মিতু হত্যা মামলা

সাবেক এসপি বাবুলসহ ৭ জনের বিচার শুরু

বাবুল আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করার আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।

আজ সোমবার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত বাদী ও বিবাদী উভয়ের শুনানি শেষে সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য ৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন।

বন্দরনগরীর জিইসি এলাকায় ছেলের সামনে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় ২০১৬ সালের ৬ জুন পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সাবেক এসপি বাবুল।

অন্য আসামিরা হলেন- কামরুল ইসলাম মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা ওরফে হানিফুল হক, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম কালু ও মো. শাহজাহান মিয়া। ভোলা এখন জামিনে রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মুসা পলাতক।

শুনানির শুরুতে আইনের আলোকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে আসামিদের সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের মতামত পেশ করে। আদালত বাবুলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১ ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা ৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য আদালতে আবেদন করেছি। শুনানি শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আমরা আদালতকে বলেছি, পরিকল্পনার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে এবং বাবুল যখন ঢাকায় ছিলেন তখন এই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।'

'বাবুল মুসা, ভোলা, মোতালেব ও ওয়াসিমকে ভাড়া করে বিভিন্ন সময়ে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে বাবুল নিজেই মামলাটি করে এর মোটিভ ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন', বলেন পিপি।

পিপি বাবুলকে সুষ্ঠু বিচারকার্য সম্পাদনের জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করলেও বাবুল আক্তার নিজেই এ বিষয়ে আদালতে তার ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেন।

এসময় আদালত বলেন, প্রসিকিউশনের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কোনো আদেশ দেবে না, তবে অভিযুক্তরা চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা বা অন্যান্য কারণে আদালত বা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের মতামত জানতে পারেন।

প্রায় এক ঘণ্টার শুনানিতে বাবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির আদালতকে বলেন, মামলায় অভিযোগ গঠনের মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ ও নথি নেই। বাবুল মামলার প্রথম বাদী হলেও তার শ্বশুর আরেকটি মামলা করেন এবং তদন্তকারীরা দ্বিতীয় মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং পরে প্রথম মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন।

শিশির আদালতকে বলেন, প্রথম মামলায় দ্বিতীয় মামলার তথ্য ও নথি বিবেচনা করা যাবে না এবং দ্বিতীয় মামলায় দেওয়া জবানবন্দি কীভাবে প্রথম মামলায় যুক্ত হলো?

১১ জন সাক্ষী ২০১৭ সালে এবং পরে ২০২১ সালে আবার ১৬১ ধারায় তাদের বিবৃতি দিয়েছিলেন। তবে সাক্ষীদের বক্তব্যের প্রথম সংস্করণটি দ্বিতীয়টির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। এ ছাড়া, হত্যাকাণ্ডের পরপরই ২৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দি মামলার নথিতে রেকর্ড রয়েছে। ২৬ জনের জবানবন্দিতে তারা মামলায় বাবুলের নাম উল্লেখ করেননি, বলেন শিশির।

মুসা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিল, কিন্তু মুসা কোথায়? বাবুল ও গায়ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পিবিআই উল্লেখ করেছে। কিন্তু সেই নারী এখন কোথায়? শুনানির সময় প্রশ্ন তোলেন এই আইনজীবী।

পরবর্তীতে শিশিরের পাল্টা জবাব দেয় রাষ্ট্রপক্ষ।

এর আগে, আদালতে জমা দেওয়া ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিটে ৯৭ জনকে সাক্ষী করে পিবিআই।

২০২১ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম পিবিআই মেট্রো অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুল আক্তারকে এনে পরে তাকে তার শ্বশুরের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পিবিআই বলছে, মামলার পলাতক আসামি এবং এসপি থাকাকালে বাবুলের দীর্ঘদিনের সোর্স কামরুল ইসলাম মুসাকে বাবুল ব্যবসায়িক অংশীদারের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন। পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, হত্যার পরপরই ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, বাবুল কক্সবাজারে অতিরিক্ত এসপি হিসেবে থাকাকালে এক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং সেই সম্পর্কের জের ধরে বাবুল ভাড়াটে খুনি দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।

এ বিষয়ে আদালতে বাবুলের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হক এবং পলাতক আসামি মুসার আত্মীয় কাজী আল মামুন সাক্ষ্য দেন। পিবিআইয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সাইফুল বলেছিলেন যে- তিনি তাদের ব্যবসার লাভের অংশ থেকে বাবুলের অর্থের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে মুসার কাছে টাকা পাঠিয়েছিলেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে তার স্কুলবাসে নিয়ে যাওয়ার সময় ছুরিকাঘাত ও গুলি করে মিতুকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর বাবুল বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Nepal PM Oli quits as anti-corruption protests spiral, his aide says

The Himalayan country has struggled with political instability and economic uncertainty since protests led to the abolition of its monarchy in 2008.

1h ago