ত্বকী হত্যা

র‌্যাবের ‘খসড়া প্রতিবেদন’ ৯ বছরেও কেন পূর্ণাঙ্গ হলো না

ত্বকী হত্যার ১ দশক
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ১ বছরের মাথায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জানিয়েছিল, ত্বকী হত্যার কারণ স্পষ্ট, আসামিও চিহ্নিত। এই হত্যা মামলার খসড়া প্রতিবেদনও প্রায় তৈরি। দ্রুতই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। অথচ এর পরের ৯ বছরেও র‌্যাবের সেই 'খসড়া প্রতিবেদন' পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এখন পর্যন্ত তারা আদালত থেকে ৬০ বার সময় নিয়েছে।

প্রশ্ন এসেছে, ৯ বছরেও কেন র‌্যাবের সেই খসড়া প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ হলো না? কারণ কী?

এই হত্যার বিচার না হওয়ায় জবাবদিহিতার অভাব ও বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি শক্তিশালী হচ্ছে। অপরাধ করলে বিচার হবে না, রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাবে, সেই বার্তাই পাওয়া যাচ্ছে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ-লেখক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীদ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমরা প্রত্যেক বছরই সভা করে বিবৃতি দিয়ে এই হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি। শুধু ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচার নয়, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড যাতে আর না হয়, সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া, জবাবদিহি নিশ্চিত করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা— এগুলো আমাদের দাবি।'

'কিশোরদেরকে যেভাবে অপরাধী বানানো হচ্ছে, তাদের নিয়ে গ্যাং বানানো হচ্ছে, সেই কিশোরদের উল্টো দিক ছিল ত্বকী। সে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। লাইব্রেরিতে বই আনতে গিয়েছিল সে। ত্বকী কবিতা লিখত, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাকে হত্যা করার মধ্যে দিয়ে কিশোরদের মেধার ওপর একটা আক্রমণ করা হয়েছে। এটা যে একটা রাজনৈতিক আক্রমণ, সেটা তো বোঝা যাচ্ছে', যোগ করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, 'যদিও ত্বকী হত্যার ১ বছরের মাথায় বলা হয়েছিল, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়ে আছে, কিন্তু এরপরেও সেই হত্যার বিচার না হওয়ার যে রহস্য, এটার কোনো ব্যাখ্যা সরকার বা তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে না। এই হত্যার বিচার না হওয়ায় জবাবদিহিতার অভাব ও বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি শক্তিশালী হচ্ছে। অপরাধ করলে বিচার হবে না, রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাবে, সেই বার্তাই পাওয়া যাচ্ছে।'

ত্বকী হত্যা সংক্রান্ত তদন্ত হয়ে সবাই চিহ্নিত হওয়ার পরেও কেন বিচার হলো না ১০ বছরেও? ত্বকী ও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে শাসন ও গণতন্ত্র সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে।

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মানুষ খুনের বিচার করতে হয় উল্লেখ করে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ত্বকী হত্যার ১০ বছর হয়ে গেল। আবার সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৯৬ বার পেছাল। মহামান্য আদালত কেন এত অনুমতি দেন, আমি জানি না। তবে, এটা বোঝা যাচ্ছে যে র‌্যাব সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কিন্তু এরপরেও কেন তাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে?'

'ত্বকী হত্যা সংক্রান্ত তদন্ত হয়ে সবাই চিহ্নিত হওয়ার পরেও কেন বিচার হলো না ১০ বছরেও? ত্বকী ও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে শাসন ও গণতন্ত্র সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে', যোগ করেন তিনি।

ত্বকী হত্যা মামলাটি এখনো তদন্তাধীন এবং তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা  র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা

'মামলাটি একটু জটিল' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বেশ কয়েকবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলির কারণে পরিবর্তন হয়েছে। সব মিলিয়ে কবে নাগাদ এই মামলার তদন্ত শেষ হবে, তা বলতে পারছি না।'

হত্যাকাণ্ডের ১ বছরের মাথায় অভিযোগপত্র প্রায় তৈরি বলার বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, 'ওই সময় কে কী বলেছে, তা আমি ঠিক বলতে পারব না। কারণ ওই সময় আমি ছিলাম না।'

নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'অঘোষিত ইনডেমনিটি'র কারণে এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হচ্ছে না।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কিছুই কারও অজানা নয়। আমরা বারবার বলে আসছি, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ তাদের সহযোগীরা সরাসরি যুক্ত। র‌্যাব ১ বছরের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে সবই জানালো। তারপর সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের পর থেকেই সবকিছু বন্ধ। প্রধানমন্ত্রীর অঘোষিত ইনডেমনিটির কারণেই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল হচ্ছে না।'

'ত্বকী হত্যার বিচার হবেই। এই সরকার থাকতে হোক কিংবা পরেই হোক। এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে', বলেন রফিউর রাব্বি।

Comments

The Daily Star  | English

Ducsu polls: Security measures tightened at Dhaka University

Voting for the long-awaited Ducsu and hall union elections began this morning after a six-year pause

59m ago