লালমনিরহাট

চোরাচালানের কাভার্ড ভ্যান ছাড়ার অভিযোগে এএসআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

ছবি: স্টার

মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে চোরাচালানের পণ্যবোঝাই একটি কাভার্ড ভ্যান ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আক্তারুজ্জামান আক্তারের বিরুদ্ধে। কাভার্ড ভ্যানটি থেকে কয়েক লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় কসমেটিকস সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

ঘটনা তদন্তে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শাহাদত হোসেন সুমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা এজেআর কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ড ভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ট-১৩-৪৪২৭) লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী এলাকায় আটক করা হয়। এএসআই আক্তারের নেতৃত্বে আটক ভ্যানটি থানায় না নিয়ে লালমনিরহাট শহরের আলোরুপা মোড়ের একটি গোপন স্থানে রাখা হয়।

সূত্র আরও জানায়, কাভার্ড ভ্যানটির ভেতরে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা ভারতীয় জিরা, শাল চাদর ও কসমেটিকস ছিল। ওই সময় ভ্যান থেকে কসমেটিকস নামিয়ে নেওয়া হয়। তবে জিরা ও শাল-চাদরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রফাদফা হওয়ায় সেগুলো ভ্যানেই থেকে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরদিন বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল শহরের আলোরুপা মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ড ভ্যানটি আটক করে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী তল্লাশি চালায়। কোনো অবৈধ পণ্য পাওয়া যায়নি মর্মে পরে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঘটনাস্থলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর একটি দল এসে ভ্যানটি পুনরায় আটক করে। এই তল্লাশিতে ভ্যানের ভেতর থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা ২ হাজার ৫১১ কেজি ভারতীয় জিরা ও ১৮০টি শাল-চাদর উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে কাভার্ড ভ্যানটির চালক মমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ম্যানেজারের অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এজেআর কুরিয়ার সার্ভিসের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার ম্যানেজার উজ্জল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ কাভার্ড ভ্যানটি আটক করলেও থানায় না নিয়ে অন্যত্র রেখেছিল। পুলিশ কীভাবে বিষয়টি পরিচালনা করেছে, তা তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে চাই না।'

গাড়িটিতে কী পরিমাণ কসমেটিকস, জিরা ও শাল-চাদর ছিল—এ বিষয়ে তিনি অবগত নন বলেও জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে এএসআই আক্তারুজ্জামান আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অবশ্য তিনি আগে বলেছিলেন, 'গাড়িটি আটকের পর থানায় এনে তল্লাশি করেছি। তবে তল্লাশি করে কোনো অবৈধ পণ্য পাইনি। ওসি স্যারের নির্দেশে প্রায় তিন ঘণ্টা পর গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। গাড়িতে ভারতীয় জিরা, শাল-চাদর কিংবা কসমেটিকস দেখিনি।'

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বলেন, 'কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে কোনো অবৈধ পণ্য নেই—এমন তথ্য সংশ্লিষ্ট অফিসার আমাকে জানিয়েছিলেন। সে কারণেই গাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।' গাড়িটি থানায় আনা হয়নি বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শাহাদত হোসেন সুমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমি ঘটনাটি তদন্ত করছি। এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।'

লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনাটি জানার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি একটি গুরুতর ঘটনা। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

Comments