‘সার ও সেচের দাম কিরাম করে দিবানে’

ঝিনাইদহ, বালিয়াডাঙ্গা, শিলাবৃষ্টি, ঝড়,
শীষ থেকে সব ধান ঝরে গেছে। ছবি: আজিবর রহমান/স্টার

ঝিনাইদহের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক খালেক শেখ। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ২ বিঘা জমির ধান। শুধু খালেক নয় হঠাৎ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার অনেক কৃষক। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার প্রায় ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খালেক শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাত্র ১০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে আমাগের সব শেষ। এবার ধান চাষে ম্যালা খরচ হয়েছে। সার ও সেচের দাম কিরাম করে দিবানে সেই চিন্তায় পড়িছি। ২ বিঘা জমির একটা ধানও ঘরে তুলতি পারব না। ১ বিঘা জমির পিয়ারা সব পড়ে গিয়েছে। এখন কীভাবে সংসার চালাব।'

গত সোমবার বিকেল ৩টায় ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। প্রায় ১০ মিনিট ধরে হওয়া শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার কয়েক হেক্টর জমির কাঁচা-পাকা ধান নষ্ট হয়ে যায়। গাছ থাকলেও ঝরে পড়েছে ধান। এছাড়াও কলা, পেয়ারা ও কলা গাছসহ অনেক ফসলি জমির খেত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, ত্রিলোচনপুর, বানুড়িয়া, কাদিরকোল, ঘিঘাটি, গবরডাঙ্গা, পাতিবিলা, শ্রীরামপুরসহ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কৃষি অফিস জানায়, এ বছর বোরো মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩৯ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়া কলা খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমির। ৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়া ফুল খেতের মধ্যে ১৫ হেক্টর জমির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আম, ড্রাগনসহ অন্যান্য ফল চাষ হয়েছিল ৩২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৩০ হেক্টর জমির ফল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শাক-সবজি চাষ হয়েছিল ৬৪৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৩০ হেক্টর জমির শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার কয়েকটি গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ধানের গাছ দাঁড়িয়ে থাকলেও শীষ থেকে সব ধান ঝরে মাটিতে পড়ে গেছে। মাঠে কেটে রাখা ধানও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে কাদিরকোল গ্রামে একটি মাদ্রাসার টিনের ছাউনি উড়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষক শাজাহান শেখ জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। শিলাবৃষ্টিতে গাছ থেকে সব ধান ঝরে গেছে। একটা ধানও তিনি বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন না। দেড় বিঘা জমিতে তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। এখন এক টাকাও পাবেন না।

পেয়ারা চাষি শরিফুল ইসলাম জানান, শিলা বৃষ্টিতে বাগানের প্রায় এক থেকে দেড়শ মণ পেয়ারা নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও, বড় পেয়ারার সঙ্গে গুটিও ঝরে গেছে। নতুন করে গুটি না আসা পর্যন্ত পেয়ারা তোলা সম্ভব হবে না। ঝরা পেয়ারা বাজারে বিক্রিও হচ্ছে না। তার প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গাঁদা ফুল চাষি আরিফ হোসেন জানান, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফুল ঝরে গেছে। গাছের সব মাথা ভেঙে গেছে। ফুল বিক্রি করে খরচের টাকা উঠানো সম্ভব না।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুব আলম রনি জানান, হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ধান, আম, কলাসহ উপজেলার বিভিন্ন ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

15h ago