বাড্ডায় চাঁদাবাজি: তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা বিদেশ থেকে চালায় গ্যাং

রাজধানীর বাড্ডা গুদারাঘাটে স্থানীয় একটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অফিসে মুখোশ ও হেলমেট পরা এক যুবক খুব অল্প সময়ের জন্য ঢোকেন এবং বেরিয়ে যাওয়ার সময় পকেট থেকে বন্দুক বের করে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীর দিকে তাক করে গুলি ছোড়েন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, হেলমেট পরা ওই ব্যক্তি গুলি চালিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

ঘটনার পরপরই ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এক মালিক একটি ভয়েস মেসেজ পান, যাতে বলা হয়, 'আমি রবিন, মালয়েশিয়া থেকে বলছি। যা ঘটেছে তা একটি সতর্কবার্তা। পরেরবার রক্ত ঝরবে।'

পুলিশের ধারণা, তালিকাভুক্ত পলাতক অপরাধী রবিন রাজধানীর বাড্ডায় চাঁদাবাজদের একটি চক্র নিয়ন্ত্রণ করেন।

পুলিশের কাছে গত ১১ ফেব্রুয়ারির আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মেরুল বাড্ডার একটি রেস্তোরাঁয় একদল লোক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে ম্যানেজারকে মারধর করছে এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করছে।

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা মামলা করার সাহস না পাওয়ায় এসব ঘটনায় বাড্ডা থানা পুলিশ দুটি মামলা করেছে।

একটি অভিযোগে উপ-পরিদর্শক নুরুজ্জামান লিখেছেন, ১৬ জন চিহ্নিত এবং ১০-১২ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে।

ম্যানেজার সাইফুল হাওলাদার তার কাছে টাকা নেই বললে তাকে মারধর করা হয় এবং দোকান ভাঙচুর করা হয় এবং তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

অভিযুক্তরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মেহেদী নামে একজনের পরিচালিত চক্রের সদস্য বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মেহেদী নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র গোষ্ঠী, যিনি কলিন্স ছদ্মনামে পরিচিত, প্রায়ই স্থানীয় ব্যবসা ও নির্মাণ সাইট থেকে মোটা অংকের টাকা ওঠায়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, রাজধানীর ভাটারা এলাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাস্তার ধারের বিক্রেতা, রিকশাচালক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কারা চাঁদাবাজি করবে তা নিয়ে পাঁচটি সশস্ত্র দল একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে।

পুলিশ জানায়, মেহেদী ও রবিন ভাটারাতেও গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে। বিদেশ থেকে স্থানীয় গ্যাং নিয়ন্ত্রণকারী তালিকাভুক্ত অন্য অপরাধীরা হলেন জিসান আহমেদ, ডালিম মাহবুব ও চঞ্চল।

এই চক্রের কিছু সদস্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতা বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

গত ১৮ মার্চ ভাটারার জোয়ারসাহারা এলাকায় টাকা দিতে অস্বীকার করায় রুবেল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে পায়ে গুলি করে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী।

ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ সাত সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের কাছ থেকে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচটি ম্যাগাজিন ও ৭৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের একজন রাশেদুজ্জামান খান রাজু রুবেলকে গুলি করার কথা স্বীকার করেছে।

গত ১১ ও ১২ মার্চ উত্তর বাড্ডায় অস্ত্র তৈরি ও বিক্রি করে এমন একটি চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। কর্মকর্তারা এসময় চারটি বন্দুক এবং আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাড্ডা থানা পুলিশ জিসান আহমেদের তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে এবং একটি পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।

তাদের মধ্যে স্থানীয়দের কাছে চাক্কু সোহেল নামে পরিচিত আমজাদ হোসেনের কাছে একটি আধুনিক ছোট পিস্তলের ছবি ছিল। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, জিসানের এক লোক মোহাম্মদ রহিমের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।

কিন্তু রহিমকে গ্রেপ্তার পারেনি পুলিশ। জিসানের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবুল বাশার বাদশা বাড্ডা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সেও পলাতক বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান জিসানের টাকা পয়সা সামলান। পুলিশ তাকে খুঁজছে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মেহেদীর চক্রে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ছয়জন বর্তমান ও সাবেক স্থানীয় নেতা রয়েছেন।

গত ১০ এপ্রিল গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় এটিএম বুথের এক নিরাপত্তাকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

১২ দিন পর আরিফুল ইসলাম নামে এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দারা। আরিফুল ওই বুথের ক্যাশ মেশিন ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি।

যোগাযোগ করা হলে বাড্ডা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অপরাধীদের ধরতে তিনি সব সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাড্ডায় যখন দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে, তখন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।'

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (গুলশান) রিফাত রহমান শামীম বলেন, জড়িতদের ধরতে পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'আমরা লোকজনকে অনুরোধ করছি তারা যেন হুমকি পেলে আমাদের জানান। অভিযোগকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh investment to GDP ratio 2025

Private investment sinks to five-year low

Private investment as a percentage of the gross domestic product has slumped to its lowest level in five years, stoking fears over waning business confidence and a slowdown in job creation.

12h ago