শরীয়তপুরে নবজাতকের মৃত্যু: অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের ‘মূল হোতা’ গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারকৃত সবুজ দেওয়ান। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের 'মূল হোতা' সবুজ দেওয়ানকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৮।

র‍্যাব-৮ সিপিসি-৩-এর কমান্ডার পুলিশ সুপার মীর মনির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব-৮ সিপিসি-৩-এর একটি দল আজ শনিবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে পালং মডেল থানা এলাকার বেড়া চিকুনদী গ্রামে অভিযান চালিয়ে সেলিম শেখের বাড়ি থেকে মামলার এক নম্বর আসামি সবুজকে গ্রেপ্তার করে।

গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকাগামী একটি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে দীর্ঘসময় আটকে রাখা হয় একটি নবজাতক শিশুকে। প্রায় ৩০ মিনিট আটকে রাখায় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে প্রচণ্ড গরমে ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে শিশুটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই মারা যায়।

সিন্ডিকেটকে না জানিয়ে অল্প টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার কারণে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

শিশুটির বাবা নূর হোসেন সরদার (৩২) দ্য ডেইলি স্টারকে মুঠোফোনে বলেন, 'জন্মের পরপরই আমার সন্তানের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। আমি হাসপাতালের সামনের অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে কথা বললে তারা আট হাজার টাকা দিতে বলে। পরে তারা সাত হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেন। আমি রাজি না হয়ে ফিরে আসি। পরে পাঁচ হাজার টাকায় ঢাকা থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করি।'

পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান নূর হোসেন বলেন, 'যখন আমার সন্তানকে নিয়ে ঢাকা রওনা দেবো, ঠিক তখনই ১০-১১ জন এসে অ্যাম্বুলেন্স আটকে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি নিয়ে যায়। তারা ড্রাইভারের গায়েও হাত তোলেন এবং বলতে থাকনে, কেন এত অল্প টাকায় তিনি রোগী তুললেন। প্রায় ৩০ মিনিট ওদের সঙ্গে ড্রাইভার ও আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। আমরা গরিব মানুষ, সেটা বলার পরও আমাদের অনুরোধ শুনলো না, অ্যাম্বুলেন্স যেতে দিলো না।'

'অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় গরমে ও শ্বাসকষ্টে আমার সন্তান অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরই মারা গেল। আগে যদি জানতাম আমার সন্তান মাত্র দুই হাজার টাকার কারণে মারা যাবে, তাহলে ওদের সাত হাজার টাকাই দিতাম। আমরা আর কত জিম্মি থাকব? আমি ওদের কঠোর শাস্তি চাই,' বলেন তিনি।

পালং মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, 'নবজাতককে বহনরত অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ার কারণে শিশুটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরের মারা গেছে। শিশুটির বাবা নূর হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় চারজন এজাহার নামীয় ও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন।'

মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা হচ্ছেন—শরীয়তপুর সদর উপজেলার সবুজ দেওয়ান (২৮), আবু তাহের দেওয়ান (৫৫), মো. বিল্লাল (৪৫) ও আব্দুল হাই।

ওসি বলেন, 'তাদের মধ্যে সবুজকে আটক করে র‌্যাব আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছিল। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।'

অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান বলেও জানান ওসি।

এ ঘটনার পর শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে দু-একটি ছাড়া আর কোনো অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায়নি। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

‘This fire wasn’t an accident’: Small business owner’s big dreams destroyed

Once a garment worker, now an entrepreneur, Beauty had an export order ready

1h ago