রিজার্ভ চুরি: ফিলিপাইনি প্রতিষ্ঠানের ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ আদালতের

অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। 

এর মাধ্যমে ২০১৬ সালে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

আজ রোববার বিকেলে সিআইডি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ জানান, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, রিজালের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও সিইও লরেঞ্জো টান, জুপিটার ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মায়া সান্তোস ডিগুইতো ও ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা রিজার্ভ চুরির অর্থ পাচারে সরাসরি জড়িত ছিলেন।

সিআইডি জানায়, তাদের তদন্তে জানা গেছে গেছে যে, এই অপরাধ শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং আরসিবিসি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বা 'কর্পোরেট সত্ত্বা' হিসেবেও মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত ছিল। 

এই তদন্ত প্রতিবেদন ও সিআইডির আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার অর্থ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত। 

ফিলিপাইন সরকারের সরবরাহ করা পারস্পরিক আইনি সহায়তা অনুরোধ থেকে পাওয়া সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ও তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানায়, জাতিসংঘের ইউএনটিওসি কনভেনশন ও এফএটিএফের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিপাইনের কাছে অর্থ ফেরত চাইবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটোরিয়াল উপদেষ্টা এহসানুল হক সমাজী সংবাদ সম্মেলনে জানান, আদালতের রায়ের অনুলিপি ইতোমধ্যে রিজাল ব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সিইও, ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ঢাকা ও ম্যানিলায় থাকা দুই দেশের রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যেহেতু সুসম্পর্ক আছে, তাই আদালতের এই আদেশ দ্রুততার সঙ্গে প্রশাসনিক পদ্ধতি মেনে পালন করা হবে। অতি দ্রুত এই পাচারকৃত ডলার ফেরত আসবে।'

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান জানান, এই অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রকে শনাক্ত করার কাজ চলছে এবং তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। 

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাৎ হয়। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে উদ্ধার করা হয়। 

সিআইডি জানায়, বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজাল ব্যাংক হয়ে ফিলিপাইনের বিভিন্ন ক্যাসিনোয় ঢুকে যায়। এর মধ্যে ৬৮ হাজার ডলার ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত এসেছে।

তবে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপাইন থেকে ১৮ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনের একটি আদালত একজন ক্যাসিনো অপারেটরের কাছ থেকে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জব্দ করা ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দেওয়ার আদেশ দেন।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে ৩৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি উদ্ধার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

বাকি ৪৮ মিলিয়ন ডলারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জাসিম উদ্দিন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে আরসিবিসি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের ৮১ মিলিয়ন ডলার মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত ছিল। আমরা তাদের কাছ থেকে মাত্র ৬৮ হাজার ডলার উদ্ধার করতে পেরেছি। বাকি টাকা অন্য উৎস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia contribution to Bangladesh democracy

A leader who strengthened our struggle for democracy

Khaleda Zia leaves behind an enduring legacy of service.

13h ago