেলালের স্ত্রী মুক্তার বোন হনুফা খাতুনের (৩৫) সঙ্গে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বেলাল গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করার পাশাপাশি নিজে টেইলারিংয়ের কাজও করতেন।   

ফ্যাক্টরির বেতন ও নিজের আয়সহ প্রতিমাসে ভালোই রোজগার ছিল তার। বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। গতমাসেই তিন কাঠা জমি কেনেন গ্রামের বাড়িতে। 

ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসতে গাজীপুর থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু আকস্মিক দুর্ঘটনায় বাড়ি যাওয়া হলো না তাদের।

এমভি তাশরিফ ৪ ও এমভি পূবালী ১ লঞ্চ দুটি রশি দিয়ে পন্টুনে বাঁধা ছিল। এ দুই লঞ্চের মাঝ দিয়ে ফারহান নামের আরেকটি লঞ্চ ঢুকতে গেলে এমভি তাশরিফ ৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, লঞ্চের মোটা রশি ছিঁড়ে এসে বেলাল ও মুক্তার মাথায় আঘাত করে। আর ছোট মাইশা ছিটকে পড়ে যায় পানিতে। 

এদিকে নিহত রবিউল জিঞ্জিরায় থাকতেন বলে সদরঘাটের বেশ কয়েকজন হকার ডেইলি স্টারকে জানান। ছোটবেলা থেকে সে ঘাটে পাউরুটিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতেন।

হাসপাতালে তার মাকে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন জানান, দরিদ্র পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। অসুস্থ মা ও বাবার চিকিৎসার খরচ চালাতেন রবিউল।

অপর নিহত রিপনের গ্রামের বাড়ি বরগুনা। পরিবারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে। জীবিকার তাগিদে একাই ঢাকার নতুনবাজার এলাকায় থাকতেন রিপন, করতেন মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং। আজ ঈদের দিন বাড়ি যাচ্ছিলেন ভাতিজিকে নিয়ে।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, লঞ্চের রশি ছিঁড়ে রিপনের মাথায় আঘাত করলে, সেখানেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। তার সঙ্গে থাকা ভাতিজির অবশ্য আঘাত লাগেনি। 

দুর্ঘটনার পর ফারহান ৬ ও তাশরিফ ৪ লঞ্চ দুটির রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুটি লঞ্চের পাঁচ কর্মীকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ।

পুরো ঘটনা তদন্তে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (ক্রয় ও মজুদ) রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যাত্রীদের নিহতের ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দেওয়া হবে বলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

4h ago